কক্সবাজার সদর উপজেলা

কক্সবাজার সদর উপজেলার আয়তন ২২৮.২৩ বর্গ কিলোমিটার।[1]

কক্সবাজার জেলার মধ্যাংশে ২১°২৪´ থেকে ২১°৩৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৯´ থেকে ৯২°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার অবস্থান।[2] এ উপজেলাতেই কক্সবাজার জেলা সদর অবস্থিত। এ উপজেলার দক্ষিণে ও পূর্বে রামু উপজেলা, উত্তরে চকরিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে মহেশখালী উপজেলা ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।

কক্সবাজার নামটি এসেছে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসারের নাম থেকে। কক্সবাজারের পূর্বনাম ছিল পালংকি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাংলার গভর্নর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তখন হিরাম কক্স পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান হাজার বছরেরও পুরানো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধন করেন, কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই তিনি ১৭৯৯ সালে মারা যান। তাঁর পূর্নবাসন অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং এর নাম দেয়া হয় কক্স সাহেবের বাজার।[3]

১৮৫৪ সালে কক্সবাজার থানা এবং ১৯৫৯ সালে টাউন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭২ সালে টাউন কমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৯৮৯ সালে পৌরসভাকে সি গ্রেড থেকে বি গ্রেডে উন্নীত করা হয়। কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কক্সবাজার সদর মডেল থানার আওতাধীন ছিল। তবে ২০১৯ সালের ২১শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) এর বৈঠকে ৪টি ইউনিয়নকে নিয়ে ঈদগাঁও থানা গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়।[4]

বর্তমানে ঈদগাঁও থানার আওতাধীন ৫টি ইউনিয়ন।[5]

ইউনিয়নসমূহ:

• ১নং ইসলামপুর
• ২নং পোকখালী
• ৩নং ইসলামাবাদ
• ৪নং ঈদগাঁও
• ৫নং জালালাবাদ

এবং কক্সবাজার সদর মডেল থানার আওতাধীন ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন।[6]

পৌরসভা:

• কক্সবাজার

ইউনিয়নসমূহ:

• ৬নং চৌফলদণ্ডী
• ৭নং ভারুয়াখালী
• ৮নং পাটালি মাছুয়াখালী
• ৯নং খুরুশকুল
• ১০নং ঝিলংজা

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কক্সবাজার সদর উপজেলার জনসংখ্যা ৫,২২,৪৩৫ জন, এর মধ্যে পুরুষ ২,৭৪,৯৮৩ জন এবং মহিলা ২,৪৭,৪৫২ জন। বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৭৬%।[1] মোট জনসংখ্যার ৯০% মুসলিম, ৭% হিন্দু, ৩% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে।[2]

কক্সবাজার সদর উপজেলার সাক্ষরতার হার ৫৪.৬৮%।[2] এ উপজেলায় ২টি সরকারি সহ মোট ৬টি কলেজ, ৩টি কামিল মাদ্রাসা, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ৩টি আলিম মাদ্রাসা, ৩টি সরকারি সহ মোট ২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২১টি দাখিল মাদ্রাসা, ২১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[1]

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

কক্সবাজার সদর উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে আকাশপথেও যোগাযোগ করা যায়।[7]

কক্সবাজার সদর উপজেলার অর্থনৈতিক উৎসসমূহের মধ্যে মৎস্য, চিংড়ি, লবণ, শুটকি, কাঁকড়া, হস্তশিল্প, খনিজ বালি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এটি পর্যটন নগরী হওয়ায় কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প এ উপজেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে।[8]

কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৪৩৫টি মসজিদ, ২৫টি মন্দির, ১৭টি বিহার ও ৫টি গির্জা রয়েছে।[1][2]

কক্সবাজার সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে বাঁকখালী নদী ও ঈদগাঁও নদী।[1][9]

কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১৪টি হাট-বাজার রয়েছে।[1] এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ কাঁচা বাজার, লিংকরোড বাজার, খরুলিয়া বাজার, ঈদগাঁও বাজার, চৌফলদণ্ডী বাজার, পোকখালী মুসলিম বাজার, ভারুয়াখালী বাজার, খুরুশকুল টাইম বাজার, জুমছড়ি চেরাংঘর বাজার উল্লেখযোগ্য।[10]

• কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত)
• কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
• কক্সবাজার বিমানবন্দর
• শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, কক্সবাজার
• রাডারস্টেশন (হিলটপ সার্কিট হাউজ সংলগ্ন)
• শাল, সেগুন, মেহগনি, গর্জন, রাবারসহ নানা প্রকৃতির উদ্ভিদ ও দুষ্প্রাপ্য অর্কিড
• কক্সবাজার বৌদ্ধ বিহার
• অগ্বমেধা বৌদ্ধ বিহার
• ঝিলংজা ইউনিয়নে দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ
• মাহাসিংদোগ্রী বৌদ্ধ মন্দির
• মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বাজার
• রাখাইন পাড়া
• চৌফলদণ্ডী-খুরুশকুল সংযোগ সেতু
• ডুলাফকির মাজার
• চিংড়ি রপ্তানি জোন
• লবণ রপ্তানি জোন
• বার্মিজ মার্কেট

[2][11]

কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় দেশী বিদেশী পর্যটকদের আবাসনের সুবিধার্থে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল দি কক্স টুডে, সীগ্যাল হোটেল উল্লেখযোগ্য।[12]

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী শহরের পুরাতন রেস্ট হাউসের পেছনে প্রবীণ আইনজীবী জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরীসহ কিছুসংখ্যক লোককে হত্যা করে এবং বদর মোকাম এলাকায় দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে।[2]

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন

• স্মৃতিস্তম্ভ: ১টি (শহরের পুরাতন রেস্ট হাউজের পেছনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত)।[2]

• মুহাম্মদ নরুল হুদা; কবি।
• হযরত নুরুল হক শাহ (র.) ডুলা ফকির; তাপস।
• নুরুল হক; বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
• কামাল হোসেন চৌধুরী; বীর মুক্তিযোদ্ধা।
• ওস্তাদ আবু বক্কর; সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
• আলহাজ্ব এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ; কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
• এডভোকেট খালেকুজ্জামান; সাবেক সংসদ সদস্য, কক্সবাজার-২ আসন।
• মোস্তাক আহমদ চৌধুরী; রাজনীতিবিদ।[13]

সংসদীয় আসন

উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন

• কক্সবাজার জেলা

• বাংলাপিডিয়ায় কক্সবাজার সদর উপজেলা

উইকিভ্রমণে কক্সবাজার সদর উপজেলা সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে।