মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন (বীর বিক্রম)

মো. নাজিম উদ্দীন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]

মো. নাজিম উদ্দীন
মৃত্যু১৯৯৮
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মো. নাজিম উদ্দীনের পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার বেকি গ্রামে। তার বাবার নাম রহিম উদ্দীন এবং মায়ের নাম মেহেরজান বিবি। তার স্ত্রীর নাম বিলাতুন নেছা। তাদের পাঁচ মেয়ে দুই ছেলে।

কর্মজীবন

মো. নাজিম উদ্দীন ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে দিনাজপুর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ বিদ্রোহ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধকালে প্রথমে দশমাইল, পরে চম্পাতলীতে যুদ্ধ করেন। ভারতে যাওয়ার পর কিছুদিন একটি ক্যাম্পের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। মন্ডুমালা যুদ্ধের আগেও তিনি আরও কয়েকটি গেরিলা অপারেশনে নেতৃত্ব দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার অন্তর্গত মন্ডুমালা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখানে ঘাঁটি করে। এটি ছিল বেশ সুরক্ষিত। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট প্রায় ৫০ মুক্তিযোদ্ধা এই ঘাঁটিতে আক্রমণ করেন। তখন ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতৃত্ব দেন মো. নাজিম উদ্দীন। বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন স্বল্প প্রশিক্ষিত। সরাসরি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। মো. নাজিম উদ্দীনের নেতৃত্বে তারা ঘাঁটি আক্রমণ করেন। আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কিছুটা হকচকিত হয়। তবে এ ধরনের আক্রমণের জন্য তারা প্রস্তুতই ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তারা আক্রমণ প্রতিরোধ করে। পাকিস্তানিদের ভারী অস্ত্রের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা পেরে ওঠেননি। প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণের মুখে তাদের পিছু হটে যেতে হয়। এতে মনোবল হারাননি মো. নাজিম উদ্দীন। সহযোদ্ধাদের পুনরায় সংগঠিত করে পরদিন ১৭ আগস্ট ভোরে আবারও ওই ঘাঁটি আক্রমণ করেন। সহযোদ্ধাদের নিয়ে তিনি ঘাঁটির ২০০-২৫০ গজের মধ্যে চলে যান। পাকিস্তানি সেনারা তাদের লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাগুলি করে। মো. নাজিম উদ্দীন সহযোদ্ধাদের বলেন, ‘মৃত্যু আসলে আসুক, তবু আমরা সামনে যাব।’ তার সাহসিকতায় উজ্জীবিত হন সহযোদ্ধারা। এরপর তার নেতৃত্বে তারা বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন এবং আরও কিছুদূর এগিয়ে যান। এমন সময় হঠাৎ একটি বোমা আঘাত হানে মো. নাজিম উদ্দীনের ডান পায়ে। তার ডান পায়ের নিচের অংশ সঙ্গে সঙ্গে উড়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। গুরুতর আহত হওয়ার পরও মো. নাজিম উদ্দীনের আরও কিছুক্ষণ জ্ঞান ছিল। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে তিনি একাই ক্রল করে পাশের পাটখেতে যান। সেখানে যাওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কয়েকজন সহযোদ্ধা অচেতন অবস্থায় তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে শিবিরে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে কলকাতায় নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মহারাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তাকে পাঠানো হয়। দুই দিনের যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং মো. নাজিম উদ্দীনসহ অনেকে আহত হন। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৯-০৯-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১২৮। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.