লোহাগাড়া উপজেলা
লোহাগাড়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার আওতাধীন একটি উপজেলা।
লোহাগাড়া | |
---|---|
উপজেলা | |
![]() চুনতি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য | |
![]() ![]() লোহাগাড়া | |
স্থানাঙ্ক: ২২°০′১৫″ উত্তর ৯২°৬′২০″ পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | চট্টগ্রাম জেলা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৮১ |
সংসদীয় আসন | ২৯২ চট্টগ্রাম-১৫ |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ২৫৮.৮৭ কিমি২ (৯৯.৯৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৭৯,৯১৩ |
• জনঘনত্ব | ১১০০/কিমি২ (২৮০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৪.৬% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৪৩৯৬ ![]() |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ১৫ ৪৭ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
আয়তন ও অবস্থান
লোহাগাড়া উপজেলার মোট আয়তন ২৫৮.৮৭ বর্গ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে ২১°৫৪´ থেকে ২২°০৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০০´ থেকে ৯২°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে এ উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলার উত্তরে সাতকানিয়া উপজেলা, পশ্চিমে বাঁশখালী উপজেলা, দক্ষিণে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা ও বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা এবং পূর্বে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা ও বান্দরবান সদর উপজেলা অবস্থিত।[2]
নামকরণ
লোকমুখে প্রচলিত আছে, ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল শাহজাদা শাহ সুজা মীর জুমলার তাড়া খেয়ে আরাকান রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আরাকান যাওয়ার পথে তিনি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মাঝামাঝি ছায়াঘেরা টিলাসমেত একটি জায়গায় (বর্তমান চুনতি গ্রাম) কিছুদিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময় চিহ্নস্বরূপ একটি লোহার খুঁটি গেঁড়ে দিয়ে যান। স্থানটিতে লোহার খুঁটি গাঁড়ার কারণে লোহাগাড়া নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
প্রশাসনিক এলাকা
লোহাগাড়া এক সময় সাতকানিয়া উপজেলার অধীনে ছিল। ১৯৮১ সালে লোহাগাড়া থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।[2]
লোহাগাড়া উপজেলায় মোট ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ লোহাগাড়া উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম লোহাগাড়া থানার আওতাধীন।
জনসংখ্যার উপাত্ত
২০০১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী লোহাগাড়া উপজেলার লোকসংখ্যা ২,৬৬,৭৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৩৪,০৯৪ জন এবং মহিলা ১,৩২,৬৪৭ জন। মোট জনসংখ্যার ৮৯% মুসলিম, ৯% হিন্দু এবং ২% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[2]
শিক্ষা
লোহাগাড়া উপজেলার সাক্ষরতার হার ৪৪.৬%।[2] এ উপজেলায় ১টি কামিল মাদ্রাসা, ৩টি ডিগ্রী কলেজ (২টিতে অনার্স কোর্স সহ), ৯টি ফাজিল মাদ্রাসা, ১টি টেকনিক্যাল কলেজ, ১টি স্কুল এন্ড কলেজ, ১টি আলিম মাদ্রাসা, ২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৮টি দাখিল মাদ্রাসা, ২টি কওমী মাদ্রাসা, ১০টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৩টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও ৩০টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
স্বাস্থ্য
লোহাগাড়া উপজেলায় ১টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫টি পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।[2]
অর্থনীতি
লোহাগাড়া উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষিখাত। এছাড়া শিল্প, ব্যবসা, চাকরি, নির্মাণ, ধর্মীয় সেবা, পরিবহন ও যোগাযোগ, বৈদেশিক রেমিটেন্স সহ বিভিন্ন খাত থেকে এ উপজেলার লোকেরা উপার্জন করে থাকে।[2]

যোগাযোগ ব্যবস্থা
লোহাগাড় উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। এছাড়া উপজেলার অভ্যন্তরে ৫৯.৮৯ কিলোমিটার পাকারাস্তা, ১৫৩.৬৫ কিলোমিটার আধা-পাকারাস্তা ও ৮৬০.৩১ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা রয়েছে।[2]
নদ-নদী
লোহাগাড়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান ২টি নদী হল টংকাবতী নদী ও ডলু নদী। এছাড়া অন্যান্য খালগুলোর মধ্যে হাঙ্গর খাল, হাতিয়ার খাল, রাতার খাল, বোয়ালিয়া খাল উল্লেখযোগ্য।[2]
হাট-বাজার ও মেলা
লোহাগাড়া উপজেলায় ১৭টি হাট-বাজার রয়েছে এবং বাৎসরিক ৩টি মেলা বসে। হাট-বাজারগুলোর মধ্যে দরবেশ হাট, তেওয়ারি হাট, খাঁ’র হাট, হিন্দুর হাট, সেনের হাট, মনুফকির হাট উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী
১৯৭১ সালে পাকসেনারা এ উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। আমিরাবাদ বণিক পাড়ায় ১৫ জন গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। রাজাকাররা চুনতি ডেপুটি বাজারের হিন্দু পাড়া থেকে ১২ জনকে চন্দনাইশ থানার দোহাজারীতে নিয়ে হত্যা করে। জোটপুকুরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ জন রাজাকারকে হত্যা করে।[2]
- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
- গণকবর: জোটপুকুরিয়া (পুটিবিলা)[2]
দর্শনীয় স্থান

- পার্ক, বিনোদন ও প্রাকৃতিক স্থান
