আবদুর রকিব মিয়া
শহীদ আবদুর রকিব মিয়া (জন্ম: ১৯৩০ - মৃত্যু: ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[1]
আবদুর রকিব মিয়া | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১৯৩০ |
মৃত্যু | ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
আবদুর রকিব মিয়ার জন্ম টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার শোলাপ্রতিমা গ্রামে। তার বাবার নাম হাতেম আলী মুন্সি এবং মায়ের নাম হালিমা বেগম। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। আবদুর রকিব মিয়া অবিবাহিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকে মা-বাবার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। [2]
কর্মজীবন
পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন আবদুর রকিব মিয়া। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সে সাবমেরিনার হিসেবে প্রশিক্ষণরত ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। ফুলছড়িঘাট অপারেশনই ছিল তার প্রথম ও শেষ অভিযান। অক্টোবর মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত আবদুর রকিব মিয়া ভারতের ক্যাম্পে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সক্রিয় যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য আটজন নৌকমান্ডোকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য ফুলছড়িঘাটে অবস্থানরত রসদবহনকারী জাহাজে মাইন লাগিয়ে ধ্বংস করা।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালে গাইবান্ধা জেলার অন্তর্গত ফুলছড়ি রেলঘাট ছিলো ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বগুড়া-গাইবান্ধা রেললাইনের একটি শাখা ফুলছড়িঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। নদীর অপর পাড়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট। মাঝে যমুনা নদী। তখন যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে দেশের পূর্ব-পশ্চিমকে সংযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে ফুলছড়িঘাট ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্রশস্ত্র, রসদ ও খাদ্য নিয়ে নানা ধরনের জাহাজ ফুলছড়িঘাটে ভিড়ত। এখান থেকে সেগুলো পাঠানো হতো বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে। অক্টোবর মাসে নৌকমান্ডোরা ফুলছড়িঘাটে অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা করেন। অপারেশনে নেতৃত্ব দেন নৌকমান্ডো আবদুর রকিব মিয়া। শেষ পর্যন্ত এই অপারেশন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ২৫ অক্টোবর গভীর রাতে গোপন শিবির থেকে বেরিয়ে পড়লেন আবদুর রকিব মিয়াসহ নয়জন নৌকমান্ডো। রাতের অন্ধকারে নদীর তীরে এসে নেমে পড়লেন নদীতে। প্রত্যেকের বুকে বাঁধা লিমপেট মাইন। ভরা নদীতে অনেকক্ষণ সাঁতরে পৌঁছে গেলেন জাহাজের পেছনে। এমন সময় হঠাৎ জাহাজ চলতে শুরু করল। নদীর স্রোত আর জাহাজের প্রপেলারের ঘুর্ণায়মান স্রোতে সেখানে সৃষ্টি হলো ভয়ংকর এক অবস্থা। তলিয়ে গেলেন তারা কয়েকজন। প্রপেলারের বিরাট পাখা আঘাত করল আবদুর রকিব মিয়ার শরীরে। নিমিষে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গেল তার শরীর। গাইড মুক্তিযোদ্ধা কালাচাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে আবদুর রকিব মিয়া নৌকমান্ডোদের নিয়ে বাহাদুরাবাদের দক্ষিণে একটি মাদ্রাসার পাশ দিয়ে পাঁচ মাইল প্রশস্ত যমুনা নদীতে নেমে পড়েন। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় তখন নদীতে প্রচণ্ড স্রোত ছিলো। অসীম সাহসী রকিব মিয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে স্রোতের অনুকূলে সাঁতরে ফুলছড়িঘাটের কাছে আসেন। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য, জাহাজের পেছনে পৌঁছানো মাত্র সেগুলো পুনরায় যাত্রা শুরু করে। প্রপেলারের প্রচণ্ড ঘুর্ণায়মান স্রোতে কয়েকজন নৌকমান্ডো সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যান। প্রপেলারের বিরাট পাখার আঘাতে আবদুর রকিব মিয়ার শরীর খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়। আবদুর রকিব মিয়াসহ কয়েকজন এখানে শহীদ হন। যমুনার প্রবল স্রোতে আবদুর রকিব মিয়ার শরীরের খণ্ডবিখণ্ড অংশ এবং অন্যান্য নৌকমান্ডোর মৃতদেহ ভেসে যায়। ফলে ফুলছড়িঘাট অভিযান অসমাপ্ত এবং তা মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডো ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডি হয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডোদের অপারেশনের মধ্যে সবচেয়ে হূদয়বিদারক অভিযান হলো ফুলছড়িঘাট অভিযান। [3]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৪-০১-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ২৩২। আইএসবিএন 9789843351449।
- একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫৪। আইএসবিএন 9789849025375।