খন্দকার মতিউর রহমান
খন্দকার মতিউর রহমান (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]
খন্দকার মতিউর রহমান | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
খন্দকার মতিউর রহমানের জন্ম নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ গ্রামে। তার বাবার নাম খন্দকার সদরউদ্দীন আহমেদ এবং মায়ের নাম জামিলা খাতুন। তার দুই স্ত্রী। তারা হলেন সাহেরা খাতুন ও নাজমা খাতুন। তাদের চার ছেলে ও তিন মেয়ে।[2]
কর্মজীবন
খন্দকার মতিউর রহমান চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন নওগাঁ ইপিআর উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। আড়িয়াবাজার যুদ্ধের পর তিনি যুদ্ধ করেন পাবনা জেলার কাশিনাথপুরে, পরে ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রমবাড়ী সাব-সেক্টরে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল বগুড়ায় চারদিকে রাষ্ট্র হয়ে গেল, শহরের উপকণ্ঠ থেকে রংপুর থেকে আসা পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেছে। সারা শহরে আনন্দের ঢেউ। এরপর প্রতিরোধযুদ্ধরত ইপিআর সদস্যরা সমবেত হলেন শহরের সার্কিট হাউসে। তাদের একটি অংশের নেতৃত্বে খন্দকার মতিউর রহমান। ইপিআর মোট ৩৯ জন। তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন শহর থেকে কয়েক মাইল দূরে থাকা সেনাক্যাম্প আক্রমণের। রংপুর সেনানিবাস থেকে এসে একদল পাকিস্তানি সেনা ২৬ মার্চ সকালে বগুড়ায় আক্রমণ করে। স্থানীয় ছাত্র-জনতা তাদের প্রতিরোধ করে। এই প্রতিরোধযুদ্ধ চলাকালে পার্শ্ববর্তী নওগাঁও থেকে খন্দকার মতিউর রহমানসহ একদল ইপিআর সদস্য ২৮ মার্চ রাতে বগুড়ায় এসে স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রংপুর থেকে আসা পাকিস্তানি সেনারা ৩১ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেখানকার বাঙালি সেনাসদস্যদের নিরস্ত্র করে বন্দী করা হয়। দু-তিনজন এর প্রতিবাদ করায় তাদের পাকিস্তানিরা সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে। আড়িয়াবাজার ক্যাম্পে অবরুদ্ধ বাঙালি সৈনিকদের কথা জানতে পেয়ে ১ এপ্রিলই খন্দকার মতিউর রহমান সেখানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন স্থানীয় প্রতিরোধযোদ্ধা দলের পুলিশের ৫০ জন ও ২০ জন অস্ত্রধারী স্বেচ্ছাসেবক। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তারা তিন দিক থেকে আড়িয়াবাজারের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। তখন দুই পক্ষে শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। ঘণ্টা খানেক পর খবর পেয়ে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর বিমান আকাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা সবকিছু উপেক্ষা করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখলেন। স্থানীয় গ্রামবাসীও মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেন। তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করে। আড়িয়াবাজারের যুদ্ধে খন্দকার মতিউর রহমান যথেষ্ট বীরত্ব ও কৃতিত্বের পরিচয় দেন।[3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২১-০৪-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।