শোলাকিয়া

শোলাকিয়া বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি এলাকা। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[1] প্রতি ঈদের জামাতে এখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে।.[2] ঈদগাহটি নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এখানে ২৫০টি কাতারে প্রায় ১৫০,০০০ মুসুল্লী একসাথে নামাজ পড়ে থাকেন। [2] প্রায় সমসংখ্যক মুসুল্লী পার্শ্ববর্তী মাঠ, রাস্তা এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজে অংশ নেন।[2]

অল্প কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা দুইতলা মিম্বরের ভবনটিতে নামাজ পড়েন, যেখানে প্রায় ৫০০ লোকের স্থান সংকুলান হয়।[2] ঈদুল ফিতর ছাড়াও ঈদুল আজহার নামাজেও অনুরূপ বিশাল জনসমাগম হয়ে থাকে। [3] শোলাকিয়ার স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ১,০২৬, যা ১৮০ টি পরিবার নিয়ে গঠিত।[4]

ইতিহাস

ইসলামের ঐষী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া "সাহেব বাড়ীর" পূর্ব পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ তার নিজস্ব তালুকে নরসুন্দা নদীর তীরে ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ৭ একর জমির ওপর "শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান" প্রতিষ্ঠা করেন[5] ও তার ইমামতিতে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় কিংবদন্তী মতে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লীদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে "সোয়া লাখ" কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের সেই জামাতে ১,২৫,০০০ (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয় এবং এর ফলে “শোলাকিয়া” নামটি (“সোয়া” মানে পূর্ণ এক এবং চার ভাগের একভাগ এবং “লাখ” মানে এক লক্ষ) চালু হয়ে যায় (সোয়া লাখ-এর অপভ্রংশ সোয়ালাক যা থেকে শোলাকিয়া)। পরবর্তীতে ১৯৫০ সনে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (যিনি ঈশা খাঁর বংশধর ছিলেন), ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি দান করেন।[2] এই মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে এবং প্রতিটি কাতারে ৫০০ শত মুসল্লী নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।

প্রতিষ্ঠান

মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ্ ২০০৪ সাল থেকে ঈদের নামাজ পরিচালনা করছেন। তার আগে তার পিতা অধ্যাপক মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ নুরুল্লাহ, ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২৮ বছর ধরে এই নামাজগুলো পরিচালনা করেন। [2] মুফতি হযরত নুরুল্লাহকে এখনো তার সন্তান নামাজের সময় স্মরণ করেন। .[6] জেলা কমিশনারকে (ডিসি) প্রেসিডেণ্ট করে ঈদগাহের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি আছে। [2] প্রতিটি জমায়েতে, জেলা পুলিশ প্রশাসক মেটাল ডিটেক্টর, মাইন ডিটেক্টর ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ প্রচুর পরিমাণ পুলিশ নিয়োগ করেন। মেডিকেল টিম ও অগ্নিনির্বাপক দলকে প্রার্থনা চলাকালে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়। মুসলিম-প্রধান বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর হচ্ছে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব এবং ঈদ-উল-আযহা দ্বিতীয় বৃহত্তম। [1] বহু কৃতী ছাত্রের পীঠস্থান আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় শোলাকিয়াতে অবস্থিত।[7]

অন্যান্য সুবিধাবলী

শোলাকিয়া কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত এবং এলাকার বাণিজ্যিক শাখা। স্থানটি আর্সেনিক থেকে প্রায় সম্পূর্ণ মুক্ত এবং গঙ্গা বেসিনের হুমকির মুখে অবস্থিত।.[8] খড়মপাটি ও কলাপাড়া মহল্লায় বিভক্ত শোলাকিয়ার একটি ক্রীড়া দল আছে।.[9] ‘’সোলাকিয়া স্পোর্টিং ক্লাব’’ নামের এই দলটি স্থানীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ইট ও টাইলস তৈরি স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি।.[10]

তথ্যসূত্র

  1. Eid-ul Fitr ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ মে ২০১৩ তারিখে; Banglapedia; Retrieved on 2007-08-26.
  2. Moklesur Rahman, Liton (২০০৬-১০-২৮)। "Sholakia Eidgah"Star Insight (English ভাষায়)। Daily Star। পৃষ্ঠা Cover page। ২০০৭-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২২
  3. The New Age ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে, 2007-01-04, Retrieved: 2007-08-22
  4. "Austragram Census Results at a glance" (PDF)Census। Bangladesh Bureau of Statistics। ২০০৭-০৯-২৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-২২
  5. ময়মনসিংহ জেলায় ইসলাম, লেখকঃ মোঃ আবদুল করিম, প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠাঃ ১২৫-১২৮
  6. From Drishtipat ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে; Retrieved on 2007-08-26.
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
  8. Welltacker Columbia University; Retrieved on 2007-08-26.
  9. From the daily New Age ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে; Retrieved on 2007-08-26.
  10. From craft central ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে; Retrieved on 2007-08-26.
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.