মধুপুর কর্দম
মধুপুর কর্দম হলো অতিমাত্রায় বিচূর্ণিত ও জারিত লালচে বাদামি অবক্ষেপ বা আদি প্রস্তর।[1] এই অবক্ষেপটি নতুন প্লাইসটোসিন যুগে জলবায়ুগত কারণে সৃষ্ট ও এটি বিভক্ত কয়েকটি প্লাইসটোসিন সোপানের সমন্বয়ে গঠিত।[2] এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্লাইসটোসিন চত্বর। একই কর্দমের মধ্যে মধুপুর গড় অঞ্চলসহ লালমাই পাহাড় ও বরেন্দ্র ভূমি সৃষ্টি হয়েছে।[1] সঞ্চয়নজাত নদীজ পরিবেশ নিয়ে কর্দমটি গঠিত।
প্রাচীন মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতী সভ্যতাও এই অবক্ষেপের স্তরসমষ্টি বেষ্টিত অঞ্চলের অন্তর্গত। ঢাকা বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ ও টাঙ্গাইল জেলার বাইরে বৃহত্তর রাজশাহী ও বগুড়া জেলায় বিস্তৃত বরেন্দ্রভূমিতে এই কর্দমের অধিক্য দেখা যায়। এছাড়া, কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত লালমাই পাহাড়ের অধিকাংশ শৃঙ্গচূড়াই এ কর্দম দ্বারা আবৃত।[3]
গঠন
এ অঞ্চলের ভূমি সঞ্চয়ন সংলগ্ন প্লাবনভূমি থেকে সামান্য উঁচু যা হ্যালোইসাইট ও ইলাইটের সমন্বয়ে সৃষ্ট।[1] এগুলো মিলে উত্তর-দক্ষিণে এটি প্রলম্বিত ভূভাগ গঠন করেছে যা স্মারক প্রত্নমৃত্তিকার অন্তর্গত। উত্তর-প্লাইসটোসিন যুগে এ অঞ্চলটিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বিভিন্নভাবে ক্ষয়ের কারণে বেশকিছু প্লাইসটোসিন সোপান আলাদা হয়ে গিয়েছে।[4] পরে, এই সোপানগুলোই একটি অপরটির সাথে যুক্ত হয়ে ও খোলা স্থানে উর্বর পলিমাটিতে পূর্ণ হয়ে প্লাবনভূমির তৈরি হয়েছে।[1]
স্তরের ভিত্তিতে মধুপুর কর্দমকে ৩টি উপশ্রেণীতে ভাগ করা হয়। স্তরগুলো হলো ঢাকা কর্দম গ্রুপ, মিরপুর পলিময় কর্দম গ্রুপ এবং ভালুকা বালি গ্রুপ। এরমধ্যে ঢাকা কর্দম গ্রুপ অধিকতর নতুন ও ভালুকা বালি গ্রুপ তিনটির মধ্যে প্রাচীন। ঢাকা কর্দম গ্রুপের স্তরটি লৌহময় গুটি, ম্যাংগানিজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ নিয়ে প্রলম্বিভাবে গঠিত। ভালুকা বালি গ্রুপের স্তরটি হলুদ-বাদামি এবং অতিমাত্রায় অভ্রসমৃদ্ধ বালির সমন্বয়ে গঠিত। প্রত্ন-চুম্বকীয় সমীক্ষায় ভালুকা স্তরটি স্বাভাবিক মেরু প্রবণতা প্রদর্শন করে এবং এটি প্রায় ০.৯৭ থেকে ০.৯০ মিলিয়ন বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে বলে ভূতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন।[1]
তথ্যসূত্র
- "মধুপুর কর্দম"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
- "প্রাকইতিহাস"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
- "ভূ-প্রকৃতি"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
- "বাংলাদেশের মৃত্তিকা"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯।