তমিজউদ্দীন প্রামাণিক

শহীদ তমিজউদ্দীন প্রামাণিক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৭ মে, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]

তমিজউদ্দীন প্রামাণিক
মৃত্যু২৭ মে, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম
দাম্পত্য সঙ্গীরিজিয়া খাতুন

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

তমিজউদ্দীন প্রামাণিকের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি গ্রামে। তার বাবার নাম সয়েফউল্লাহ প্রামাণিক এবং মায়ের নাম তমিজন নেছা। তার স্ত্রীর নাম রেজিয়া খাতুন। তার তিন ছেলে এক মেয়ে। [2]

কর্মজীবন

তমিজউদ্দীন প্রামাণিক ১৯৭১ সালে গাইবান্ধার মুজাহিদ ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। মার্চ মাসের প্রথমার্ধে তিনি ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ইপিআর ও ছাত্র-যুবক সমন্বয়ে গড়া প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরে তাদের সঙ্গে এপ্রিল-মে মাসে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারীসহ কয়েকটি স্থানে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ২৬ মে রংপুর কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তে পাকিস্তানি সেনারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পাটেশ্বরী ডিফেন্সে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে। ফলে তাঁদের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা সম্ভব হলো না। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এখানে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একটি ডিফেন্স ছিল। দলে ছিলেন ইপিআর-মুজাহিদ-আনসার ও বেশ কয়েকজন ছাত্র-যুবক। তারা এই ডিফেন্সে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতেন। ২৭ মে ভোরবেলা থানা হেডকোয়ার্টার্সে বসে আছেন প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেশসহ কয়েকজন। এমন সময় দুজন লোক সেখানে আসে। জানাল, তাদের বাড়ি উলিপুর উপজেলায়। তারা আরও বলল, পাকিস্তানি সেনারা ধরলা নদী অতিক্রম করেনি। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের পুনরায় পাটেশ্বরীতে ডিফেন্স নেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য তারা দুজন খুব জোরাজুরি করতে থাকে। ওই দুজনের সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিরোধ যোদ্ধারা আবার পাটেশ্বরী ডিফেন্সে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। একটি ট্রাক, একটি পিকআপ ও একটি জিপ গাড়িতে রওনা হলেন প্রায় ১০০ জন যোদ্ধা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন মুজাহিদ বাহিনীর তমিজউদ্দীন প্রামাণিক। আসলে ওই দুজন ছিল পাকিস্তানিদের অনুচর। পাকিস্তানিরা তাদের পাঠিয়ে দিয়ে পাটেশ্বরীতে অ্যামবুশ করে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অপেক্ষায় ছিল। প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বহনকারী গাড়ি সেখানে পৌঁছামাত্র পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে। প্রতিরোধ যোদ্ধারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রাথমিক হতচকিত অবস্থা কাটিয়ে তারা গাড়ি থেকে লাফিয়ে নিচে নেমে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করলেন। প্রতিরোধ যোদ্ধারা খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে শেষ পর্যন্ত তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলেন। শহীদ হলেন বেশ কয়েকজন। এর পরও তাঁদের অন্যতম অধিনায়ক মুজাহিদ বাহিনীর অনারারি ক্যাপ্টেন তমিজউদ্দীন প্রামাণিক সংঘর্ষস্থল পরিত্যাগ না করে একাই সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন। তার গুলিতে বেশ কয়েকজন শত্রুসেনা হতাহত হয়। এই অসম যুদ্ধের একপর্যায়ে তিনিও শত্রুর গুলিতে শহীদ হন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না", দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ০৭-০৫-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৯৫। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৯৫। আইএসবিএন 9789843338884।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.