আনোয়ারা উপজেলা
আনোয়ারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।
আনোয়ারা | |
---|---|
উপজেলা | |
আনোয়ারা | |
স্থানাঙ্ক: ২২°১৩′১৬″ উত্তর ৯১°৫৪′৪৩″ পূর্ব | |
দেশ | |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | চট্টগ্রাম জেলা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৭৬ |
সংসদীয় আসন | ২৯০ চট্টগ্রাম-১৩ |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ১৬৪.১৩ কিমি২ (৬৩.৩৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৫৯,০২২ |
• জনঘনত্ব | ১৬০০/কিমি২ (৪১০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫১.৯% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৪৩৭৬ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ১৫ ০৪ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
আনোয়ারা উপজেলার মোট আয়তন ১৬৪.১৩ বর্গ কিলোমিটার। ২২°০৭´ থেকে ২২°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৯´ থেকে ৯১°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিপরীতে কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণ-পূর্ব পাশে ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলে আনোয়ারা উপজেলার অবস্থান।[2] চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার।[3] এ উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে কর্ণফুলি নদী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পতেঙ্গা থানা; উত্তরে কর্ণফুলি উপজেলা ও পটিয়া উপজেলা; পূর্বে পটিয়া উপজেলা, চন্দনাইশ উপজেলা, সাঙ্গু নদী, সাতকানিয়া উপজেলা ও বাঁশখালী উপজেলা; দক্ষিণে সাঙ্গু নদী ও বাঁশখালী উপজেলা এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
নামকরণ ও ইতিহাস
দেয়াঙ এর সামন্ত রাজা আনোপোড়মের নামানুসারে আনোয়ারা নামের উৎপত্তি হয়েছে। ১৫৯৩ সালে আরাকান রাজা মেঙ পলৌঙ (মুসলিম নাম - সেকান্দার শাহ্) মৃত্যু বরণ করলে তার বড় ছেলে মেঙ রাজ্যাগী (মুসলিম নাম - সলিম শাহ্) আরাকানের রাজা হন। তার শাসনামলে ১৬০৩ সালে দেয়াঙ এর সামন্ত রাজা হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তারই আপন ভাই আনাপোড়ম। কেন্দ্রীয় রাজার অবাধ্যতার কারনে আরাকানের রাজা আশি হাজার সৈন্য ও সাত হাজার রণ হস্তির এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সামন্ত রাজা আনাপড়োম এর সামন্ত রাজ্য দেয়াঙ আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে রাজা আনাপোড়ম নিজেও গুরুতর আহত হন এবং উভয়পক্ষের বিপুল সংখ্যক লোক হতাহত হয়। আরাকান বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে আনাপোড়ম স্ত্রী, পুত্র, বোন অরুন্ধতীসহ পর্তুগীজ সেনাপতি গঞ্জালিশের সাথে প্রচুর ধন সম্পদ নিয়ে পর্তুগীজ যুদ্ধ জাহাজ যোগে সন্দ্বীপ এ পালিয়ে যান। এর কিছুদিন পর আনাপোড়ম সন্দ্বীপ এ মারা যান। আনপোড়মের ধ্বংসস্তুপ রাজ কার্যালয়কে কেন্দ্র করে ঐ এলাকাটি আনাপোড়া নামে পরিচিত হয়ে উঠে। পরবর্তীতে এ এলাকা আনাপোড়া, আনোপাড়া, আন্ওয়ারা, আনোওয়ারা এবং সর্বশেষ আনোয়ারা নামে পরিচিতি লাভ করে।[4]
প্রশাসনিক এলাকা
১৮৭৬ সালে আনোয়ারা থানা গঠিত এবং ১৯৮৩ সালে আনোয়ারা থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয়। এ উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন, ৮০টি মৌজা এবং ৮১টি গ্রাম রয়েছে।[3] এ উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আংশিক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্ণফুলি থানার আওতাধীন। বৈরাগ ইউনিয়নের বাকি অংশসহ উপজেলার বাকি ১০টি ইউনিয়ন আনোয়ারা থানার আওতাধীন।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আনোয়ারা উপজেলার লোকসংখ্যা ২,৫৯,০২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,২৬,৭০৯ জন এবং মহিলা ১,৩২,৩১৩ জন।[3] মোট জনসংখ্যার ৮৪% মুসলিম, ১৪% হিন্দু এবং ২% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[2]
শিক্ষা ব্যবস্থা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আনোয়ারা উপজেলার সাক্ষরতার হার ৫১.৯%।[6] এ উপজেলায় ২টি ডিগ্রী কলেজ, ২টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১টি কারিগরী কলেজ, ৩টি আলিম মাদ্রাসা, ৩টি স্কুল এন্ড কলেজ, ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি দাখিল মাদ্রাসা, ৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৬টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
যোগাযোগ ব্যবস্থা
চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে যোগাযোগের প্রধান সড়ক শাহ আমানত সেতু পার হয়ে চট্টগ্রাম-আনোয়ারা সড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ১৪নং ও ১৫নং ঘাটযোগে নৌপথেও আনোয়ারা উপজেলায় যোগাযোগ করা যায়।
স্বাস্থ্য
আনোয়ারা উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ১টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১টি উপজেলা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ৮টি ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র রয়েছে।[3]
অর্থনীতি
- প্রধান কৃষি ফসল
