মোহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর বিক্রম)

মোহাম্মদ ইব্রাহিম (জন্ম: ১ জুন, ১৯৩৫ - মৃত্যু: ২৫ মার্চ, ২০০৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

মোহাম্মদ ইব্রাহিম
জন্ম১ জুন, ১৯৩৫
মৃত্যু২৫ মার্চ, ২০০৯
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মোহাম্মদ ইব্রাহিমের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আইয়ুব আলী এবং মায়ের নাম হালিমা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম সাফিয়া বেগম। তার ছয় মেয়ে, এক ছেলে। [2]

কর্মজীবন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধকালে যশোরের বেনাপোলে যুদ্ধে তিনি সামান্য আহত হন। পরে ভারতে পুনগর্ঠিত হয়ে যুদ্ধ করেন জামালপুর জেলার কামালপুর, মৌলভীবাজার জেলার ধলই বিওপি, সিলেট এমসি কলেজসহ আরও কয়েক স্থানে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার জকিগঞ্জ থানা সদর থেকে উত্তর দিকে ছিলো আটগ্রামের অবস্থান। আটগ্রামের পাশেই ছিলো চারগ্রাম। আটগ্রাম ও চারগ্রাম—দুই স্থানেই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একদল সেনা। নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্রাভো ও চার্লি কোম্পানি আটগ্রাম ও চারগ্রামে আক্রমণ করে। চার্লি কোম্পানিতে একটি প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ২২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ছোট ছোট দল যার একটির নেতৃত্বে মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি তার দল নিয়ে দ্রুত আক্রমণ শুরু করলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে। অন্যান্য দলও আক্রমণ শুরু করল। ঝটিকা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ভ। মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণে নিহত ও আহত হলো বেশ কজন পাকিস্তানি সেনা। কিছুক্ষণ প্রতিরোধ চালানোর পর বাকি পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেল। যাওয়ার সময় ফেলে গেল বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিলেটের চারগ্রাম ও আটগ্রাম এলাকার শত্রুঘাঁটির ওপর আক্রমণের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সব কমান্ডিং অফিসার এবং কোম্পানি কমান্ডারগণ এলাকাটি ভালোভাবে রেকি করেন। ২২ নভেম্বর সকালে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীর বিক্রম ‘বি’ কোম্পানি নিয়ে আর্টিলারির সাহায্যে চারগ্রাম ঘাঁটি আক্রমণ করেন। সারা দিন প্রচণ্ড যুদ্ধের পর উক্ত ঘাঁটি দখল করে নেন মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুপক্ষের প্রায় ৩০ জন হতাহত হয় এবং কয়েকজনকে জীবিত অবস্থায় বন্দী করা হয়। এ ঘাঁটি থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাগুলি, খাদ্যদ্রব্য এবং যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দখল করা হয়। এ আক্রমণে সাফল্য লাভ করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল অনেক গুণে বেড়ে যায়। এ যুদ্ধে ‘বি’ কোম্পানি অত্যন্ত সাহস ও রণকৌশল প্রদর্শন করে। একই দিনে ‘সি’ কোম্পানি ক্যাপ্টেন নূরের নেতৃত্বে আটগ্রাম ব্রিজ এলাকা আক্রমণ করে এবং দখল করে নেয়। এই স্থানেও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাগুলি দখল করে মুক্তিযোদ্ধারা। এ যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য নূর চৌধুরী (বীর বিক্রম), আবুল হাশেম, (বীর বিক্রম), মোহাম্মদ ইব্রাহিম খেতাব পান। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৮-১২-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১২২। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.