ছাগলনাইয়া উপজেলা

ছাগলনাইয়া বাংলাদেশের ফেনী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। ধারণা করা হয়, ইংরেজ শাসনামলে দাপ্তরিক নথিতে R এর স্থলে ভুলবশত L লেখার ফলে এ এলাকার নাম সাগরনাইয়া (সাগর যাকে নাইয়ে বা স্নান করিয়ে দেয়) থেকে ছাগলনাইয়া' হয়ে যায়। সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান এবং সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় ঐতিহাসিকভাবে - বিশেষত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ছাগলনাইয়া
উপজেলা
ছাগলনাইয়া
বাংলাদেশে ছাগলনাইয়া উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°২′১৪″ উত্তর ৯১°৩০′৫২″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
জেলাফেনী জেলা
আয়তন
  মোট১৩৩.৪৯ কিমি (৫১.৫৪ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট১,৭০,৫২৪
  জনঘনত্ব১৩০০/কিমি (৩৩০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৬৩.১০%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩৯১০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
২০ ৩০ ১৪
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান

ছাগলনাইয়া উপজেলার অবস্থান ২৩.০৩৬১° উত্তর ৯১.৫১৯৪° পূর্ব / 23.0361; 91.5194। এ উপজেলার উত্তরে ফুলগাজী উপজেলা, পশ্চিমে ফেনী সদর উপজেলা, দক্ষিণে ফেনী সদর উপজেলাচট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলা এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।

