মহসীন উদ্দীন আহমেদ

মহসীন উদ্দীন আহমেদ (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

মহসীন উদ্দীন আহমেদ
মৃত্যু২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মহসীন উদ্দীন আহমেদের জন্ম মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দামলা গ্রামে। তার বাবার নাম মহিউদ্দীন আহমেদ এবং মায়ের নাম বেগম নুরুন্নাহার। তার স্ত্রীর নাম হোসনে আরা। তাঁদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। [2]

কর্মজীবন

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন মহসীন উদ্দীন আহমেদ। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে দেন। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে যান। সেখানে তাকে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়ে যথেষ্ট রণকৌশল প্রদর্শন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর ভোরে সিলেট জেলার অন্তর্গত টেংরাটিলার পাশে ছাতকে থাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানে হামলা চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। ছাতকের ঠিক উত্তরে সীমান্ত ঘেঁষে বাঁশতলায় ছিল মুক্তিবাহিনীর ৫ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার। ওই সেক্টরের শেলা সাব-সেক্টরের হেডকোয়ার্টারও ছিল সেখানে। ১২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর প্রধান এম এ জি ওসমানী বাঁশতলা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। তিনি যেদিন বাঁশতলায় যান, তার এক দিন আগে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারতের তেলঢালা ক্যাম্প থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে আসে। কর্নেল ওসমানী তাদের ছাতকে আক্রমণের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশ পেয়ে প্রয়োজনীয় রেকি ও পরিকল্পনা ছাড়াই তারা আক্রমণ করেন। মূল আক্রমণকারী দল হিসেবে থাকে আলফা ও ব্রাভো কোম্পানি। আক্রমণের সময় দোয়ারাবাজার হয়ে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ধরে যাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কোনো রি-এনফোর্সমেন্ট না আসতে পারে, সে জন্য টেংরাটিলায় অবস্থান নিয়ে চার্লি কোম্পানিকে কাট অব পার্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। এই কোম্পানির অধিনায়ক ছিলেন মহসীন উদ্দীন আহমেদ। ১৩ অক্টোবর রাতে বাঁশতলা ক্যাম্প থেকে রওনা হন মুক্তিযোদ্ধারা। শেলা সাব-সেক্টরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেদিন সকাল পর্যন্ত টেংরাটিলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ছিল না। মুক্তিযোদ্ধারা ভোরে টেংরাটিলায় যাওয়া মাত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েন। তারা সব কয়টি নৌকার ওপর একযোগে গুলি করতে থাকে। এমন পরিস্থিতির জন্য মহসীন উদ্দীন আহমেদ ও তার দলের মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত ছিলেন না। গভীর পানি আর হুড়োহুড়িতে বেশির ভাগ নৌকা ডুবে যায়। অনেক মুক্তিযোদ্ধা সাঁতার জানতেন না। পাল্টা যুদ্ধের বদলে প্রাণ বাঁচানোই তাঁদের জন্য মুখ্য হয়ে পড়ে। যাঁরা সাঁতার জানতেন, তাঁদের অনেকে অস্ত্র ফেলে সাঁতরে নিরাপদ স্থানে যেতে থাকেন। চরম প্রতিকূলতার মধ্যে মহসীন উদ্দীন আহমেদ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে পানির ভেতর থেকেই পাকিস্তানিদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন। তার সাহসিকতায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ বেঁচে যায়। সেদিন মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২৫-২৬ জন আহত হন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-১২-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.