দীঘিনালা উপজেলা

দীঘিনালা বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

দীঘিনালা
উপজেলা
দীঘিনালা
বাংলাদেশে দীঘিনালা উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°১৫′৪১″ উত্তর ৯২°৩′২৭″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
জেলাখাগড়াছড়ি জেলা
প্রতিষ্ঠাকাল১৯১৬
সংসদীয় আসন২৯৮ পার্বত্য খাগড়াছড়ি
সরকার
  সংসদ সদস্যকুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
আয়তন
  মোট৬৯৪.১২ কিমি (২৬৮.০০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
  মোট১,০৭,৩৬৩
  জনঘনত্ব১৫০/কিমি (৪০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৪৭.৫০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৪৪২০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
২০ ৪৬ ৪৩
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

আয়তন

দীঘিনালা উপজেলার মোট আয়তন ৬৯৪.১২ বর্গ কিলোমিটার।[1] এটি আয়তনের দিক থেকে খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা।[2]

অবস্থান ও সীমানা

খাগড়াছড়ি জেলার সর্ব-উত্তরে ও সর্ব-পূর্বে ২৩°০৪´ থেকে ২৩°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৬´ থেকে ৯২°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে দীঘিনালা উপজেলার অবস্থান।[1] খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার।[3] এ উপজেলার পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা; দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলা; পশ্চিমে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা, পানছড়ি উপজেলাভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।

নামকরণ ও ইতিহাস

দীঘিনালার বড় আদামে প্রায় দুই একরের মতো জায়গাজুড়ে অবস্থিত গোবিন্দ মাণিক্যের দীঘি। গাছপালা শোভিত স্বচ্ছ পানির এই দীঘির সঙ্গে জড়িয়ে অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্যের স্মৃতি। নিজ রাজ্য ছেড়ে দীঘিনালায় স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তখন এ অঞ্চলের নাম ছিল রিয়াংদেশ। এলাকার বাসিন্দারা গোবিন্দ মাণিক্যের স্মৃতি অক্ষয় করে রাখতে খনন করেন এই দীঘি। জনশ্রুতি আছে, দীঘির কারণে এই অঞ্চলের নাম বদলে রাখা হয় দীঘিনালা।[4] দীঘির তীরে নেই কোন নামফলক। পুররঞ্জন প্রসাদ চক্রবর্তীর ত্রিপুরা রাজমালা, প্রভাংশু ত্রিপুরার ত্রিপুরা জাতির মাণিক্য উপাখ্যান এবং হিস্ট্রি অব হিন্দুস্তান গ্রন্থের তথ্যসূত্র অনুযায়ী, মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য ছিলেন ত্রিপুরার ১৮৪তম রাজা। তিনি রাজর্ষি খেতাব পেয়েছিলেন। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরার সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। এ সময় রাজ্যের ভুবনেশ্বরী মন্দিরে পূজার নামে ব্যাপক বলিদান প্রচলন ছিল। মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য রাজ্যভার গ্রহণের পর এক আদেশে বলিদান প্রথা বন্ধ করে দেন। তখন তার বৈমাত্রেয় ছোট ভাই নক্ষত্র নারায়ণ ও রাজ পুরোহিত রঘুপতি চোন্তাই বলিদান বন্ধের রাজ আদেশের বিরুদ্ধে প্রজাদের মধ্যে প্রচার চালাতে থাকেন। রাজ আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করার অপরাধে রাজ পুরোহিত রঘুপতি চোন্তাইকে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নির্বাসন ও বৈমাত্রেয় ছোট ভাই নক্ষত্র নারায়ণকে বঙ্গদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেন গোবিন্দ মাণিক্য। নক্ষত্র নারায়ণ বঙ্গদেশে গিয়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বড় ভাই গোবিন্দ মাণিক্যকে হটিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের সিংহাসন দখলের ষড়যন্ত্র করেন। মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য এই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে বৈমাত্রেয় ভাই নক্ষত্র নারায়ণকে রাজ্যভার দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের রিয়াংদেশে (বর্তমানে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মাইনী নদীর তীরে) স্বেচ্ছা নির্বাসনে আসেন। মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য রিয়াংদেশে নির্বাসন জীবন কাটাচ্ছেন জেনে রিয়াংবাসীরা মহারাজার সামনে উপস্থিত হয়ে তার বৈমাত্রেয় ভাই নক্ষত্র নারায়ণের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের অভিপ্রায় জানান। তখন মহারাজা তাদের জানিয়েছিলেন, তিনি স্বেচ্ছায় নক্ষত্র নারায়ণের হাতে ত্রিপুরা রাজ্যের শাসনভার তুলে দিয়ে নির্বাসনে এসেছেন। তিনি তার আনুগত্যের নিদর্শন প্রকাশের জন্য রিয়াংবাসীকে দীঘি খনন করতে বলেন। তখন মহারাজার নির্দেশ মেনে রিয়াংবাসীরা ১২টি দীঘি খনন করেন। তার মধ্যে দীঘিনালার এ দীঘিটি অন্যতম।

