গোলাম মোস্তফা খান
গোলাম মোস্তফা খান (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]
গোলাম মোস্তফা খান | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
গোলাম মোস্তফা খানের পৈতৃক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার কুটি গ্রামে। তার বাবার নাম গোলাম পাঞ্জত আলী এবং মায়ের নাম রাহেলা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জ্যোস্না বেগম। তাঁদের পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে।
কর্মজীবন
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে চাকুরি করতেন গোলাম মোস্তফা খান। তিনি কর্মরত ছিলেন পাকিস্তানে। ১৯৭০ সালের শেষ থেকে ছুটিতে ছিলেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি ছুটি শেষ হওয়ার পর পাকিস্তানে যাওয়ার অপেক্ষায় ঢাকা সেনানিবাসের ট্রানজিট ক্যাম্পে ছিলেন। ২৫ মার্চের পর আটক করা হয় তাকে। কিছুদিন পর পাকিস্তান সেনা কর্তৃপক্ষ তাকেসহ আটক আরও অনেক বাঙালি সেনাদের ট্রেনযোগে রংপুর সেনানিবাসে পাঠায়। পথিমধ্যে এক স্টেশনে ট্রেন বিরতি দিলে তিনিসহ কয়েকজন প্রহরারত পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান। পরে জামালপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর ‘জেড’ ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন।[2]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ৩১ জুলাই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কামালপুর এলাকায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। সেখানে চারপাশে ছিল বাংকার। কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ছিল ঘাঁটি। বিছানো ছিল অসংখ্য মাইন ও বুবিট্র্যাপ। এ ছাড়া কয়েকটি গাছের ওপরে ছিল পর্যবেক্ষণ পোস্ট। বৃষ্টি আর ঘোর অন্ধকারের মধ্যে গোলাম মোস্তফা খানসহ মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের প্রস্তুতি নেন। তারা ছিলেন দুটি দল (কোম্পানি) এবং কয়েকটি উপদলে (প্লাটুন ও সেকশন) বিভক্ত। তাঁদের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সীমান্তঘাঁটি আক্রমণ করে সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করা। গোলাম মোস্তফারা নিঃশব্দে এফইউপিতে (ফর্মি আপ প্লেস) সমবেত হন। এর একটু দূরেই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি। তাঁদের সমন্বিত আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষায় ফাটল ধরে। এর পর পাকিস্তানিরা দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের শেলপ্রুফ বাংকারে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনের বাইরে একটি গাছের ওপর ছিল তাদের সুরক্ষিত গোপন পর্যবেক্ষণ পোস্ট। সেখান থেকে দু-তিন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান সম্পর্কে বাংকারে খবর পাঠায়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানিরা গোলাবর্ষণ শুরু করে। এটা গোলাম মোস্তফা খানসহ মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে বুঝতে না পারলেও তাঁদের এক সহযোদ্ধা সেটি দেখতে পেয়ে তাকে জানান। গোলাম মোস্তফা খানের কাছে ছিল এলএমজি। তিনি এলএমজি নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পর্যবেক্ষণ পোস্টের কাছে যান এবং আক্রমণ করেন। তার এলএমজির ব্রাশফায়ারে পর্যবেক্ষণ পোস্ট ধ্বংস ও পাকিস্তানি সেনারা নিহত হয়। এর ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা কমে যায়। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা সাহসিকতার সঙ্গে পার হয়ে মূল প্রতিরক্ষায় ঢুকে যান। গোলাম মোস্তফা খানের অনেক সহযোদ্ধা মাইন ও গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। [3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১০-১২-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।