এম হামিদুল্লাহ খান
এম হামিদুল্লাহ খান (জন্মঃ ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮ - মৃত্যুঃ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১১), যিনি উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (অবঃ) নামে সচরাচর পরিচিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, বাংলাদেশ প্রবাসী সৱকাৱেৱ প্রধান সামৱিক প্রতিনিধী(গুপ্ত যুদ্ধ), ১১নম্বর সেক্টরের(ডিভিশন) ১ম উপ-সেক্টৱেৱ(মানকাচৱ) কমান্ডার এবং ১১নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। প্ৰথম পেশা হিসেবে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। '৭১ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর চাকুরি পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে। ৭ই এপ্ৰিল তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে স্থানান্তরিত হন।[1] ১৯৭৮-এৱ শেষাংসে তিনি অবসৱ গ্ৰহণ কৱে রাজনীতিতে যোগ দেন।
এম. হামিদুল্লাহ খান | |
---|---|
জন্ম | ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮ |
মৃত্যু | ৩০ ডিসেম্বর ২০১১ ৭৩) | (বয়স
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | |
পেশা | সশস্ত্র বাহিনী কর্মকর্তা/রাজনীতিবিদ |
পরিচিতির কারণ | তামঘা-ই-জুৱাত, সিতাৱা-ই-হাৰ্ব, বীর প্রতীক, পাক-ভাৱত কাশ্মীৱ যুদ্ধ (১৯৬৫), বাংলাদেশ স্বাধীনতা ১৯৭১ (যুদ্ধ নেতা) |
শৈশবকাল
১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৮ সালে এম হামিদুল্লাহ খানের জন্ম হয় তৎকালীন ইংৱেজ শাসন কালে বিক্রমপুর পরগণায় লৌহজং থানার (র্বতমান মুন্সীগঞ্জে) পদ্মাৱ নদীৱ নিকটে মেদিনীমণ্ডল গ্রামে তাৱ দাদা জমিদাৱ "খান বাহাদুৱ" মোঃ আজীম খানেৱ খাঁন বাড়ীতে। বাবা ইম্পিৱিয়াল ফৱেস্ট সাৰ্ভিস এৱ বেঙ্গল ফৱেস্ট ডিপাৰ্টমেণ্টে ফৱেস্ট অফিসাৱ(ডেপুটি ৱেন্জাৱ)- এম দবিরউদ্দিন খান এবং মা - জসিমুন্নেসা খানের নয় সন্তানের মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। পিতার চাকুরীজনিত কারণে তিনি বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করেছিলেন।[2] তিনি আসামেৱ গৌহাটীতে এঙগ্লো-বাংলাদেশ সিলভাৱ জুবলী স্কুল এবং ৱাঙ্গামাটি ক্যাথলিক মিশনাৱি স্কুলে লেখাপড়া কৱেন। ইংৱাজী ভাসা সেকলেই সৰ্বপ্ৰথম তাৱ শিখা ও চৰ্চা হয়। তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৫৪ সালে লৌহজং এ. টি. ইনস্টিটিউশন(কাজীৱ পাগলা) থেকে। এরপর তিনি ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে এবং এ কলেজ থেকেই ১৯৫৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। জগন্নাথ কলেজে ব্যাচেলর অফ কমার্স কোর্সে দুই বছর অধ্যয়ন করে আইন বাভাগে ভৰ্তি হয়েও তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কমিশনপ্ৰাপ্ত চাকুরী চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে অনুমোদিত হন। পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমী রিসালপুরে তিনি ৩৪তম জিডি(পি) ১নং স্কোডৱণ কোর্সে যোগদান করেন জুলাই মাসেৱ ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। এখানে দুই বছর প্রশিক্ষণ শেষে কমিশনপ্রাপ্ত হন(১৯৬২ সালের জুনে)। পৱবৰ্তীতে তিনি জিডি প্ৰশাসনিক শাখায়(নিৱাপত্তা ও তদন্ত) বদলি হন।[3]
ব্যক্তি জীবন
