মোহাম্মদ আবদুল মান্নান

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান অথবা এম এ মান্নান (জন্ম: ১৯৪০ - মৃত্যু: ২০০৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান
জন্ম১৯৪০
মৃত্যু২০০৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

এম এ মান্নানের পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চান্দড়া গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল লতিফ এবং মায়ের নাম আছিরননেসা। তার দুই স্ত্রীর নাম নূরুন নাহার বেগম ও জাহানারা বেগম। তাদের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে।

কর্মজীবন

এম এ মান্নান ১৯৭১ সালে ক্ষুদ্র ব্যবসা করতেন। রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ফরিদপুর জেলায় সর্বপ্রথম তার নেতৃত্বে আলফাডাঙ্গার গোপালপুরে সুপরিকল্পিত ও সুশৃঙ্খল মুক্তি সেনার একটি দল গড়ে ওঠে। বেশির ভাগ সময় তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেশের ভেতরে ছিলেন। আলফাডাঙ্গা, কাশিয়ানীসহ বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে গেরিলাযুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি কয়েক মেয়াদে গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৫ ডিসেম্বর ভোরে ঠাস ঠাস, দ্রিম দ্রিম শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা ভাটিয়াপাড়া এলাকা। মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে। গোপালগঞ্জ জেলার উত্তরে কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে মধুমতী নদীর তীরে ভাটিয়াপাড়া। সেখানে আছে ওয়্যারলেস স্টেশন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করে। ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবেও ঘাঁটিটি ব্যবহূত হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রেন-লঞ্চে পাকিস্তানি সেনারা ভাটিয়াপাড়ায় আসত এবং দু-এক দিন অবস্থান করত। এ ছাড়া ওয়্যারলেস স্টেশনের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ রক্ষা করত। পাকিস্তানিদের এ ঘাঁটিটি ছিল বেশ সুরক্ষিত। চারদিকে মাটির গভীরে ছিল বাংকার। এর প্রথম স্তরে রেলের স্লিপারের ওপরে ঢেউটিনের ছাদ। ওপরে বালুর বস্তা। এরপর আবার পুরু টিন ও মাটির স্তর। এভাবে মাটির নিচে আনুমানিক ৫৭টি বাংকার তৈরি করে পাকিস্তানিরা। চারপাশে ছিল মাইন পোঁতা। মজুদ ছিল বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও রসদ। আগেও মুক্তিযোদ্ধারা দু-তিনবার ওই ঘাঁটিটি আক্রমণ করেন। দুই ইঞ্চি মর্টার দিয়ে তারা অনেক রকেট ছোড়েন। কিন্তু ক্যাম্পের কোনো ক্ষতি হয়নি। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর পাকিস্তানিদের এ ক্যাম্পটি দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। এম এ মান্নান সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর এ ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। তারা প্রথমে ওই ক্যাম্প অবরোধ করেন। এর মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ভাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানিরাও পাল্টা আক্রমণ করে। তারা ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হন। এম এ মান্নানসহ মুক্তিযোদ্ধারা অবরোধ ছেড়ে যাননি। কয়েক দিন ধরে এখানে যুদ্ধ হয়। পরে বয়রা সাবসেক্টর কমান্ডার নাজমুল হুদার (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা সেখানে উপস্থিত হন। অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর একজন মেজরের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৮-০৯-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১২০। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.