আবদুল জব্বার পাটোয়ারী

আবদুল জব্বার পাটোয়ারী (জন্ম: ১৯৩০ - মৃত্যু: ১ মে, ২০০০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

আবদুল জব্বার পাটোয়ারী
জন্ম১৯৩০
মৃত্যু১ মে, ২০০০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবদুল জব্বার পাটোয়ারীর জন্ম চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চৌমুখা গ্রামে ১৯৩০ সালে। তার বাবার নাম আবদুর রহমান পাটোয়ারী। তার স্ত্রীর নাম আফিয়া খাতুন। তাদের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। [2]

কর্মজীবন

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন আবদুল জব্বার পাটোয়ারী। ১৯৭১ কর্মরত ছিলেন ২৭ বালুচ রেজিমেন্টে সুবেদার মেজর পদবিতে। এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। মার্চ মাসে তিনি ছুটিতে বাড়ি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরে। পরে তাকে ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে যুদ্ধ করেন ফেনী, নাজিরহাটহাটহাজারী এলাকায়। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন। পরে তিনি ঢাকা ওয়াসা তে চাকরি করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধকালে সালদা নদী এলাকায় কয়েক দিন পরপরই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হতো। সেপ্টেম্বর মাসে সেখানে অনেকবার যুদ্ধ হয়। সালদা নদী রেলস্টেশন নানা কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ স্টেশনের ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসিলেটের রেল যোগাযোগ। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে এই স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে। মুক্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন এলাকা ছিলো সালদা নদী। সেক্টর অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে সালদা নদী রেলস্টেশন দখলের পরিকল্পনা করেন। তার নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল ১৯৭১ সলের ৯ অক্টোবর সেখানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে। একটি দলের নেতৃত্বে আবদুল জব্বার পাটোয়ারী। সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকলেন। তাদের নিখুঁত গোলাবর্ষণে পাকিস্তানি সেনারা দিশাহারা হয়ে অবস্থান ছেড়ে সরে যেতে বাধ্য হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে এল বিরাট এক এলাকা।

পরিকল্পনা অনুসারে মেজর আবদুল সালেক চৌধুরী (বীর উত্তম) তার দল নিয়ে রেলস্টেশনের পশ্চিমে গোডাউন এলাকায় অবস্থান নেন। মুজিব ব্যাটারি কামান নিয়ে অবস্থান নেয় মন্দভাগে। আবদুল জব্বার পাটোয়ারী মর্টার সেকশন নিয়ে অবস্থান নেন ব্যারাকের পেছনে। অপর একটি দল অবস্থান নেয় নয়নপুর সড়কের কাছে। এই যুদ্ধে সার্বিক নেতৃত্ব দেন খালেদ মোশাররফ নিজেই। ৮ অক্টোবর সকাল সাড়ে ছয়টায় মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। তাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থান ছেড়ে পিছু হটতে থাকে। পাকিস্তানি সেনাদের নয়নপুরে অবস্থানরত দল পিছু হটে সালদা রেলস্টেশনে আশ্রয় নেয়। এমন সময় মুক্তিবাহিনীর মেজর সালেকের দলের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যায়। সেদিন আবদুল জব্বার পাটোয়ারী তার দল নিয়ে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করেন। কিন্তু তারা সালদা রেলস্টেশন দখল করতে ব্যর্থ হন। পরদিন ৯ অক্টোবর আবার সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে আবদুল জব্বার পাটোয়ারী অসাধারণ বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। তাদের প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপুল ক্ষয়ক্ষতি শিকার করে সালদা রেলস্টেশন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। রেলস্টেশন মুক্তিযোদ্ধারা দখল করেন। পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রেলস্টেশন পুনর্দখলের জন্য আক্রমণ চালিয়েও তা আর দখল করতে পারেনি। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আবদুল জব্বার পাটোয়ারীকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ২৫।
  • বীর বিক্রম

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০১-০৩-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৩৪। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ৭৮। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.