ভৈরব উপজেলা
ভৈরব উপজেলা বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি উপজেলা। এ উপজেলার মূল শহরাঞ্চল এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র হল ভৈরব বাজার।
ভৈরব | |
---|---|
উপজেলা | |
![]() ![]() ভৈরব | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩′ উত্তর ৯০°৫৯′ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
জেলা | কিশোরগঞ্জ জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ১২১.৭৩ কিমি২ (৪৭.০০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৮১,২৫৭ |
• জনঘনত্ব | ২৩০০/কিমি২ (৬০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | % |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ২৩৫০ ![]() |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৪৮ ১১ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
অবস্থান
এটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক শহর। ভৈরব উপজেলার উত্তরে কুলিয়ারচর উপজেলা, পশ্চিমে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা এবং পুর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।
প্রশাসনিক এলাকা
ভৈরবে থানা হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯০৬ সালে। পরে এ থানাকে বর্তমানের ভৈরব উপজেলায় উন্নীত করা হয় ১৯৮৩ সালে। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়ন, ৩২টি মৌজা ও ৮৪টি গ্রাম রয়েছে।
- পৌরসভা:
ক্রমিক. | পৌরসভা | আওতাধীন শহর |
---|---|---|
১ | ভৈরব পৌরসভা | ভৈরব বাজার |
- ইউনিয়ন:
ক্রমিক. | ইউনিয়ন | জিও কোড |
---|---|---|
১ | আগানগর ইউনিয়ন | ২১ |
২ | কালিকাপ্রাসাদ ইউনিয়ন | ৪৭ |
৩ | গজারিয়া ইউনিয়ন | ৩৫ |
৪ | শিবপুর ইউনিয়ন | ৭১ |
৫ | শিমুলকান্দি ইউনিয়ন | ৮৩ |
৬ | শ্রীনগর ইউনিয়ন | - |
৭ | সাদেকপুর ইউনিয়ন | ৫৯ |
ইতিহাস
আঠারো শতকের রেনেলের মানচিত্রে ভৈরবের কোন অস্তিত্ব ছিল না। মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পলিবিধৌত বদ্বীপ এককালে উলুকানদি নামে পরিচিত ছিল। মুক্তাগাছার জমিদার ভৈরব রায় তার জমিদারী সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন জেগে উঠা এই এলাকায় মানব বসতি গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে জমিদারের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় ভৈরব বাজার। আবার এই রকম মতও আছে যে ভৈরব মানে ভয়ংকর সেই জন্য এই নামকরণ করা হয়েছে। হিন্দু জমিদার ভৈরবের বিভিন্ন অংশের নাম হিন্দু সংস্কৃতির ধারায় রেখে দেন। ভৈরবপুর,শম্ভূপুর, জগন্নাথপুর, চণ্ডিবের, শিবপুর, কালীপুর,কালিকাপ্রসাদ, ইত্যাদি পাড়া/মহল্লার নামে হিন্দু সংস্কারের প্রভাব সুস্পষ্ট। ভৈরবের আদি নাম ছিল উলুকান্দি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের সময় তৎকালীন ভৈরব বাজারে পাক বাহিনী ঘাটি গড়ে তুলে। যুদ্ধের শেষ সময়ের দিকে তারা ভৈরব রেলওয়ে সেতু বোমা মেরে ভেঙ্গে ফেলে। প্রথম মুসলমান ব্যবসায়ী হিসেবে যিনি ভৈরব রায়ের জমিদারীতে আসেন তিনি হলেন হাজী শেখ নূর মোহাম্মদ মিয়া। তিনি একজন তীক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে অচিরেই ভৈরবে তার আধিপত্য বিস্তার করেন। তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন এবং সেই ব্রিটিশ আমলে তিনি হাতিতে করে চলাফেরা করতেন। জমিদার ভৈরব রায় তার জমিদারী সুপরিচালনা করার জন্য ভৈরব বাজারে রাজকাচারী ভবন প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখন উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯৫৬ সালে ভৈরব পৌরসভা গঠিত হয়। এর আয়তন ১৫.৩১ বর্গ কি: মি: পৌরসভার নাগরিক ১,৩০৩৭৪, পুরুষ : ৫১.৯২% মহিলা ৪৮.০৮%। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কি: মি: এ ২৩১০ জন। শিক্ষার হার ৫৩.৭৫%। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার অধীনে ১৯০৬ সালে ১৫ জুন ভৈরব থানা ঘোষিত হয়। ১৯৮৩ সালে ১৫ এপ্রিল এ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
ব্রিটিশ আমল থেকে ভৈরব ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। ভৈরবকে তাই অনেক সময় ভৈরব বাজার বলেও অভিহিত করা হয়।
