আবদুল খালেক (বীর বিক্রম)
আবদুল খালেক (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]
আবদুল খালেক | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
আবদুল খালেকের পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাঁপাল গ্রামে। তার বাবার নাম কামির উদ্দীন মণ্ডল এবং মায়ের নাম গোলজান বিবি। তার স্ত্রীর মাসুরা খাতুন। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।
কর্মজীবন
আবদুল খালেক ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন সিম্যান হিসেবে। ১৯৬৯ সালে বাবার ইচ্ছায় স্বেচ্ছা অবসর নেন এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
আবদুল খালেক বিদিরপুর সেতু, হরিপুর সেতু, অভয়া সেতু অপারেশনসহ আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অপারেশন করেন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষে গিয়াসউদ্দিন আহমদ চৌধুরী (বীর বিক্রম) আবদুল খালেককে ডেকে বললেন, তোমাকে একটি অপারেশনে যেতে হবে। তার কথামতো আবদুল খালেক নিয়মিত বাহিনী এমএফের সদস্য দিলদার, হাকিম, রাজ্জাক, রেন্টু এবং এফএফের (গণবাহিনী) নূর হামিম রিজভী (বীর প্রতীক), দাউদ, নজরুলসহ আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর লালগোলা থেকে আখরিগঞ্জ যান। সেখানে এ দলের সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ দেন। বাংলাদেশের ভেতরে এসে আদিবাসী পল্লির এক বাড়িতে আশ্রয় নেয় এ মুক্তিযোদ্ধারা। রেকির তথ্য পাওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর অপারেশন করার জন্য বের হন। যাওয়া ও ফেরত আসার একমাত্র পথের এক স্থানে সিরাজুল চেয়ারম্যানের বাড়ি ছিল রাজাকার ক্যাম্প। রাজাকাররা যাতে পাল্টা আক্রমণ করতে না পারে, সে জন্য ওই বাড়ির অদূরে ছয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাহারায় রেখে যাওয়া হয়। সে রাতেই বৃষ্টি হয়। বৃষ্ঠি শেষে চাঁদের আলোয় রাজাকাররা সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে ফেলে এবং গুলি শুরু করে। এর মধ্যে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধারা প্রেমতলি হাসপাতাল পার হয়ে সেতুর কাছে পৌঁছে যায়। রাজাকাররা গুলি শুরুর পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রেমতলি ক্যাম্প থেকে দুটি গাড়ির একটি কলেজের সামনে, অপরটি ইব্রাহিম শাহর বাড়ির কাছ অবস্থান নিয়ে গোলাগুলি শুরু করে। পাকিস্তানিদের কাছাকাছি আরও দুটি অবস্থান থেকেও গুলি শুরু হয়। চারদিক থেকে ফায়ার শুরু হওয়ার পর আবদুল খালেক সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানেই অ্যাম্বুশ করেন; যদি পাকিস্তানি গাড়ি আসে, এ আশায়। কারণ, আবদুল খালেক বিল ও নদী পার হতে পারেননি। পার না হয়ে সরাসরি আক্রমণ করাও সম্ভব ছিল না। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও পাকিস্তানিরা আসেনি। এরপর আবদুল খালেকসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধারা পেছনে রওনা দেন। এ দলের কাছে যোগাযোগ-যন্ত্র (ওয়্যারলেস) ছিল না। ফলে পেছনে রাজাকার ক্যাম্পের কাছে থাকা সহযোদ্ধারা কী অবস্থায় আছেন, তা জানতে জানা যেমন সম্ভব হয়নি তেমনি তারাও এ দলের অবস্থা জানতে পারেননি। গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর তাদের আরও পেছনে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার খবর জানতেন না আবদুল খালেক এবং তার সহযোদ্ধারা। চেয়ারম্যান বাড়ির দক্ষিণে পুকুরপাড়ে যাওয়া মাত্র রাজাকাররা এ দলটিকে দেখে ফেলে এবং গুলি শুরু করে। সহযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দেন আবদুল খালেক। তবে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে আমরা সুবিধা হচ্ছিল না। কারণ, এলিভেট করলে গুলি ওপর দিকে যাচ্ছিল, আবার ডিপ্রেস করলে দেয়ালে লাগছিল। এমন অবস্থায় আবদুল খালেক নিজেই ছাদে গ্রেনেড চার্জ করার কথা ভাবেন। কিন্তু কেউ তা করতে রাজি না হওয়ায় তিনি নিজেই তা করার সিদ্ধান্ত নেন। জয়নাল নামে একজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি রওনা দেন। একপর্যায়ে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন জয়নাল। আবদুল খালেক ভেবেছিলেন তার গুলি লেগেছে। তখন তিনি তার কাছে যাই। দেখেন তার কিছু হয়নি। এ সময় আরও কিছু ঘটনা ঘটে এবং জয়নাল হঠাৎ তার এসএলআর দিয়ে গুলি করেন। তখন রাজাকাররা পাল্টা গুলি চালায়। একটি গুলি আবদুল খালেকের বুকে লাগে।’ [2]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৭-১১-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৭৭। আইএসবিএন 9789849025375।