- গৌড়স্থানের প্রকৃতি
- চুনতি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
- পদুয়া ফরেস্ট এলাকা
- বুলবুল ললিত কলা একাডেমী
- নাসিম পার্ক
- স্মৃতিসৌধ ও স্মারক
- উপজেলা স্মৃতিসৌধ
- আধুনিক স্থাপত্য
- কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
- প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ
- মছদিয়া বৌদ্ধ মন্দির (আধুনগর, আঠারো শতক)
- চেঁদিরপুনি বৌদ্ধ মন্দির ও রাজস্থাপত্য
- গুপ্ত জমিদার বাড়ি (পদুয়া)
- আধুনগর বৌদ্ধ মন্দির
- মগদীঘি মগদেশ্বরী মন্দির
- মল্লিক ছোবহান মোহাম্মদ খান নায়েব উজির জামে মসজিদ
- চুনতি খান মসজিদ,
- আধুনগর সংস্কারকৃত খাঁ’র মসজিদ
- সাতগড় মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হোসাইনী (রহ.) প্রকাশ বুড়ো মাওলানার মাজার
- হযরত শাহপীর (রহ.) এর মাজার (দরবেশহাট)
- চুনতি হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ সাহেব (রহ.) এর মাজার
- পদুয়া পেঠান শাহ (রহ.) এর মাজার
- চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসা
- বড়হাতিয়া মগদীঘি,
- গৌড় সাম্রাজ্যের পুকুর (গৌড়স্থান, পুটিবিলা)
- পুটিবিলা কংসনালা দীঘি,
- লোহাগাড়ার লোহার দীঘির পাড়
- পূর্ব কলাউজানের গাব গাছ (প্রায় ৪শ বছরের অধিক বয়সী)
- আধুনগর ও চুনতিরসংযোগ স্থলে অবস্থিত কাজীর ডেবা ও উজির ডেবা
- চুনতি হাজী রাস্তার ঐতিহাসিক রাফিয়া মুড়া, (প্রকাশ রইক্ষা মুড়া)
- আমিরাবাদস্থ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হযরত শাহ সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.)’র তোরণ,
- চুনতি বড় মিয়াজী ও ছোট মিয়াজি মসজিদ
- পদুয়া বাজারের পূর্ব পাশে জমিদার বাড়ি এবং পদুয়ার ঠাকুর দীঘি
- জঙ্গল বড়হাতিয়া গ্যাসফিল্ড
- কুমিরাঘোনা আখতারাবাদ বায়তুশ শরফ
কৃতী ব্যক্তিত্ব
- আহমদুর রহমান চৌধুরী –– ডিস্ট্রিক্ট এডজুটেন্ট, বাংলাদেশ আনসার।
- কাফি কামাল –– কবি, গল্পকার ও সাংবাদিক।
- ডাঃ আনিসুর রহমান চৌধুরী –– প্রখ্যাত সমাজসেবক ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নজুমন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
- নওয়াজিশ খান –– মধ্যযুগের কবি।
- নকীব খান –– গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পী।
- বুলবুল চৌধুরী –– নৃত্যশিল্পী।
- মাহমুদুর রহমান চৌধুরী –– দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা উপদেষ্টা, ইউনাইটেড নেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (UNDP), জাতিসংঘ।
- মিয়া মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন (বাচ্চু) –– প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব।
- মোস্তাক আহমদ চৌধুরী –– প্রাক্তন সংসদ সদস্য।
- শহীদ মেজর নাজমুল হক –– সেক্টর কমান্ডার, ৭নং সেক্টর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।
- স. উ. ম. আবদুস সামাদ –– রাজনীতিবিদ।
- হযরত মাওলানা হাফেজ আহমদ শাহ সাহেব –– ইসলামী ব্যক্তিত্ব।
- আজিজুর রহমান চৌধুরী–- বিশিষ্ট ব্যাংকার। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এ সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন। বিশেষ অবদান ও সততার জন্য কৃষি ব্যাংক কর্তৃক মরণোত্তর দশকের সেরা ব্যাংকার স্বীকৃতি লাভ করেন। ছমুদিয়া মাদ্রাসা ও লোহাগাড়া মাদ্রাসার উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
জনপ্রতিনিধি
- সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[3] | সংসদ সদস্য[4][5][6][7][8] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
২৯২ চট্টগ্রাম-১৫ | সাতকানিয়া উপজেলার চরতী, নলুয়া, কাঞ্চনা, আমিলাইশ, এওচিয়া, মাদার্শা, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, ছদাহা, সাতকানিয়া ও সোনাকানিয়া ইউনিয়ন এবং লোহাগাড়া উপজেলা | আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
- উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন
ক্রম নং | পদবী | নাম |
---|---|---|
০১ | উপজেলা চেয়ারম্যান[9] | এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান |
০২ | ভাইস চেয়ারম্যান[10] | নূরুল আবছার |
০৩ | মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান[11] | গোলশান আরা বেগম |
০৪ | উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা[12] | মোহাম্মদ ফিজনূর রহমান |
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
- http://203.112.218.66/WebTestApplication/userfiles/Image/Census2011/Chittagong/Chittagong/Chittagong%20at%20a%20glance.pdf
- "লোহাগাড়া উপজেলা (চট্টগ্রাম) - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org।
- "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (PDF)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- "এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান - লোহাগাড়া উপজেলা - লোহাগাড়া উপজেলা"। lohagara.chittagong.gov.bd।
- "নূরুল আবছার - লোহাগাড়া উপজেলা - লোহাগাড়া উপজেলা"। lohagara.chittagong.gov.bd।
- "গোলশান আরা বেগম - লোহাগাড়া উপজেলা - লোহাগাড়া উপজেলা"। lohagara.chittagong.gov.bd।
- "মোহাম্মদ ফিজনূর রহমান - লোহাগাড়া উপজেলা - লোহাগাড়া উপজেলা"। lohagara.chittagong.gov.bd।
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিভ্রমণে লোহাগাড়া উপজেলা সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |