আবদুল বারিক

আবদুল বারিক (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

আবদুল বারিক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবদুল বারিকের জন্ম কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগড়া গ্রামে। তার বাবার নাম মো. শাহনেওয়াজ এবং মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মনোয়ারা বেগম। তার পাঁচ মেয়ে ও তিন ছেলে। [2]

কর্মজীবন

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন আবদুল বারিক। এর অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। তিনি ডেলটা কোম্পানিতে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তাঁদের কোম্পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছিল। ২৭ মার্চ তারা মেজর শাফায়েত জামিলের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এরপর তাঁদের কোম্পানি আখাউড়ায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আখাউড়া দখল করলে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

জুন মাসের মাঝামাঝি ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফের নির্দেশে মুক্তিবাহিনীর একটি দল কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় আক্রমণ করে। এ আক্রমণে আবদুল বারিকও অংশ নেন। তারা ছিলেন ১৬ জন। কুমিল্লা জেলা সদরের উত্তর-পশ্চিমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বুড়িচং থানা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই থানায় বিপুলসংখ্যক পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়া নিয়োগ করে। এই বুড়িচং দিয়েই মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের চলাচল করতে হতো। পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়াদের কারণে গেরিলাদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খালেদ মোশাররফ তাঁদের বুড়িচং থানা আক্রমণে পাঠান। রাত একটার দিকে তারা একযোগে থানায় আক্রমণ চালান। পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়ারা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে পরাস্ত হয়। যুদ্ধে আটজন পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও মিলিশিয়া নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনীর একজন আহত ও একজন শহীদ হন। এই যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট সাহস ও বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করেন। আবদুল বারিক পরে আরও কয়েকটি যুদ্ধে অংশ নেন। প্রতিরোধযুদ্ধকালে আবদুল বারিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে একদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে। তারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করেন। তাঁদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পশ্চাদপসরণ করে। কয়েক দিন পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স তাঁদের অবস্থানে আবার আক্রমণ করে। এবার পাকিস্তানিরা বিভিন্ন দিক দিয়ে আক্রমণ করে। প্রতিরোধযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানিদের মোকাবিলা করলেও কিছু এলাকা তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যায়। এ অবস্থায় তাঁদের অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি অবস্থানে পাল্টা আক্রমণের। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একদিন রাত ১২টার দিকে তিন কোম্পানি প্রতিরোধযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। সেদিন টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। আবদুল বারিকের কাছে ছিল মর্টারগান। তিনি পাকিস্তানি ঘাঁটিতে সেই মর্টারগান দিয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। এতে পাকিস্তানিদের একটি মেশিনগান পোস্ট ধ্বংস ও গাড়িতে আগুন ধরে যায়। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর ২০-২৫ জন হতাহত হয়। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২০-০৭-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.