এম হামিদুল্লাহ খান ১৯৬৫ সালে বৃটীশ দখল ও শাসন আমলে বাংলাৱ মুখ্য সচিব ৱাজশাহী(নাটক জেলা)ৱ জনাব চয়ন উদ্দিন আহ্-মেদেৱ নাতিন ও পূৰ্ব পাকিস্তানে ৱাজস্ব ও কৱ কমিশনাৱ জনাব মকবুল হোসেইন সিদ্দীকি ও বেগম জোহৱা সিদ্দীকিৱ তৃতীয় কন্যা রাবেয়া সুলতানা খানকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে তিন পুত্র - মুরাদ হামিদ খান সানি, তারেক হামিদ খান কনি, জিয়াদ হামিদ খান রনি। তন্মধ্যে জিয়াদ হামিদ খান রনি ৮ই অগাস্ট ১৯৮১ সালে পুকুড়ে ডুবে মারা যায়।
কর্মজীবন
১৯৬০ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে জিডি পাইলট কোর্সে কমিশনপ্ৰাপ্ত হন। পৱে তিনি প্রশাসনিক শাখায় নিয়োগপ্ৰাপ্ত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু পূর্বে ১৯৭০ সালের শেষাৰ্ধে তিনি ঢাকা বিমান ঘাঁটিতে ৫নং (প্ৰভোস্ট এন্ড সিকিউৱিটি) ইউনিটেৱ কমান্ডিং অফিসাৱেৱ দায়িত্ব সহ তেজগাঁও আন্তৰ্জাতিক বিমান বন্দৱে পদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিযুক্ত হন।[2] ১৯৭২-১৯৭৮ স্কোয়াড্ৰণ লীডাৱ ও উইং কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। তিনি বিমান বাহিনীতে প্ৰভোস্ট মাৰ্শাল ও গ্ৰাউন্ড ডিফেন্স কমান্ডাৱ নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭৭ শনে তিনি উপ সামৱিক আইন প্ৰশাসক হিসেবে মাৰ্শাল ল কমিউনিকেশন এন্ড কন্ট্ৰলেৱ পৱিচালক ছিলেন। তিনি মোট ২১ বৎসর চাকুরী করেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সি-ইন-সি কৰ্ণেল ওসমানী তাকে যুদ্ধ ময়দানে স্কোয়াড্রন লীডার পদে পদোন্নতি দেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে এম হামিদুল্লাহ খান পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটি ঢাকার সহকারী প্রভোস্ট মার্শাল ও তেজগাঁও আন্তৰ্জাতিক বিমান বন্দৱে (নিরাপত্তা দায়িত্ব) হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২৫ শে মার্চের রাত্রে গণহত্যা শুরু হলে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরণা অনুভব করেন। এ সময় কবি বেগম সুফিয়া কামালের বাসায় তার গতায়াত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাগে বিহারের চাকুলিয়ায় সর্ববৃহৎ গেরিলা ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রবাসী সরকারের সামরিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব করেন তিনি। অতঃপর স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কৰ্নেল এম এ জি ওসমানী তাকে উত্তর ফ্রন্টে নিযুক্ত করেন যা ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তেলঢালায় মেজর জিয়ার কমান্ড অধীন ১১ নং সেক্টর এবং পৱবৰ্তিতে জেডফোর্সের হেড কোর্য়াটার। হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করার পর মেজর জিয়া তাকে বৃহত্তর রংপুর ও ময়মনসিংহ জেলার বিপরীতে মেঘালয়ের নদীবন্দরে স্থাপিত মানকাচর প্রথম সাব সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত করে দায়িত্ব দেন। হামিদুল্লাহ খান ঐ ঘাঁটি থেকে রংপুরের কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা এলাকায় অবস্থিত পাকিস্তান বাহিনীর ঘাটিতেঁ অভিযান পরিচালনা করেন। রৌমারি ও রাজিবপুর থানাধীন ৫৫০ বর্গমাইল মুক্ত এরাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাকে প্রদান করা হয়।[3]
