ফরিদগঞ্জ উপজেলা
ফরিদগঞ্জ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এবং চাঁদপুর জেলা এর একটি উপজেলা। ৭ অক্টোবর ১৯১৮ সালে ফরিদগঞ্জ থানা হিসেবে গঠিত হয়। বর্তমানে এটি একটি উপজেলা।
ফরিদগঞ্জ | |
---|---|
উপজেলা | |
ফরিদগঞ্জ | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৭′১৫″ উত্তর ৯০°৪৪′৪১″ পূর্ব | |
দেশ | |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | চাঁদপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ২৩১.৫৪ কিমি২ (৮৯.৪০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০০১)[1] | |
• মোট | ৩,৭৪,৭৬০ |
• জনঘনত্ব | ১৬০০/কিমি২ (৪২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার(২০০১ জরিপ) | |
• মোট | ৫৮% শহর ৬২.৪৬% , গ্রাম ৫৩.৪৬% (২০০১) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ১৩ ৪৫ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
আয়তন ও অবস্থান
ফরিদগঞ্জ উপজেলাটি চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলায় অবস্থিত। সমতল ভূমি এই উপজেলার মধ্য দিয়ে ডাকাতিয়া নদী প্রবাহিত হয়েছে। এ উপজেলার আয়তন ২৩২.২৩ বর্গ কিলোমিটার (৫৭,৩৮৫ একর)।[2] ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমে হাইমচর উপজেলা ও চাঁদপুর সদর উপজেলা, উত্তরে চাঁদপুর সদর উপজেলা ও হাজীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা ও রায়পুর উপজেলা অবস্থিত।
ইতিহাস
বর্তমান ফরিদগঞ্জ উপজেলা ১৯১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থানা হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছিল। এ উপজেলার নাম কেন ফরিদগঞ্জ হওয়ার পেছনে বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত আছে। যার মধ্যে রয়েছে-
- অনেক পূর্বে শেখ ফরিদ নামে একজন বিখ্যাত মুসলিম সাধক এই এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করে বহু মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। অনেকের মতে, উক্ত সাধকের নামানুসারে এই এলাকার নাম রাখা হয়েছিল ফরিদগঞ্জ।
- পূর্বে এ এলাকায় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবসা কেন্দ্র ছিল না। তবে এই এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদী পথে অনেক ব্যবসায়ীর যাতায়াত ছিল। তারা অনেক সময় রাত্রি যাপনের স্থান হিসাবে এই এলাকাটিকে সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য স্থান মনে করে এখানে রাত্রি যাপন করত। এলাকায় তৎকালীন জমিদার স্থানীয় জনগণের সুবিধার্থে এই এলাকায় একটি ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় জনগণকে উৎসাহিত করেছিলেন। তার উৎসাহে সবচেয়ে বেশী উৎসাহিত হয়েছিলেন ফরিদ আলী নামে একজন ব্যবসায়ী। জনসাধারণকে আরো উৎসাহিত করার মানষে জমিদার উক্ত ফরিদ আলীর নামানুসারে বাজারটির নামকরণ করেছিলেন ফরিদগঞ্জ।
- এই উপজেলার অন্তর্গত তৎকালীন রূপসার জমিদারের প্রতাপ ছিল বেশী। তার পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন ফরিদা বানু। জমিদার স্নেহবশে ফরিদা বানুর নামানুসারে এলাকাটির নামকরণ করেন।
প্রশাসনিক এলাকা
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ফরিদগঞ্জ থানার আওতাধীন।
ইউনিয়নসমূহ:
- ১নং বালিথুবা পশ্চিম
- ২নং বালিথুবা পূর্ব
- ৩নং সুবিদপুর পূর্ব
- ৪নং সুবিদপুর পশ্চিম
- ৫নং গুপ্টি পূর্ব
- ৬নং গুপ্টি পশ্চিম
- ৭নং পাইকপাড়া উত্তর
- ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ
- ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর
- ১০নং গোবিন্দপুর দক্ষিণ
- ১১নং চর দুঃখিয়া পূর্ব
- ১২নং চর দুঃখিয়া পশ্চিম
