রমিজ উদ্দীন

শহীদ রমিজ উদ্দীন (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

শহিদ রমিজ উদ্দীন বীরবিক্রম
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম
দাম্পত্য সঙ্গীজোবেদা খাতুন
সন্তান

স্মৃতি সংরক্ষণ

রমিজ উদ্দীনের স্মৃতি সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান পালন করার জন্য ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান(বীর প্রতীক) রাজধানী ঢাকার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে তার নাম অনুসারে "শহীদ বীর বিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ" স্থাপন করেন। অত্র কলেজটি "ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, ঢাকা" এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। কলেজটিতে বর্তমানে ১ম ও ২য় বর্ষে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগে মোট ২০০০ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ রমিজ উদ্দীনের জন্ম হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। তার বাবার নাম পানাউল্যাহ এবং মায়ের নাম হাজেরা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জোবেদা খাতুন। তার এক ছেলে। [2]

কর্মজীবন

১৯৭১ সালে কৃষিকাজ করতেন রমিজ উদ্দীন। তবে তার মুজাহিদ ট্রেনিং নেওয়া ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে তিনি সংযুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। তখন তার স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার বছর খানেক আগে তিনি বিয়ে করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১৬ মে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার অন্তর্গত বালুমারা ফরেস্ট এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। হবিগঞ্জ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বা ২ মে শায়েস্তাগঞ্জের খোয়াই নদীর তীরে রেললাইনের পাশে একটি ক্যাম্প স্থাপন করার পরও বালুমারা ফরেস্ট অফিসসহ আশপাশের কিছু এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে ছিল। ফরেস্ট অফিসে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের এলাকা। এদিকে পাকিস্তানি সেনারা বালুমারা এলাকায় তখনো আক্রমণ না চালালেও মুক্ত এলাকার তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। মুক্ত এলাকায় নিয়মিত চর পাঠাতে থাকে। পাকিস্তানিদের এক সহযোগীর নাম ছিল তমাই মহালদার। সে মুক্ত এলাকায় গোপনে এসে তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানিদের কাছে পৌঁছে দিত। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে একদিন আটক করে এবং প্রাণদণ্ড দেয়। মুক্ত এলাকায় ছিলেন রমিজ উদ্দীনসহ ২২ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে মুক্ত এলাকার সীমান্তে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়ে থাকতেন। মুক্ত এলাকার সীমান্তে টহল দিচ্ছেন রমিজ উদ্দীনসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা। হঠাৎ তাঁদের আক্রমণ করল একদল পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধারা দেখলেন, পাকিস্তানি সেনারা তাঁদের চারদিক থেকে ঘেরাও করছে। রমিজ উদ্দীন বিচলিত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকলেন। তার মাথায় তখন শুধু একটাই চিন্তা, সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে হবে। কিন্তু বেশিক্ষণ লড়াই করতে পারলেন না। শত শত গুলি ছুটে আসছে তার দিকে। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল তার শরীর। সেদিন রমিজ উদ্দীন দুজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে মুক্ত এলাকার যে স্থানে টহলে ছিলেন, সেই স্থান দিয়ে পাকিস্তানি সেনারা প্রবেশ করে তাঁদের ঘেরাও করে। আকস্মিক অ্যামবুশে পড়ে রমিজ উদ্দীনের দুই সহযোদ্ধা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তারা পশ্চাদপসরণের চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু রমিজ উদ্দীন বিচলিত না হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন। তিনি একাই লড়াই করে দুই সহযোদ্ধা ও পেছনে মূল শিবিরে থাকা সহযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণ করার সুযোগ করে দেন। তার সাহসিকতা ও বীরত্বে রক্ষা পায় ২১ জন সহযোদ্ধার প্রাণ। কিন্তু তিনি পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৯-০১-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩০২। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ২৩১। আইএসবিএন 9789843338884।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.