এস আই এম নূরুন্নবী খান

এস আই এম নূরুন্নবী খান (১৯৪২ – ২২ মে ২০১৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]

এস আই এম নূরুন্নবী খান
জন্ম১৯৪২
মৃত্যু২২ মে ২০১৯ (বয়স ৭৭)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

এস আই এম নূরুন্নবী খানের জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীধরপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম হাবীবউল্লাহ খান এবং মায়ের নাম শামছুন নাহার বেগম। তার দুই স্ত্রী। তাদের নাম জাকিয়া মাহমুদা ও সুলতানা নবী। তাদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে।[2] তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ছিলেন। এছাড়া, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন।

কর্মজীবন

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে চাকরি করতেন এস আই এম নূরুন্নবী খান। ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েটায় প্রশিক্ষণে ছিলেন। ২৭ মার্চ সেখান থেকে কৌশলে দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সঙ্গে ঢাকায় এসে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ভারতে যাওয়ার পর তিনি কিছুদিন এমএজি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেলটা কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। অসংখ্য যুদ্ধে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। এর মধ্যে বাহাদুরাবাদ, ছাতক, গোয়াইনঘাট, রাধানগর, ছোটখেল, সালুটিকর যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। অসাধারণ রণনৈপুণ্য ও সাহস প্রদর্শনের জন্য তখন তার নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকটি যুদ্ধে তিনি দলনায়ক হিসেবে অসম সাহস প্রদর্শন করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সিলেট জেলার অন্তর্গত সালুটিকরের অবস্থান ছিলো শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। নবাটিলার দক্ষিণ দিক ঘেঁষে বিমানঘাঁটি এলাকা। সালুটিকরে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত এক প্রতিরক্ষা অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী সেখানে আক্রমণ করে। কয়েক দিন ধরে যুদ্ধ হয়। ১২ ডিসেম্বরের যুদ্ধই ছিল চূড়ান্ত যুদ্ধ। সেদিন সকাল থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে আর্টিলারি আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিবাহিনীও তার পাল্টা জবাব দেয়। পরে পাকিস্তানি সেনারা মার্চ করে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের একদম কাছে আসতে থাকে তখন নূরুন্নবী খান কৌশলগত কারণে সহযোদ্ধাদের গোলাগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পাকিস্তানি সেনারা প্রথমে পাশের দাড়িকান্দি দখল করে নদীর তীরবর্তী চৌধুরীকান্দি ও কচুয়ারপাড় এলাকায় আসতে থাকে। কাছেই ছিল ফরেস্ট ডাকবাংলো। সেখানে একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন নূরুন্নবী খান। তার সঙ্গে ছিলেন মিত্রবাহিনীর কর্নেল রাজ সিং। পাকিস্তানি সেনারা তাদের অবস্থানের ২০০ গজের মধ্যে আসামাত্র রাজ সিং বারবার নূরুন্নবী খানকে অনুরোধ করেন গুলি শুরু করতে। দুঃসাহসী নূরুন্নবী খান তা না করে বলেন, শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হবে। পাকিস্তানি সেনারা এক সারিতে এগিয়ে আসতে থাকে। তারা ভেবেছিল, মুক্তিযোদ্ধারা পালিয়ে গেছে। ১০ গজের মধ্যে আসামাত্র নূরুন্নবী খান বলে ওঠেন, ‘হ্যান্ডস আপ।’ এতে পাকিস্তানি সেনারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। সামনে থাকা কয়েকজন সঙ্গে সঙ্গে আত্মসমর্পণ করে। পেছনে থাকা পাকিস্তানি সেনারা এদিক-সেদিক দৌড়ে যায়। তারপর শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত হয় বহু পাকিস্তানি সেনা। বন্দী হয় বেশ কয়েকজন। সন্ধ্যার মধ্যেই গোটা সালুটিকর এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। [3]

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জীবন

দেশ স্বাধীনের পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের রয়েল মিলিটারি সায়েন্স কলেজে অধ্যয়ন করেন ও পরমাণু প্রকৌশলে ডিগ্রি লাভ করে। ১৯৮০ সালে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে ও তাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এরপর, তিনি মুক্তিযুদ্ধের বই প্রকাশের জন্য কলম্বীয়া প্রকাশনী গড়ে তোলেন। তিনি জীবনের যুদ্ধ যুদ্ধের জীবন, রৌমারী রণাঙ্গন, অপারেশন বাহাদুরাবাদ, অপারেশন রাধানগর, অপারেশন সালুটিকর সহ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মোট বারোটি গ্রন্থ রচনা করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

মৃত্যু

এস আই এম নূরুন্নবী খান ২০১৯ সালের ২২ মে ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।.[4][5]

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-১২-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১২২। আইএসবিএন 9789843338884।
  4. "বীরবিক্রম নূরুন্নবীর নীরব প্রয়াণ"দেশ রূপান্তর। ২৬ মে ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৯
  5. "বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল নূরুন্নবীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য"সমকাল। ২৮ মে ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৯

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.