- ১৩নং ফরিদগঞ্জ উত্তর (ফরিদগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন সম্পূর্ণ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম বর্তমানে বিলুপ্ত)
- ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ
- ১৫নং রূপসা উত্তর
- ১৬নং রূপসা দক্ষিণ
প্রশাসনিক স্থাপনা
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- ফরিদগঞ্জ পৌরসভা ভবন
- উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়
- উপজেলা শিক্ষা অফিস
- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস
- উপজেলা রিসোর্স সেন্টার
- উপজেলা পোস্ট-ই সেন্টার
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী এ উপজেলার জনসংখ্যা ৩,৭৪,৭৬০ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৫০৪ জন। এই উপজেলায় হিন্দু, মুসলমান বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান চার সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। তবে মুসলমানদের সংখ্যা পরিমাণে বেশি। এখানে শতকরা ৯০ ভাগ লোক মুসলমান, ৮ ভাগ হিন্দু, আর বাকী ২ ভাগ বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বাউল বৈষ্ণব সম্প্রদায় এই এলাকায় অতি পরিচিত। তাদের আশ্রমের নাম অধিকারী ঠাকুরের সেবাশ্রম।
শিক্ষা
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় শহর এলাকায় শিক্ষার হার ৬২.৪৬% আর গ্রাম এলাকায় শিক্ষার হার ৫৩.৬৪%। [3]
চিকিৎসা ব্যবস্থা
- উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪টি:-
১২নং চরদুঃখিয়া(পঃ) [দিঘিরপাড়] উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ১৫নং রূপসা (উঃ) রূপসা,উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ৮নং পাইকপাড়া (দঃ) কড়ৈতলীউপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ৫নং গুপ্টি (পূঃ) আষ্টা, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
পৌরসভা ফরিদগন্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
- কমিউনিটি ক্লিনিক মোট ১১টি:-
সরখাল, ইউঃ ০২, ওয়ার্ড-১। শোশাইরচর, ইউঃ ০২, ওয়ার্ড-০২। দেইচর, ইউঃ ০২, ওয়ার্ড-০৩। কৃষ্ণপুর, ইউঃ০২, ওয়ার্ড-০৩। ষোলদানা, ইউঃ ০৬, ওয়ার্ড-০১। আদসা, ইউঃ ০৬, ওয়ার্ড-০১। কেরোয়া, ইউঃ ১৩, ওয়ার্ড-০১। নোয়াগাঁ, ইউঃ ১৩, ওয়ার্ড-০২। সাফুয়া, ইউঃ ১৩, ওয়ার্ড-০৩। পোঁয়া, ইউঃ১৪, ওয়ার্ড-০১। চরবড়ালী, ইউঃ ১৪, ওয়ার্ড-০২। [4]
★হাসপাতাল
১.ডায়বিটিক হসপিটাল(ফরিদগন্জ ব্রীজ সংলগ্ন)
২. সেন্ট্রাল হসপিটাল(ফরিদগঞ্জ বাস ষ্টান)
৩.ইসলামিয়া হসপিটাল(ফরিদগঞ্জ বাস ষ্টান)
৪.আল-মদিনা হাসপিটাল(পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড)
৫.ফ্যামেলি কেয়ার (তুলাতলি মসজিদ সংল)
অর্থনীতি
ফরিদগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতি বৈদেশিক রেমিটেন্স এবং কৃষি নির্ভরশীল। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.৯০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬৪%, শিল্প ০.৮৬%, ব্যবসা ১৫.২৪%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৬৩%, চাকরি ১৩.৮০%, নির্মাণ ৩.৫০%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৫.৩৯% অন্যান্য ১২.৬১%।
== কৃতি ব্যক্তি
- দেলোয়ার হোসাইন নান্নু পাটোয়ারী-বীর মুক্তিযোদ্ধা
- মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী -সিআইপি, প্রতিষ্ঠাতা আম্বিয়া ইউনুস ফাউন্ডেশন,
- খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরী, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী।
- ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান, গবেষক, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও শিক্ষক।
- নূরেজ্জামান ভুঁইয়া, রাজনীতিবিদ ও শিক্ষক।
