হাবিবুর রহমান (বীর বিক্রম)

হাবিবুর রহমান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৮[1]) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[2]

হাবিবুর রহমান
মৃত্যু২৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৮
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

হাবিবুর রহমানের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের সাধুর গলগণ্ডা গ্রামে। তার বাবার নাম মো. কলিমুদ্দিন এবং মায়ের নাম সৈয়দুন্নেছা। তার স্ত্রীর নাম ফরিদা ইয়াসমীন। তার ছয় মেয়ে ও দুই ছেলে। [3]

কর্মজীবন

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন হাবিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিরোধ যুদ্ধে। পরে কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন হাবিবুর রহমান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট রাতে সাতটি ছোট-বড় জাহাজ হঠাৎ টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে ধলেশ্বরী নদীর সিরাজকান্দি ঘাটে নোঙর করে। এ খবর দ্রুত পৌঁছাল স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের যে দলটি ছিল, তার দলনেতা ছিলেন হাবিবুর রহমান। তারা সবাই কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্য ছিলেন । হাবিবুর রহমান জানতে পারেন নোঙর করা জাহাজে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। কাদের সিদ্দিকী হাবিবুর রহমানকে জানালেন, ওই জাহাজে আক্রমণ করে অস্ত্রশস্ত্র দখল করতে পারলে ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে। এ জন্য তিনি রেজাউল করীমের নেতৃত্বে আরও একটি দলকে তার কাছে পাঠালেন। উত্তরে মাটিকাটায় তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। ১১ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে জাহাজগুলো তাঁদের অবস্থানের কাছাকাছি চলে আসে। হাবিব এ সময় কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। ভাবছিলেন, নিজেদের সামান্য শক্তি সম্বল করে ওই জাহাজগুলোতে আক্রমণ করা ঠিক হবে কি না। অন্যদিকে কাদের সিদ্দিকীর নির্দেশ। কিন্তু কীভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, এর কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। [4] তারা নদীর যে পাড়ে অবস্থান নিয়েছিলেন, তার পাশ দিয়েই ওই জাহাজগুলো যাচ্ছিল। হাবিব সহযোদ্ধাদের বলে দিলেন তার সংকেতের আগে কেউ যেন গুলি না করেন। তাই সবাই অ্যাম্বুশস্থলে চুপ করে ছিলেন। এর মধ্যে দুটি জাহাজ চলে যায়। এমন সময় সবচেয়ে বড় দুটি জাহাজ তাঁদের সামনে আসে। জাহাজ দুটিতে পাকিস্তানি সেনারা গল্পগুজবে মশগুল। হাবিবের এলএমজি গর্জে ওঠা মাত্র সহযোদ্ধারা মর্টার, এলএমজি ও রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। ২ ইঞ্চি মর্টারের গোলা আঘাত করে সারেঙের কেবিন ও পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে। নিমেষে হতাহত হয় বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা। বেঁচে যাওয়া বাকি পাকিস্তানি সেনারা প্রতিরোধের চেষ্টা না করে স্পিডবোটে করে পালিয়ে যায়। সামনের দুটি ও পেছনে থাকা বাকি জাহাজও সাহায্যে এগিয়ে না এসে পালাতে থাকে। এরপর হাবিবের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নামিয়ে নিতে থাকেন। ছয় ঘণ্টায় তারা প্রায় ৫০০ অস্ত্র ও গোলাবারুদের বাক্স নামাতে সক্ষম হন। এর পরও বিপুল অস্ত্র জাহাজে থেকে যায়। সেগুলো তারা নেননি। কারণ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের সম্ভাবনা ছিল। তাই জাহাজে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তারা সরে পড়েন। আগুনে গোলাবারুদ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে দুই জাহাজই ধ্বংস হয়। এর পর থেকে হাবিবুর রহমানের নাম হয়ে যায় জাহাজমারা হাবিব। [5]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "বীরমুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান বীর বিক্রমের ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-১৯
  2. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৫-০৮-২০১৫
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৬০৪। আইএসবিএন 9789843351449।
  4. "হাবিবুর রহমান বীর বিক্রম | মৃত্যুবার্ষিকী | Jugantor"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-১৯
  5. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৩৫। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.