প্রাচীন ইতিহাস

অনেকে মনে করেন বর্তমান ছাগলনাইয়া কোন এক সময়ে বৌদ্ধ সভ্যতার অন্তর্গত ছিল। পরে উত্তরের পাহাড়ী স্রোতে, প্রাকৃতিক কারণে বা নদী ভাঙ্গনে সাগরে লীন হয়ে কালের বিবর্তনে আবার ধীরে ধীরে ভূমি খন্ড খন্ড রুপে জেগে উঠে। ছাগলনাইয়া ভেঙ্গে জেঠে ওঠা ভূমির কারনেই এখানে, নোয়াখালীর বা চট্রগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলের মতো প্রাচীন কোনো স্থাপনার নিদর্শন নেই, যেমন আছে কুমিল্লার বা ত্রিপুরার। এই মাত্র কয়েকশ বছর আগেও পুরান রাণীর হাট (আসলে ঘাট) থেকে পশ্চিম ছাগলনাইয়া পর্যন্ত প্রায় ১৪/১৫ মাইল ব্যাপী নদীর প্রশস্ততা ছিল এবং এ অংশ পার হতে হত খেয়া নৌকা দিয়ে। ছাগলনাইয়া অনেক অংশ অনেক পূর্বেই জেগে উঠে বনজঙ্গলে ভরে যায়। পাহাড়ের নিকট খন্ড স্থান বলে তখন এলাকার নাম হয় খন্ডল। ছাগলনাইয়া নামকরণ হয় অনেক পরে ব্রিটিশ আমলের প্রথম দিকে। সে নামকরণ রহস্যাবৃত্ত। সাগর থেকে ছাগল হবার কথা ভুল। নোয়াখালীর উপভাষায় এরকম প্রয়োগ নেই। বগুড়ার রামচন্দ্র চৌধুরী নবাব সরকারের কার্য উপলক্ষে বঙ্গীয় একাদশ শতাব্দীর (খ্রিষ্ঠীয় পঞ্চদশ শতাব্দী) প্রথম ভাগে ভুলুয়ায় (বর্তমানে নোয়াখালী) এসে বদল কোন নামক স্থানে বাস করতে থাকেন। তিনি পরে ত্রিপুরা মহারাজের উচ্চ রাজ কর্মচারী নিযুক্ত হন। কোনো এক সময়ে তাকে নিয়ে মহারাজ চন্দ্রনাথ তীর্থে যান। পথিমধ্যে খন্ডলের জঙ্গলপূর্ণ সমতল ভূমি দেখে মহারাজ তা আবাদ করে প্রজাপত্তনের জন্য রামচন্দ্রকে নির্দেশ দেন। তিনি অনেক জায়গার বনজঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে ভুলুয়া থেকে উল্লেখযোগ্য সংখক ব্রাক্ষণ ও কায়স্থ সহ বহুলোক এনে বসতি পত্তন করেন। পরে তিনি আরো অনেক জায়গা আবাদ করেন। কাঁর তিনপুত্র গজেন্দ্র নারায়ন, প্রেম নারায়ন ও শুভেন্দ্র নারায়ন ও পিতার পদাস্ক অনুসরণ করে প্রায় পুরো খন্ডলে বসতি গড়ে তোলেন ও অনেক স্থানে ব্রাক্ষণ, কায়স্থ ও ভদ্র লোক উপবিষ্ট করান। এভাবে রামচন্দ্র ও তার পুত্রাদি কর্তৃক খন্ডলের অনেক জায়গা প্রজাপত্তন ও আবাদি হলে ত্রিপুরা মহারাজ তাদেরকে খন্ডলের ইজারাদার নিযুক্ত করেন। এভাবে খন্ডল তথা বর্তমান ছাগলনাইয়ায় মনুষ্য বসতি ও আবাদ শুরু হয়। শমসের গাজীর আবির্ভাবে এসব জমিদার ইজারাদারদের অবস্থান সস্কুচিত হয় ও ক্ষমতা হ্নাস পায়। ঠিক কোন সময় থেকে কি কারণে এ খন্ডল অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে সে সম্পর্কে ইতিহাস নীরব। দেখা যায়, এখনকার চাঁদগাজী মসজিদ প্রাচীন ১৭১২-১৩ সালের। অথচ মুর্শিদাবাদের মুর্শিদকুখী খাঁ ১৭১৭ সালে বাংলার নবাব নিক্তুক্ত হন। সেই থেকে ১৭৫৭ পর্যন্ত বাংলার নবাবী আমল। খুব সম্ভব, এ সময়েই এখানে মুসলমানদের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। নোয়াখালীর অন্যান্য এলাকার মতো কয়েক শ’ বছর আগেই খন্ডলও মুসলমান প্রধান এলাকায় পরিণত হয়। স্মর্তব্য শিলূয়ার শিল সংলগ্ন চৌধুরী বাড়ীর জামে মসজিদটি ১৮৩৪ সালের। ভুমির ভাঙ্গা-গড়ার মতো খন্ডলে জনমানুষের ও নানা উত্থান-পতন ঘটেছে। ধারানা করা হয় যে, প্রাচীন কালে পার্শ্ববর্তী কুমিল্লার ত্রিপুরা চট্রাগ্রামের মতো খন্ডল তথা ছাগলনাইয়াও (তখন ত্রিপুরার অন্তর্গত) বৌদ্ব ধর্মাবলম্বী লোকের বসবাস ছিল। প্রধানতঃ শিলূয়ার শিলের আবিস্কার এই ধারনা প্রতিষ্ঠার প্রধান যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়। তবে একটি মাত্র নিদর্শন প্রাপ্তি দিয়ে কোন যুক্তি দাঁড় করানোও বিপজ্জনক। এমনও তো হতে পারে, স্থানান্তরের সময় এ শিলটি বা অন্য দু’ একটি নিদর্শন তৎকালীন নদীতে পড়ে যেতে পারে, যা পরবর্তী কালে মাটির সঙ্গে উপরে উছে আসে। নোয়াখালীর চরাঞ্চলে এরকম কিছু ‘বয়া’ মাটির ওপরে দাঁড়িয়ে বা কাত হয়ে থাকতে দেখা গেছে। আবার এমনও হতে পারে, এ শিলা ও আরো দু’ একটি নিদর্শন উজান কে স্রোতের বেগে ভাটির দিকে গড়িয়ে এসেছে। ‘নোয়াখালীর ইতিহাসে’ লেখা হয়েছে, ‘খন্ডল পরগনার অন্তর্গত চম্পকনগর গ্রামে অতি প্রাচীন কালে মগ বা বৌদ্ব ধর্মাবলস্মী রাজার আবাস বাটী ছিল এরুপ প্রবাদ। এই অঞ্চলের মটুয়া, মোটবী, শিলুয়া, মোট বাদীয়া, মঘুয়া, রাজনগর প্রভূতি গ্রামে প্রাচীন বৌদ্ব কীর্তির ভগ্নাবশেষ দেখিলে বৌদ্ব প্রভাবের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।’ সম্প্রতি ছাগলনাইয়া সীমান্ত সংলগ্ন মিরসরাই উপজেলার জোরালগঞ্জের ভগবতীপুর গ্রামে পুকুর খননের সময় চার ফুট মার্টির নিচে ৭০০ বছরের প্রাচীন বৌদ্ব মন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, মিরসরাই, সীতাকুন্ড এলাকা প্রাচীন কাল ককে অন্ততঃ দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ব ধর্মাবলম্বীদের অধীনে ছিল। ১১০০-১২০০ সালের দিকে বৌদ্ব রাজারা দুর্বল হয়ে পড়লে ভুলুয়া (বর্তমান নোয়াখালী) ও ত্রিপুরার হিন্দু রাজারা মাথা তুলে দাঁড়ান ও হিন্দু রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পান এবং পরবর্তী কালে মৃসলমানরা আধিপত্য বিস্তার করে।[2]
১৯৬৩ সালে পুকুর খননকালে নব্য প্রস্তর যুগে ব্যবহার্য হাতকুড়াল পাওয়া যায়, যা পাঁচ হাজার বছর আগের পুরনো বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরে এটি সংরক্ষণ করে রাখা আছে। অনুরূপ নিদর্শন ময়নামতি, রাঙ্গামাটি, সীতাকুন্ডেও আবিষ্কার করা হয়েছে। [3]