অতঃপর ১১ নং সেক্টর এবং জেডফোর্সের অধিনায়ক মেজর জিয়ার রহমান তাকে ১১ নম্বর সেক্টরে 'উপ সেক্টর কমান্ডার' নিযুক্ত করেন। ১০ই অক্টোবরে মেজর জিয়াউর রহমান নিযুক্ত মহেন্দ্ৰগন্জে ২ উপ সেক্টৱ কমঃ মেজর আবু তাহের কে সেক্টৱেৱ দায়িত্ব দিয়ে যান। তাহেৱ আহত হলে এম হামিদুল্লাহ ১৯৭১-এর ৩ নভেম্বর থেকে সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি পাক সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রবাসী সরকারে বাংলাদেশ ফোর্সেস সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানী এম এ জি ওসমানী তাকে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যাটেল ফিল্ড প্রমোশন দিয়ে স্কোয়াড্রন লীডার পদে উন্নীত করে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন তিনি।[4] মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ও সবিশেষ অবদান রাখায় তিনি বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন।
রাজনৈতিক জীবন
বাংলাদেশের বিমান বাহিনী থেকে L.P.R (লীভ পাৱ ৱিটায়াৱমেন্ট) গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিযে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। মাটি ও মানুষের সঙ্গে কাজ করার তাগিদে তিনি ১৯৭৯ সালে ১০ই জানুয়াৱি বিমান বাহিনী থেকে সম্পূৰ্ণ অবসরগ্রহণ করেন। এরপর শুরু হয় ভিন্ন এক জীবন মানুষের পাশে দাঁড়াতে বেছে নেন রাজনীতি। ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ এই তিন সালের নির্বাচনের আসন থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ এৱ নিৰ্বাচনে বৰ্তমান একমি ঔষধেৱ মালিক মিজানুৱ ৱহমান সিনহা'ৱ কাছে তাৱ গোৱা আসনটি অৰ্থেৱ বিনিময় ৱদবদলতি হওয়াতে তিনি বিশ্বাস ঘাতকতাৱ পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান কৱেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১৫ আসন থেকে পুনৱায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন[3]
রচিত গ্রন্থসমূহ
হামিদুল্লাহ খান মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে কয়েকটি বই লিখেছেন।[5] সেগুলো হলোঃ-
- একাত্তরে উত্তর রণাঙ্গন
- বাঙালির স্বাধীনতার পটভূমি
প্রয়াণ
৭৪ বছর বয়সে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১১ইং, শুক্রবার বেলা আড়াইটায় মারা যান তিনি।[6]
সম্মাননা
২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ এম হামিদুল্লাহ খানের নামে ঢাকা শহরের অভিজাত বনানী এলাকার ২৩ নম্বর সড়কটি হামিদুল্লাহ খান সড়ক নামকরণ করা হয়।[7] [8]
তথ্যসূত্র
- তোমাদের এ ঋন কোনদিন শোধ হবে না, প্রথম আলো
- চলে গেলেন বীর স্বাধীনযোদ্ধা হামিদুল্লাহ খান - দৈনিক জনকণ্ঠ, সংগ্রহকালঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১ইং
- মুন্সিগঞ্জের খবর
- উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান মারা গেছেন - বিডিনিউজ২৪.কম, সংগ্রহকালঃ ৩0 ডিসেম্বর, ২০১১ইং
- সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান আর নেই - মানবজমিন, সংগ্রহকালঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১ইং
- বিএনপি নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল্লাহ খান আর নেই - প্রথম আলো, সংগ্রহকালঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১ইং
- সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান আর নেই - যায়যায়দিন, সংগ্রহকালঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১১ইং
- "এম হামিদুল্লাহ্ খান"। ২ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১১।