মইনুল হোসেন চৌধুরী
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১০ অক্টোবর ২০১০ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৩ সিলেট |
মৃত্যু | ১০ অক্টোবর |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মইনুল হোসেন চৌধুরীর জন্ম সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার শিওরখাল গ্রামে। তার বাবার নাম নূরুল হোসেন চৌধুরী এবং মায়ের নাম রিজিয়া খাতুন চৌধুরী। তার স্ত্রীর নাম রুবী চৌধুরী। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
কর্মজীবন
মইনুল হোসেন চৌধুরী চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এই রেজিমেন্টের তখন অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। ১৯ মার্চ জয়দেবপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ইতিহাসে তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি বাঙালীদের ওপর গুলি চালাতে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশ সরাসরি অমান্য করেছেন। ২৫ মার্চের পর এই জয়দেবপুর থেকেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাঙালী সৈন্যদের নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। কামালপুরসহ আরও কয়েক স্থানে তিনি যুদ্ধ করেন। মইনুল হোসেন চৌধুরী মেজর জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। সেনাবাহিনীতে চাকরিরত থাকাকালে প্রেষণে বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর-৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতে একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন মইনুল হোসেন চৌধুরী ও তার সহযোদ্ধারা। কয়েক মাস আগে মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের যুদ্ধে নিজ চোখের সামনে শহীদ হতে দেখেছেন প্রায় ৩৫ জন সহযোদ্ধাকে। আগেই ঠিক করা ছিল, মিত্রবাহিনীর গোলন্দাজ দল ঠিক রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে গোলাবর্ষণ শুরু করবে। চারদিকের নৈঃশব্দ্য ভেঙে ঠিক সময়েই গোলাবর্ষণ শুরু হলো। গোলাবর্ষণের প্রচণ্ডতা এমন যে, অনেক দূরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের পায়ের নিচের মাটি কাঁপতে থাকল। মইনুল হোসেন চৌধুরী তার সহযোদ্ধাদের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তার নির্দেশ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন। শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে হটিয়ে তিতাস নদীর পার, মুকুন্দপুর, সিংগাইর বিল আর আজমপুর মুক্ত করাই তাঁদের লক্ষ্য। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি (আনুমানিক ৪০০ মিটার দূরে) হওয়া মাত্র পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে বন্ধ হয়ে গেল তাঁদের দূরপাল্লার কামানের গোলাবর্ষণ। এরপর শুরু হলো দুই পক্ষের মেশিনগান ও রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি। কুয়াশায় ঢাকা সেই রাতে যুদ্ধ পরিচালনা ছিল প্রকৃতপক্ষেই কঠিন। ভোর না হতেই শুরু হয় পাকিস্তানি সেনাদের তুমুল পাল্টা আক্রমণ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধরত তাদের প্রসিদ্ধ পাঠান রেজিমেন্ট-১২ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। দুর্ধর্ষ প্রকৃতির তারা। এর সঙ্গে তাদের ভারী কামানের গোলাবর্ষণ। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর দুটি স্যাবর জেটও মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে গোলা ফেলতে থাকল। সব মিলে প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ। মইনুল হোসেন চৌধুরী এতে বিচলিত হলেন না। সাহসিকতার সঙ্গে তিনি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে থাকলেন। সারা দিন যুদ্ধ চলল। একের পর এক পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও পাকিস্তানিরা সফল হতে পারল না। মইনুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে থাকলেন। পরদিন পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে গেল।[2][3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ৩০-০৪-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১১১। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৮৭। আইএসবিএন 978-984-90253-7-5।