আবদুস সালাম (বীর বিক্রম)

শহীদ আবদুস সালাম (জন্ম: ১৯৩৭ - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [1]

আবদুস সালাম
জন্ম১৯৩৭
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন আবদুস সালাম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ আবদুস সালামের জন্ম ফেনীর সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের মধ্য কাছাড় গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। তার বাবার নাম দারগ আলী মিস্ত্রি এবং মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। তার স্ত্রীর নাম নূরজাহান বেগম। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। [2]

কর্মজীবন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন আবদুস সালাম। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দুই মাসের ছুটিতে ছিলেন। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে নিজ এলাকায় প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। পরে ভারতে গিয়ে চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যোগ দেন। যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী এলাকায়। শহীদ হওয়ার আগে বেশ কটি যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। কসবার কৈখোলার যুদ্ধে আবদুস সালাম অসীম সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। কৈখোলায় ছিল মুক্তিবাহিনীর একটি প্রতিরক্ষা অবস্থান। ১৮ জুন বিপুলসংখ্যক পাকিস্তানি সেনার একটি দল ওই প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ করে। প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে পিছু হটে যেতে বাধ্য হন। পাকিস্তানিরা কৈখোলা দখল করে সেখানে অবস্থান নেয়। পরদিন ভোররাতেই নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর একটি কোম্পানি পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণ করে। আবদুস সালাম তার দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শিবপুরের দিক দিয়ে পাকিস্তানি অবস্থানের একদম ভেতরে ঢুকে পড়েন। এতে পাকিস্তানিরা হতভম্ব হয়ে পড়ে। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝোড়োগতিতে পাকিস্তানি অবস্থানে ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেন। তাদের দুঃসাহসী এ আক্রমণে বিশৃঙ্খল পাকিস্তানিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে ৩১ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত ও বিপুল অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার অন্তর্গত সালদা নদী ছিল সীমান্তবর্তী এলাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় সালদা নদী এলাকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক রণাঙ্গন। এখানে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি সেনারা কয়েক দিন পর পর এই এলাকায় এসে অবস্থান নিত। মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণ করে হটিয়ে দিত। এরই ধারাবাহিকতায় সেদিন আবদুস সালাম তার দল নিয়ে পাকিস্তানিদের আক্রমণ করেন। কয়েক দিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টি। এর মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা অবস্থান নিল সালদা নদী ও শশীদল রেলস্টেশনের পশ্চিম পাশে। কাছাকাছি এক স্থানে অবস্থান করছিল মুক্তিবাহিনীর একটি দল। এই দলের নেতৃত্বে আবদুস সালাম। খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত এগিয়ে গেলেন শশীদল রেলস্টেশনের দিকে। পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়েই শুরু করল গোলাগুলি। আবদুস সালামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারাও সাহসিকতার সঙ্গে শুরু করলেন পাল্টা আক্রমণ। চলতে থাকল তুমুল যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের রণকৌশলে পাকিস্তানিরা পিছু হটল। পাকিস্তানি অবস্থানের দিক থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে গেল। আবদুস সালাম ধারণা করলেন, পাকিস্তানিরা হয়তো পালিয়ে গেছে। কিন্তু নিশ্চিত নন। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। ওদিকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। ভাবলেন, তা হলে দেখা দরকার। তারপর যেই তিনিসহ কয়েকজন উঠে দাঁড়িয়েছেন, অমনি প্রচণ্ড গুলি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ। আড়াল নেওয়ার সুযোগ পেলেন না আবদুস সালাম ও তার কয়েকজন সহযোদ্ধা। একঝাঁক গুলি এসে লাগল তার শরীরে। শহীদ হলেন সাহসী আবদুস সালাম। [3]

সমাধি

কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধে সালামের কবর (সামনে)

গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় সালামকে কুল্লাপাথর গ্রামের এক টিলায় অন্যান্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সমাহিত করা হয়। এই সমাধিস্থল বর্তমানে কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ হিসেবে পরিচিত।[4]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৩-১০-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।
  4. বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরডটকম, ২৫ মার্চ ২০১৫

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.