নামকরণ

ছাগল নাইয়া নামকরণ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন যে ইংরেজ আমলের শুরুতে সাগর (Sagor) শব্দটি ভুল ক্রমে সাগল (Sagol) নামে লিপিবদ্ধ হয়েছিল।তাই ছাগল নাইয়া শব্দটি প্রচলিত হয়ে ওঠে।উল্লেখ্য ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন পুথি পত্রে ছাগল নাইয়া নামের কোন স্থানের নাম পাওয়া যায় না। [4]

প্রশাসনিক এলাকা

ছাগলনাইয়া উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম ছাগলনাইয়া থানার আওতাধীন।

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

জনসংখ্যার উপাত্ত

সর্বমোট জনসংখ্যা ১,৭০,৫২৪ জন।পুরুষ ৪৯.৭৯%, মহিলা ৫০.২১%,মুসলিম ৯৬.৯৫%,

হিন্দু ২.৯৫% এবং অন্যান্য .১%।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

কলেজ-৬ ছাগলনাইয়া সরকারী কলেজ,আব্দুল হক চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ, মৌলভী সামছুল করিম কলেজ, চাঁদগাজী কলেজ, বল্লভপুর কলেজ, ছাগলনাইয়া মহিলা কলেজ।

উচ্চ বিদ্যালয়-২৭, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়-৬১, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়-৯, মাদ্রাসা-২৯, টেকনিক্যাল স্কুল-৩,পলিটেকনিক ইনিস্টিউট-১

শিক্ষার হার

গড়ে ৬৩.১%, পুরুষ ৫১.৩% মহিলা ৩৬.৬%

যোগাযোগ ব্যবস্থা

পাকা রাস্তা ৬০ কি:মি:, সেমি পাকা রাস্তা ৩৫ কি:মি:, মাটির রাস্তা ৪১২ কি:মি:, নৌপথ ৯ নটিক্যাল মাইল, রেলপথ ৬.৫ কি:মি:।

অর্থনীতি

কৃষিজীবী-৪২.২৭%, কৃষি শ্রমিক-৭.৬৪%, শিল্প-১.৩৮% , চাকুরিজীবী-১৭.০৫%

বিবিধ

রাজনীতি অবস্থা

মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি

ব্যাংক

সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক।

ঐতিহাসিক/দর্শনীয় স্থান

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

জনপ্রতিনিধি

সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[5] সংসদ সদস্য[6][7][8][9][10] রাজনৈতিক দল
২৬৫ ফেনী-১ পরশুরাম উপজেলা, ফুলগাজী উপজেলা এবং ছাগলনাইয়া উপজেলা শিরীন আখতার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে ছাগলনাইয়া উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন, ২০১৫ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। "ছাগলনাইয়ার ঐতিহ্য"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৯ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন, ২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. শামসুজ্জামান, খান। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ২৭। আইএসবিএন 984-07-5336-3। ওসিএলসি 930364524
  4. জমির আহমেদ। ফেনীর ইতিহাসচট্টগ্রাম: সমতট প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৩।
  5. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd
  6. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (PDF)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯
  7. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  8. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  9. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮
  10. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.