পিরোজপুর জেলা

পিরোজপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।

পিরোজপুর
জেলা
বাংলাদেশে পিরোজপুর জেলার অবস্থান
পিরোজপুর
পিরোজপুর
বাংলাদেশে পিরোজপুর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′৪৮″ উত্তর ৮৯°৫৮′১২″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল বিভাগ
আয়তন
  মোট১০৩৮ কিমি (৪০১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১[1])
  মোট১১,১৩,২৫৭
  জনঘনত্ব১১০০/কিমি (২৮০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৬৪.৩১ %
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
১০ ৭৯
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ভৌগোলিক সীমানা

পিরোজপুরের উত্তরে বরিশাল জেলাগোপালগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে ঝালকাঠি জেলাবরগুনা জেলা এবং পশ্চিমে বাগেরহাট জেলাসুন্দরবন অবস্থিত। পশ্চিমে বলেশ্বর নদী পিরোজপুরকে বাগেরহাটের থেকে আলাদা করেছে।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

পিরোজপুর জেলা ৭টি উপজেলায় বিভক্ত; এগুলো হলোঃ ১ কাউখালীনাজিরপুর উপজেলানেছারাবাদ উপজেলাপিরোজপুর সদর উপজেলাভাণ্ডারিয়া উপজেলামঠবাড়িয়া উপজেলাইন্দুরকানী উপজেলা

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ১১,১৩,২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫,৪৮,২২৮ জন এবং মহিলা ৫,৬৫,০২৯ জন। মোট পরিবার ২,৫৬,০০২টি।[2]

শিক্ষা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর জেলার সাক্ষরতার হার ৬৪.৯%।[2]

ইতিহাস

বর্তমান পিরোজপুর জেলা বঙ্গোপসাগরের ঔরসজাত জোয়ার-ভাটার পলিরেণুতে গড়া একটি পলল ভূ-ভাগ। সমুদ্রের লোনাজল স্নাত হয়ে গাঙ্গেয় বদ্বীপের দক্ষিণভাগে সাগরবক্ষে একদিন যে মৃত্তিকা উঁকি দিয়েছিল, সেটিই কালক্রমে পরিণত হয়েছে জনপদে, মুখরিত হয়েছে জনকোলাহলে। তবে গাঙ্গেয় বদ্বীপের যে ভূ-ভাগ নিয়ে পিরোজপুর জনপদ গঠিত, সে অঞ্চল অপেক্ষাকৃত বয়সে নবীন ও বাংলাদেশের দক্ষিণভাগে অবস্থিত প্রান্ত ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।

ভূ-ভাগের গঠন

পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক মতে, ঋগবেদের আমলেও বঙ্গের দক্ষিণভাগ ছিল অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত। মৌর্যযুগে পলল সংযোগে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ গড়ে ওঠলে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে ক্রমশ পিরোজপুর ভূ-ভাগের পলল উত্থান ঘটে। পৌরাণিক নদী গঙ্গার পূর্বগামী শাখা নলিনী, হলদিনী, পাবনী নামে পরিচিত ছিল। পৌরাণিক নদীর উত্তরসূরী আধুনিক গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, সুগন্ধার পলিরেণু গাঙ্গেয় বদ্বীপে যে সব দ্বীপ তথা নব্য ভূ-ভাগ সৃষ্টি করে, পিরোজপুর জেলার জনপদ সে সব দ্বীপেরই অংশবিশেষ। তবে জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠেছে আরও পরে। ঐতিহাসিকদের ধারণায় পাল ও সেন আমলে বিচ্ছিন্নভাবে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করলেও মূলত মোগল ও সুলতানি আমলে এ অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতি গড়ে ওঠে। তবে উনিশ শতক পর্যন্ত পিরোজপুর জেলার একটি অংশ ছিল জলাশয়। এর মধ্যে স্বরূপকাঠির সাতলা, নাজিরপুরের বিল ও ভান্ডারিয়া অঞ্চলে চেচরি-রামপুর বিল অন্যতম।

জনবসতি ও জনবিন্যাস

ভূমি মালিকানার শিথিল স্তরে চরাঞ্চলে আবাদ ও জঙ্গল পরিষ্কার করে ও 'হাওলা' বন্দোবস্ত নিয়ে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর, বিক্রমপুর ও যশোর-খুলনা অঞ্চল থেকে অপেক্ষাকৃত সাহসী ও পরিশ্রমী মানুষের প্রথম আগমন ঘটে পিরোজপুর অঞ্চলে। পেশায় কৃষিজীবী, মোলঙ্গী বা লবণ চাষী, মত্স্যজীবী, বাওয়ালী, কুমার, কামার, নৌকার মাঝি, বারৈ, নৌ ও কারুশিল্পের কারিগর ও ঘরামী সম্প্রদায়ের লোকেরাই এ অঞ্চলের আদি বাসিন্দা। পেশাজীবীদের মধ্যে কামার-কুমার শ্রেণী ঢাকা, নৌ কারুশিল্পের কারিগর ফরিদপুর ও যশোর এবং ব্যবসায়ী শ্রেণীর একটি বড় অংশ আসে বিক্রমপুর অঞ্চল থেকে। কৃষিজীবীদের একটি বড় অংশ এসেছে পদ্মা-মেঘনার নদী কবলিত অঞ্চল থেকে।