ধান, আলু এবং বিভিন্ন ধরনের তরিতরকারী।
- শিল্প কল-কারখানা
- চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল)
- কাফকো (কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানী)
ধর্মীয় উপাসনালয়
আনোয়ারা উপজেলায় ৩৫৬টি মসজিদ, ৮৩টি মন্দির ও ৮টি বিহার রয়েছে।[3]
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা
১৯৭১ সালে আনোয়ারা ১নং সেক্টরের অধীন ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর কাফকো, কালীগঞ্জ, পরৈকোড়া প্রভৃতি জায়গায় সংঘটিত বিভিন্ন লড়াইয়ে প্রায় ৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। পাকবাহিনী এ উপজেলার খিলপাড়া গ্রামের ৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এছাড়াও পাকবাহিনী এ উপজেলার অনেক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।[2]
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
- বধ্যভূমি: ৩টি
(কাফকো, কালীগঞ্জ, পরৈকোড়া)[2]
নদ-নদী
আনোয়ারা উপজেলার উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে কর্ণফুলি নদী এবং দক্ষিণ-পূর্ব পাশ দিয়ে সাঙ্গু নদী বয়ে চলেছে।[2]
হাট-বাজার
আনোয়ারা উপজেলায় মোট হাট-বাজার ৩৪টি।[3] মিন্নত আলী দোভাষী হাট, কালু মাঝি হাট, রুস্তম হাট, চাতরী চৌমুহনী বাজার, আন্নর আলী সিকদার হাট, ওয়াহেদ আলী চৌধুরী হাট, কালী বাড়ি বাজার, কে বি ছত্তার হাট, সরকার হাট, জয় কালির হাট উল্লেখযোগ্য।[7]
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী
- পাক্ষিক: অবিচল
- অনলাইন দৈনিক: প্রথম আনোয়ারা,সারা আনোয়ারা
দর্শনীয় স্থান
- শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) মাজার, বটতলী
- বঙ্গবন্ধু বহুমুখী টানেল প্রকল্প
- প্রসন্ন কুমার জমিদার বাড়ি
- পরৈকোড়া জমিদার বাড়ি
- পারকি সমুদ্র সৈকত
- বাংলাদেশ মেরিন একাডেমী
- দেয়াং পাহাড়
- কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানী (কাফকো)
- চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল)
- ডিএপিএফসিএল
- কোরিয়ান ইপিজেড
- পুরাতন আবহাওয়া অফিস
- বিমান বাহিনীর রাডার স্টেশন, বটতলী
- বাতিঘর, রায়পুর
- আকবরী মসজিদ
- ছুরুত বিবির মসজিদ
- ধলা বিবির মসজিদ
- মনু মিঞার দীঘি
- ওয়ান্ডার গার্ডেন
- হিলটপ পার্ক
- জমিদার বাড়ি, পরৈকোড়া
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- অধ্যাপক ডাঃ এম এ ফয়েজ –– প্রাক্তন মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
- অধ্যাপক ডাঃ নাসির উদ্দীন মাহমুদ –– শিশু বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
- আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু –– রাজনীতিবিদ।
- আতাউর রহমান খান কায়সার –– প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও মন্ত্রী।
- এডভোকেট শাহাদাত হোসেন চৌধুরী –– প্রাক্তন সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান।
- এম এ মতিন –– রাজনীতিবিদ।
- ডাঃ কিউ এম ইসহাক (১৯৩৫-২০০৬) –– আনোয়ারা উপজেলার প্রথম এমবিবিএস ডাক্তার।
- সরওয়ার জামাল নিজাম –– রাজনীতিবিদ।
- সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ –– রাজনীতিবিদ।
জনপ্রতিনিধি
- সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[10] | সংসদ সদস্য[11][12][13][14][15] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৯০ চট্টগ্রাম-১৩ | কর্ণফুলি উপজেলা এবং আনোয়ারা উপজেলা | সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
- উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
ক্রম নং | পদবী | নাম |
---|---|---|
০১ | উপজেলা চেয়ারম্যান[16] | তৌহিদুল হক চৌধুরী |
০২ | ভাইস চেয়ারম্যান[17] | মৃণাল কান্তি ধর |
০৩ | মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান[18] | মরিয়ম বেগম |
০৪ | উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা[19] | গৌতম বাড়ৈ |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (PDF)। ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৫।
- "আনোয়ারা উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org।
- "এক নজরে আনোয়ারা - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "আনোয়ারা উপজেলার পটভূমি - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "ইউনিয়নসমূহ - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "National Reports Union Statistics" (PDF)। web.archive.org। Wayback Machine। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯।
- "হাট বাজারের তালিকা - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "দর্শনীয়স্থান - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (PDF)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "জনাব তৌহিদুল হক চৌধুরী - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান - আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
- "- আনোয়ারা উপজেলা - আনোয়ারা উপজেলা"। www.anwara.chittagong.gov.bd।
বহিঃসংযোগ
উইকিভ্রমণে আনোয়ারা উপজেলা সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |