গজারিয়া উপজেলা

গজারিয়া উপজেলা বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি একটি সুপ্রাচীন জনপদ।[2]

গজারিয়া
উপজেলা
গজারিয়া
বাংলাদেশে গজারিয়া উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°৩২′৪৭″ উত্তর ৯০°৩৬′৩১″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
জেলামুন্সিগঞ্জ জেলা
আয়তন
  মোট১৩১ কিমি (৫১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০০১)[1]
  মোট১,৩৮,১০৮
  জনঘনত্ব১১০০/কিমি (২৭০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৫৩.৭৭%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৫৯ ২৪
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান ও আয়তন

গজারিয়া উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা, দক্ষিণে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা ও পুর্বে মেঘনা উপজেলা এবং দক্ষিণ পশ্চিমে চাঁদপুরের মতলব উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

১৯৫৪ সালে গজারিয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলায় রুপান্তরিত হয়। এই উপজেলায় মোট ৮টি ইউনিয়ন, ১১৪টি মৌজা এবং ১২০টি গ্রাম রয়েছে।

ইউনিয়নগুলো হলোঃ টেংগারচর, বালুয়াকান্দি, ভবেরচর, বাউশিয়া, গজারিয়া, হোসেন্দী, ইমামপুর, গুয়াগাছিয়া

ইতিহাস

প্রাচীন ঐতিহাসিকদের বর্ননায় গজারিয়া ভুখন্ডের কোন অস্তিস্তই ছিল না।তাদের বর্ননা মতে মেঘনার দুই পারে বিক্রমপুর ও সোনারগাও নামক দুইটি নগরী ছিল। তখন এই অঞ্চলটি নদী নয় বরং প্রমত্তা সাগর ছিল।তাদের মতে সতেরো শতকের দিকে এখানে এই চর জেগে উঠেছিল । জনশ্রুতি আছে যে, এখানে প্রচুর গজারী গাছ জন্মাতো এবং তাতে রিয়া নামক পাখির কলেবরে মুখরিত হত বলে এর নাম দেয়া হয়েছে গজারিয়া। গজারিয়া এলাকা মেঘনার শাখা প্রশাখা বেষ্টিত একটি দ্বীপের মত।সড়কের মাধ্যমে শহর-গঞ্জের সাথে তখন কোন যোগাযোগ ছিল না।বিশেষ জরুরী কারনে লোকজন ৮/১০ মাইল হেঁটে গজারিয়ার প্রান্ত সীমায় গিয়ে লঞ্ছে করে শহরে-গঞ্জে যেতে হত।তখন লেখা-পড়া ও ব্যবসা বাণিজ্যে পিছিয়ে ছিল। এমন কি এলাকার নাম বাইরের কম লোকই জানত। ১৯৫৪ সালে এই এলাকা হতে সর্ব প্রথম মনির হোসেন জাহাঙ্গীর এম পি নির্বাচিত হওয়ায় এলাকার উন্নয়নের জন্য তাঁর প্রচেষ্টায় গজারিয়াকে একটি পূর্নাঙ্গ থানা ও উক্ত এলাকার মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আনা হয়।ফলে একটি থানায় যা যা প্রয়োজন সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে এবং এর সুফল গজারিয়াবাসী ভোগ করছে।যোগাযোগের অকল্পনীয় উন্নতি হয়েছে এবং এলাকাবাসী গ্রামে থেকেই শহরের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় ১৯৭১ সালের ৯ মে পাকবাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে প্রায় ৬০ জন নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যা করে। ১৪ মে মুক্তিযোদ্ধারা বোমা বিস্ফোরণের সাহায্যে ভাটেরচর ব্রীজ ধ্বংস করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ২২ মে পাকবাহিনী বাউশিয়া গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। ৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাটেরচর বেইলি ব্রিজ ধ্বংস করার সময় পাকবাহিনীর আক্রমণে ৯জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৮ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ভবেরচরে ১০জন কিশোরকে হত্যা করে এবং ৯ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৪ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পাকবাহিনীর ২টি গানবোট ডুবে যায় এবং এই দিনে গজারিয়া উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১(ভবেরচর)

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে এখানকার লোকসংখ্যা ১,৩৮,১০৮ জন; যার মধ্যে পুরুষ ৬৯,৬৯৮ জন এবং মহিলা ৬৮,৪১০ জন। এখানে মোট মুসলমান ১,৩৩,৪৫৩ জন, হিন্দু ৪,৬৩১ জন এবং অন্যান্য ৩০ জন।

শিক্ষা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ

  • বিশ্ববিদ্যালয় - ১টি,
  • কলেজ - ২টি,
  • ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ - ১টি,
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ১২টি,
  • প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৬৭টি,
  • ভকেশনাল ইন্সটিটিউট - ১টি,
  • মাদ্রাসা - ৫টি,
  • কিন্ডারগার্ডেন স্কুল - ৬৩টি।

অর্থনীতি

কৃতী ব্যক্তিত্ব

  1. আব্দুল হাই, রাজনীতিবিদ

মনির হোসেন জাহাঙ্গীর : তিনি ২৭ বছর বাউশিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন, ১৯৫৪ সালে এম পি নির্বাচিত হন।গজারিয়াকে পূর্নাঙ্গ থানা হিসাবে প্রতিষ্ঠা, ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক গজারিয়ার উপর দিয়ে আনা ও বাউশিয়া এম এ আজহার হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা। গরীব হোসেন চৌধুরী:অত্র এলাকার জমিদার ছিলেন।তিনি ভবেরচর ওয়াজির আলী হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। ৮)কফিল উদ্দিন আহমেদ: তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পদার্থ বিদ্যায় কৃতিত্বের সাথে মাষ্টার্স করে তৎকালীন আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ( বর্তমান বুয়েট বা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারি এন্ড টেকনোলজি ) অধ্যাপনা করেন। ৯)রেজা জাহাঙ্গীরি:- তিনি ভবেরচর ওয়াজির আলী হাই স্কুল প্রধান শিক্ষক ছিলেন ।সিএসএস ( সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস) পরীক্ষা দিয়ে পোষ্টাল সার্ভিসে যোগদান করে পিএমজিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করে অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। ১০) জনাব মোঃ ইফতেকার হোসেন: তিনি ভবেরচর ওয়াজির আলী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং গজারিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজ থেকে BBA পাশ করে দীর্ঘদিন সম্মানের সাথে সরকারী একজন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ২০১৮ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ (হসপিটালে) সহকারী পরিচালক থাকা অবস্থায় অবসর প্রাপ্ত হন।

দর্শনীয় এলাকা

  • রাধাকৃষ্ণ মন্দির - ভবেরচর,
  • মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট- বালুয়াকান্দি,
  • ময়ূর রিসোর্ট - ষোলআনি,
  • পিং পং কিডস পার্ক - ভবেরচর।
  • শ্রীচৈতন্য মন্দির -মধ্য বাউশিয়া

বিবিধ

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে গজারিয়া"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৫
  2. "গজারিয়ার পটভূমি"munshiganj.gov.bd। ১৭ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০১৩

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.