হায়দার আলী

হায়দার আলী (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

হায়দার আলী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

হায়দার আলীর জন্ম ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার শ্রীপুর মাইজহাটি গ্রামে। তার বাবার নাম জবেদ আলী ফকির এবং মায়ের নাম হাজেরা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম উম্মে কুলসুম। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। [2]

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে ইপিআরে চাকরি করতেন হায়দার আলী। কর্মরত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা বিওপিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। পরে ভারতে যান। সেখানে তাকে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি ৩ নম্বর সেক্টর ও এস ব্রিগেডের অধীনে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিডিআরে চাকরি করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের, আগস্টের মাঝামাঝি, সিলেটের তেলিয়াপাড়ায় একটি চা-বাগানে শেষ রাতের দিকে নিস্তব্ধ চা-বাগানের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প হায়দার আলীসহ পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ঘুমিয়ে ছিলেন। কয়েকজন সহযোদ্ধা সতর্ক প্রহরায় ছিলেন। এমন সময় গোলাগুলির শব্দে ভেঙে পড়ল রাতের নিস্তব্ধতা। মুক্তিযোদ্ধারা জেগে যান। জানতে পারলেন, পাকিস্তানি সেনারা পেছন দিক থেকে তাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করেছে। আকস্মিক এই আক্রমণে তারা কিছুটা হতচকিত হলেও সেটি নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। যে যেভাবে পারলেন দ্রুত পজিশন নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধে গোলাগুলি শুরু করলেন। মুহূর্তেই শুরু হয়ে গেল তুমুল যুদ্ধ। হায়দার আলীসহ তার সহযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেও ব্যর্থ হলেন। এক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ক্যাম্প পাকিস্তানি সেনারা দখল করে ফেলল। শহীদ হলেন তার প্রায় ১৬ জন সহযোদ্ধা। মোবারক আলী নামে এক সহযোদ্ধা তার চোখের সামনেই শহীদ হলেন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য তাদেরকে অধিনায়ক পশ্চাদপসরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থানের ওপর বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করছিল। তারা কভারিং ফায়ারের আড়ালে পেছনে যাচ্ছিলেন। কেউ ক্রলিং করে, কেউ মাথা নিচু করে দৌড়ে। সহযোদ্ধা মোবারক আলী দৌড়ে যাচ্ছেন, এমন সময় তার পিঠের ওপর একটি গোলা এসে পড়ে। নিরাপদ স্থানে সমবেত হওয়ার পর অধিনায়ক তাদের যেকোনো মূল্যে ওই ক্যাম্প দখল করতে বলেন। পরদিন হায়দার আলীরা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। ভোর চারটায় তারা পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করলে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারাও তীব্রভাবে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছিল। একটি টিলার ওপর ছিল পাকিস্তানি সেনাদের মেশিনগান পোস্ট। তারা সেখান থেকে বৃষ্টির মতো গুলি করছিল। এর জন্য মুক্তিযোদ্ধারা সামনে এগোতে পারছিলেন না। তখন হায়দার আলী মৃত্যুভয় ঝেরে ফেলে পাহাড়ি নালার মধ্য দিয়ে ক্রলিং করে একাই এগিয়ে যান সেদিকে। পাকিস্তানি সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি সেই মেশিনগান পোস্টে দুটি গ্রেনেড চার্জ করেন। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে গুলি বন্ধ হয়ে গেল। শুধু আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসছিল। পরে সেই আর্তনাদের শব্দও আর শোনা যাচ্ছিল না। তখন হায়দার আলী ক্রলিং করে কাছে গিয়ে দেখেন, চার পাকিস্তানি সেনা আহত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি এসএমজি ব্রাশফায়ারে তাদের হত্যা করেন। মেশিনগান পোস্ট ধ্বংস হওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৪-০৭-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.