- আইউব আলী খান, শিক্ষক, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ।
- লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী (৮ নং সেক্টর কমান্ডার)
- দেলোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক)
- আমিনুল হক মাস্টার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি থানা আওয়ামী লীগ, ৭১ এর থানা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, শিক্ষক, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ
- আবুল হোসেন (বীর প্রতীক)
- ফারুক আহমদ পাটোয়ারী
- মোহাম্মদ আবদুল হাকিম
- মোহাম্মদ বজলুল গণি পাটোয়ারী
- আবদুল জব্বার পাটোয়ারী
- আমিন উল্লাহ শেখ (বীর বিক্রম)
- এম এ মাওলানা আবদুল মান্নান, সাবেক ধর্ম মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক।
- শান্তনু কায়সার, সাহিত্যিক।
- হাশেম খান (খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী)
- আলমগীর হায়দার (৪ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য)
- লায়ন হারুনুর রশীদ, (সাবেক সংসদ সদস্য)
- শামছুল হক ভূঁইয়া
- এম সফিউল্লাহ (বীর মুক্তিযোদ্ধা,সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চাদঁপুর জেলা,মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তী আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত প্রথম সংসদ সদস্য)
- ইসমাঈল হোসেন বেঙ্গল, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিবাহিনীর বেঙ্গল প্লাটুনের কমান্ডার এবং রাজনীতিবিদ।
- আমেনা বেগম, রাজনীতিবিদ।
- সিরাজুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য।
- সাংবাদিক শফিকুর রহমান, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ।
- রেজাউল করিম, ফুটবলার ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক।
- প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাসুম ইকবাল, ডীন, ব্যবসায় ও উদ্যোক্তাবৃত্তি অনুষদ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
বিবিধ
- নির্বাচন এলাকা ২৬৩,
- সংসদীয় আসন চাঁদপুর-৪ (জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকা)
- ইউনিয়ন ১৬টি (ফরিদগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ)
- গ্রাম ১৭৫ টি
- ১টি পৌরসভা, (ফরিদগঞ্জ পৌরসভা)
- ৩৮টি পোস্ট অফিস
- ২০+টি ব্যাংক।
- ৪৫ টি বাজার , গ্রামের হাট।
- ৩৯টি প্লাবন ভূমি
- ১০ হাজার ৬শত ৬৫টি পুকুর
- ১৩টি খাল
- ২৯টি বরোপিট
ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক নির্দশন
- পর্তুগীজ দুর্গ, সাহেবগঞ্জ ( সাহেবগঞ্জ, রূপসা ইউনিয়ন)
- রূপসা জমিদার বাড়ি (ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্বে রূপসা গ্রামে)
- লোহাগড় জমিদার বাড়ি
- লোহাগড় মঠ (চান্দ্রা বাজারের দক্ষিণ পশ্চিমে লোহাগড় গ্রামে)
- কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি (বাবুর বাড়ি)
- শোল্লা জমিদার বাড়ি
- ওনুয়া স্মৃতি ভাস্কর্য (ফরিদগঞ্জ-রূপসা-রায়পুর রাস্তার মোড়ে)
জনপ্রতিনিধি
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[5] | সংসদ সদস্য[6][7][8][9][10] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৬৩ চাঁদপুর-৪ | ফরিদগঞ্জ উপজেলা | মুহম্মদ শফিকুর রহমান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন, ২০১৫। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (PDF)। web.archive.org। Wayback Machine। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৯।
- http://bn.banglapedia.org
- ফরিদগঞ্জ উপজেলা তথ্য অফিস
- "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (PDF)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।