আবদুর রব চৌধুরী

শহীদ আবদুর রব চৌধুরী (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

আবদুর রব চৌধুরী
মৃত্যু৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ আবদুর রব চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নোয়াখোলা গ্রামে। তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম আকরাম উদ্দিন চৌধুরী এবং মা আকরামজান বানু। তার স্ত্রীর নাম হোসনে আরা বেগম। তাঁদের তিন মেয়ে ও তিন ছেলে।

কর্মজীবন

আবদুর রব চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইএমই কোরে চাকরি করতেন। তার ইউনিটের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। তার পদবি ছিল নায়েক। মার্চ মাসে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে গিয়ে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দেন। পরে ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২১ নভেম্বর ফেনী জেলার বিলোনিয়ার বেশির ভাগ এলাকা মুক্ত হয়। আবদুর রব চৌধুরীসহ মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হন ফেনী অভিমুখে। তারা প্রথমে বিলোনিয়ার মুখ বরাবর বান্দুয়া-পাঠাননগরে অবস্থান নিয়ে ওই এলাকা ব্লক করেন। তাঁদের সঙ্গে মিত্রবাহিনীর জাঠ ও মারাঠা রেজিমেন্টের সেনারা ছিলেন। পাঠাননগর-বান্দুয়া ছিল সীমান্ত এলাকায় মিত্রবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল সীমান্তে ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী সামরিক যানবাহনের সরব চলাচল ও সেনা সমাবেশের মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বিস্মিত করা। এতে করে তারা হকচকিত হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে মিত্রবাহিনীর জাঠ রেজিমেন্টের সেনারা পশ্চিম সীমান্ত ও মারাঠা রেজিমেন্টের সেনারা পূর্ব সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর অবস্থান বুঝে ফেলে। তারা দ্রুতগতিতে ফেনীর উত্তরে বিলোনিয়ার মুখ বরাবর দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইন তৈরি করে। এ ছাড়া ছাগলনাইয়া-ফেনীর মাঝামাঝি ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত আরেক প্রতিরক্ষা। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান। দুই পক্ষে গুলিবিনিময় এবং থেমে থেমে কয়েক দিন যুদ্ধ চলে। কখনো পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধা বা মিত্র বাহিনীর অবস্থানে ঝটিকা আক্রমণ চালায় আবার কখনো মুক্তিযোদ্ধা বা মিত্র বাহিনীর সেনারা। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ওই এলাকায় তুমুল পাল্টাপাল্টি যুদ্ধ হয়। আবদুর রব চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি উপদলের দলনেতা হিসেবে ৫ ডিসেম্বর সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক অবস্থানে আক্রমণ চালান। তখন সেখানে দুই পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ চলাবস্থায় হঠাৎ আবদুর রব চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছোড়া একঝাঁক (ব্রাশফায়ার) গুলির পাঁচটি গুলি লাগে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে। আহত হয়েও আবদুর রব চৌধুরী দমে যাননি। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকেই নেতৃত্ব দিতে থাকেন। সহযোদ্ধারা অণুরোধ করা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাননি। কিন্তু একসময় অধিক রক্তক্ষরণে তিনি নেতিয়ে পড়েন। সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু পথেই নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। আবদুর রব চৌধুরীকে সমাহিত করা হয় তার গ্রামের বাড়িতে। তার অন্তিম ইচ্ছা অণুযায়ী কয়েকজন সহযোদ্ধা মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর তারা যথাযোগ্য মর্যাদায় মরদেহ সমাহিত করেন। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৯-১১-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৭৪। আইএসবিএন 9789849025375।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.