ভৈরব রায় বিটঘর এর জমিদার ছিলেন।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ভৈরবের মোট জনসংখ্যা ২,৪৬,৮২০ জন। পুরুষের সংখ্যা ১,২৭,৬২০ জন। আর নারীর সংখ্যা ১,১৯,২০০। পুরুষের অনুপাত মোট জনসংখ্যার ৫১% আর নারীর অনুপাত ৪৯%। সর্বমোট গৃহের সংখ্যা গ্রামে ২৮,৯৪২ টি এবং শহরে ১৭,৬৯২ টি। সর্বমোট জমির পরিমাণ ৩০,০৮০ একর। চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১৭,৬১৬ একর। সেচের আওতায় অন্তর্ভুক্ত জমির পরিমাণ ২০,৩০২ একর।
শিক্ষা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ভৈরব উপজেলায় আলিয়া মাদ্রাসা আছে ৩ টি, জুনিয়র হাই স্কুল ২ টি, কওমী (ফুরকানিয়া) মাদ্রাসা ২৬১ টি, কলেজ আছে ৬ টি, ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট ১ টি, দৃষ্টি-প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুল আছে ১ টি, প্রাইমারি স্কুল আছে ৯২ টি, কিন্ডার গার্ডেন আছে ২৬ টি এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে ১ টি।
অর্থনীতি
বন্দরনগরী ভৈরবের বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসায়ী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ভৈরবে মোট ২০ একর জায়গায় গমের চাষ হয়ে ৬ মেট্রিক টন গম উৎপন্ন হয়। ১৪,২১৯ একর জায়গায় ধান চাষ হলে ২১,৪৭৮ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়। ১,৬৬৬,০০০,০০০ টি ডিম উৎপন্ন হয়। ৩ মেট্রিক টন করে দুধ ও মিষ্টি উৎপন্ন হয়। এছাড়াও ভৈরবে ১,৪৮৪ একর জায়গায় পাট চাষ হয় যেখানে ১,০৮৫ মেট্রিক টন পাট উৎপন্ন হয়। ভাটি এলাকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কিছু অংশ মৎস্য আহরনের সাথে জড়িত। এখানকার প্রধান ফসল ধান। এছাড়া এখানে প্রচুর পরিমানে শীতকালীন সবজি উৎপন্ন্য হয়। এখানকার প্রধান অর্থকরি ফসল পাট।
দেশের কয়েকটি পাইকারি কয়লা বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ভৈরব একটি। ভারতের মেঘালয় থেকে সুনামগঞ্জের তাহেরপুরের টেকেরঘাট হয়ে নদীপথে ভৈরবে কয়লা আমদানি করা হয়। ইটভাটা ও রড তৈরির কারখানায় ভৈরব থেকে প্রতি মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার টন কয়লা যায়।
জুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার পরই ভৈরবের অবস্থান। বর্তমানে ভৈরব পৌর এলাকা ও উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০টি গ্রামে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে সাত হাজারেরও বেশি জুতা তৈরির কারখানা। দুই থেকে আড়াই লাখ শ্রমিক ভৈরবের এ জুতা শিল্পে জড়িত। জুতার ব্যাগ তৈরির কারখানা রয়েছে দুই-তিন হাজার। সেখানেও কাজ করছে ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক।
ভৈরবের বিশাল এলাকাজুড়ে জলাভূমি। পেশাজীবী নৌকার মাঝি ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে এক শ্রেণীর লোক নৌকা কিনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে লোকজন পাড়াপাড় করে নৌকার মাঝি হিসেবে বাড়তি উপার্জন করে থাকে। বর্তমানে এ এলাকায় কোষা নৌকার কদর বেশি। কড়ই, শিমুল ও চাম্বল কাঠের নৌকাই বেশি চলে এখানে।
বন্দরনগরী ভৈরবের রাতের মাছের আড়ত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ মাছের আড়ত হিসেবে পরিচিত। এখানে ২ শতাধিক মাছের আড়ত রয়েছে। এ আড়তকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক বরফ কল, হোটেল, বিভিন্ন মনোহারি প্রশাধনীর দোকান।
দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
- সিরাজীয়া দরবার শরীফ, কালিকা প্রসাদ;
- মেঘনা ব্রিজ।
- মেঘনা নদীর ঘাট
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- রেবতী মোহন বর্মণ (১৮৮৯-১৯৫৬)
- জিল্লুর রহমান (১৯২৯-২০১৩)
- আইভি রহমান (১৯৪৬-২০০৪)
- নাজমুল হাসান পাপন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর সভাপতি
- কমান্ডার (আঃ) আবদুর রউফ (১৯৩৩-২০১৫)
- হাজী আস্কর আলী মিঞা (১৯০৩-১৯৯৬)
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন, ২০১৪)। "এক নজরে ভৈরব উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১৯ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই, ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)