প্রশাসনিক এলাকা

১৯১৬ সালে দীঘিনালা থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।[1] এ উপজেলায় বর্তমানে ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম দীঘিনালা থানার আওতাধীন।

ইউনিয়নসমূহ:

[5]

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দীঘিনালা উপজেলার জনসংখ্যা ১,০৭,৩৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫,০৯২ জন এবং মহিলা ৫২,২৭১ জন।[3] মোট জনসংখ্যার ৩১.৭৩% মুসলিম, ৯.১৭% হিন্দু, ৫৭.৯৮% বৌদ্ধ এবং ১.১২% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা প্রভৃতি উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।[1]

শিক্ষা

দীঘিনালা উপজেলার সাক্ষরতার হার ৪৭.৫০%।[1] এ উপজেলায় ১টি কলেজ, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদ্রাসা, ৭টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[3]

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

যোগাযোগ ব্যবস্থা

দীঘিনালা উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়ক। যে কোন যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়।

নদ-নদী

দীঘিনালা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মাইনী নদী[6]

হাট-বাজার

দীঘিনালা উপজেলার প্রধান প্রধান হাট-বাজারগুলোর মধ্যে দীঘিনালা থানা বাজার, বোয়ালখালী নতুন বাজার, মেরুং বাজার, বাবুছড়া বাজার, কল্যাণপুর বাজার উল্লেখযোগ্য।[1][7]

দর্শনীয় স্থান

[8]

কৃতী ব্যক্তিত্ব

জনপ্রতিনিধি

সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[9] সংসদ সদস্য[10][11][12][13][14] রাজনৈতিক দল
২৯৯ পার্বত্য খাগড়াছড়ি খাগড়াছড়ি জেলা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
ক্রম নং পদবী নাম
০১ উপজেলা চেয়ারম্যান[15] নব কমল চাকমা
০২ ভাইস চেয়ারম্যান[15] সুসময় চাকমা
০৩ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান[16] গোপাদেবী চাকমা
০৪ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা[17] মোহাম্মদ শেখ শহিদুল ইসলাম

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "দীঘিনালা উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org
  2. https://web.archive.org/web/20151208044832/http://www.bbs.gov.bd/WebTestApplication/userfiles/Image/National%20Reports/Union%20Statistics.pdf
  3. "এক নজরে দিঘীনালা - দিঘীনালা উপজেলা-"dighinala.khagrachhari.gov.bd
  4. "দীঘিনালা উপজেলার পটভূমি"dighinala.khagrachhari.gov.bd
  5. "ইউনিয়ন সমুহ - দিঘীনালা উপজেলা-"dighinala.khagrachhari.gov.bd
  6. "নদ-নদী - দিঘীনালা উপজেলা-"dighinala.khagrachhari.gov.bd
  7. "হাট বাজার - দিঘীনালা উপজেলা-"dighinala.khagrachhari.gov.bd
  8. "দর্শনীয় স্থান - দিঘীনালা উপজেলা-"dighinala.khagrachhari.gov.bd
  9. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd
  10. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (PDF)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯
  11. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  12. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  13. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  14. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  15. "দীঘিনালায় বন্দী ছয় হাজার পরিবার"
  16. "চট্টগ্রামে দীঘিনালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের স্বামীর লাশ উদ্ধার - News BBC"
  17. "প্রোফাইল - দিঘীনালা উপজেলা-"dighinala.khagrachhari.gov.bd

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.