জনাব আলী

জনাব আলী (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৮৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]

জনাব আলী
জন্ম
নোয়াবাদী।
মৃত্যু১৯৮৪
নোয়াবাদী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম
উত্তরসূরীছেলে:- ইকতিয়ার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন এবং আনোয়ার হোসেন। মেয়ে:- মোছা:মাহমুদা আক্তার।জাহানারা বেগম এবং হোসনে আরা আখতার।
দাম্পত্য সঙ্গীসাজেদা মাহমুদা
সন্তান

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

জনাব আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার মিরাসানির নোয়াবাদী গ্রামে।তার বাবার নাম মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম দুধরাজ বিবি। তার স্ত্রীর নাম সাজেদা মাহমুদা। তাদের তিন মেয়ে, তিন ছেলে। তার ছোট মেয়ের নাম মোছা: মাহমুদা আক্তার।বড় মেয়ের নাম জাহানরা বেগম,এবং মেজো মেয়ের নাম হোসনেয়ারা বেগম।

কর্মজীবন

জনাব আলী চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে মনতলায় অবস্থান নেন। মনতলার পতন হলে ভারতে পুনঃ সংগঠিত হওয়ার পর প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের পঞ্চবটি সাব-সেক্টরে, পরে এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। কয়েকটি যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে জনাব আলীসহ এক দল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন মনতলায়। হবিগঞ্জ জেলার তেলিয়াপাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের হাতছাড়া হওয়ার পর মনতলা মুক্তিবাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়। জুন মাসে ৩ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশের ভূমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বশেষ অবস্থান ছিল মনতলা কমপ্লেক্সে। এর দক্ষিণে মোহাব্বতপুর, উত্তরে তেলিয়াপাড়া, পশ্চিমে মাধবপুর আর পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমানা। তেলিয়াপাড়া দখল করার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বশক্তি নিয়োগ করে মনতলা দখলের জন্য। এখানে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দল। আখাউড়া-সিলেট রেলপথের দুই ধারে তারা মোতায়েন ছিলেন। জনাব আলীসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের (কোম্পানি) অবস্থান ছিল মনতলা রেলস্টেশনে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন এ এস এম নাসিম (বীর বিক্রম)। অপর দুই দলের একটি কাশিমপুর রেলস্টেশনে, আরেকটি হরষপুর রেলস্টেশন এলাকায় মোতায়েন ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৫ জুন প্রথম দূরপাল্লার গোলাবর্ষণের মাধ্যমে জনাব আলীদের অবস্থানে আক্রমণের সূচনা করে। এরপর কয়েক দিন সেখানে যুদ্ধ হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দুটি ব্যাটালিয়ন কৌশলে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে এগিয়ে যায়। তারা দিনের বেলায় দূর থেকে হালকা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে গোলাগুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যস্ত রাখত। রাতে ভারী মেশিনগানের গুলি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করত। এর ছত্রচ্ছায়ায় তারা ক্রমে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের নিকটবর্তী হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মাঝেমধ্যে এগিয়ে গিয়ে পাকিস্তানিদের বাধা দিতেন। কিন্তু এর মাধ্যমে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে পারেননি। ২০ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী দল জনাব আলীদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের একেবারে সামনে চলে আসে। একই সময় পাকিস্তানিদের অন্যান্য দলও বিভিন্ন দিক থেকে সেখানে এগিয়ে আসে। জনাব আলীরা বীরবিক্রমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন। কিন্তু একটানা কয়েক দিন যুদ্ধ করে তার বেশির ভাগ সহযোদ্ধা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান নাজুক হয়ে পড়ে। অসীম সাহসী জনাব আলী এতে দমে যাননি বা মনোবল হারাননি। সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। তার অদম্য মনোবলে ক্লান্তিতে ভেঙেপড়া অনেক সহযোদ্ধা উজ্জীবিত হয়ে আবার যুদ্ধ শুরু করেন। সেদিনও তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হন। পাকিস্তানিদের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। ২১ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল তিন দিক থেকে জনাব আলীদের অবস্থানে আক্রমণ চালায়। এদিন আক্রমণকারী পাকিস্তানি সেনা সংখ্যায় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েক গুণ। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। শেষে অধিনায়কের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেন। ওই দিন মনতলার পতন হয়। [2]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৩-০৮-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন, ১৯, কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ২০১৩। পৃষ্ঠা ১০৫। আইএসবিএন ৯৮৪-৯৮৪-৯০২৫৩-৭৫ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.