নামকরণ

সুলতানি আমলে মুসলিম শাসক ফিরোজশাহের নামানুসারে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের এ অঞ্চল পরিচিতি পায় ফিরোজপুর নামে। বর্তমান পিরোজপুর নামটি এ ফিরোজপুর নামেরই অপভ্রংশ বলে গবেষকরা মনে করেন। অন্যমতে, মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। মোগল আমলে জঙ্গল আবাদ করে সুন্দরবন অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতি শুরু হলে পিরোজপুর অঞ্চলেও জনবিন্যাস ঘটে। সম্রাট আকবরের আমলে লবণ কর রহিত করা হলে সুন্দরবন অঞ্চলে লবণ উত্পাদন বৃদ্ধি পায় এবং গড়ে ওঠে মোগলদের রাজস্ব পরগণা নিমকমহল। পূর্বে এ অঞ্চল সরকার খলিফাবাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে এসে টোডরমলের রাজস্ব তালিকার নিমকমহলটি তার নামে নতুনভাবে পরিচিতি পায় সেলিমাবাদ পরগণা হিসেবে। তৎকালীন বাখরগঞ্জ জেলায় দ্বিতীয় বৃহত্তম পরগণা ছিল সেলিমাবাদ পরগণা। সে সময় ঝালকাঠি, বাউফল, স্বরূপকাঠি, নেছারাবাদ, রাজাপুর, ভান্ডারিয়া, পিরোজপুর, তত্কালীন যশোর জেলার কচুয়া প্রভৃতি উপজেলার অধিকাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল সেলিমাবাদ পরগণা। ১৬১১ সাল পর্যন্ত সেলিমাবাদ ছিল চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের অধীনে। ১৬১১ সালে চন্দ্রদ্বীপ মোগল অধিকারে গেলে চন্দ্রদ্বীপ ভেঙ্গে কয়েকটি পরগণায় বিভক্ত করা হয়। সেলিমাবাদ ছিল তার মধ্যে একটি। ১৭২২ সালে রাজস্ব জরিপকালে সেলিমাবাদ পরগণা বিভক্ত করে আরও ১০টি ছোট পরগণা, তালুক ও হাওলা সৃষ্টি করা হয়।

মোগলদের শুল্ক ঘাঁটি ও ব্যবসা কেন্দ্র

মোগল আমলে সেলিমাবাদ ছিল অন্যতম লবণ ব্যবসা কেন্দ্র। ফলে এখানে ছিল মোগলদের একটি শক্তিশালী লবণ চৌকি। এ চৌকি থেকে মোগলরা আবগারি শুল্ক আদায় করতেন। মোগল আমলে মোগল নবাবদের ও অমাত্যদের অনেকেই ছিলেন লবণ ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের মধ্যে মীরজুমলা ও রেজাখানের লবণ ব্যবসা ছিল। শায়েস্তাখানের আমলে অনেক ইউরোপীয় সেলিমাবাদ তথা পিরোজপুরে ব্যবসা শুরু করে। ঢাকায় বসে তারা দক্ষিণাঞ্চলে লবণ ব্যবসা চালাতেন। তাছাড়া ঢাকার মোগল নৌবহরের জন্য উন্নতমানের কাঠ ও নৌযান তৈরির কারিগর যেত সেলিমাবাদ থেকে।

জমিদার ও রাজস্ব প্রশাসন

মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে কিংকর ভূইয়ার পুত্র মদনমোহন রাজ অমাত্য হিসেবে রায় উপাধি পান এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে সেনাধ্যক্ষ হিসেবে কৃতিত্ব প্রদর্শন করে নিজপুত্র শ্রীনাথ রায়ের নামে সেলিমাবাদ পরগণা বন্দোবস্ত নেন। বর্তমান পিরোজপুর জেলার অধিকাংশ ছিল সেলিমাবাদ পরগণার অংশ এবং রায়েরকাঠির রায় পরিবার ঝালকাঠির নিকটে সুতালরিতে রাজস্ব স্থাপনা বা কাছারি স্থাপন করে এ অঞ্চলে প্রথম রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তোলেন। পরে তা রায়েরকাঠিতে স্থানান্তরিত হয়। তবে ঘন ঘন মগ-পর্তুগীজ আক্রমণ ও লুটতরাজের ফলে অধিবাসীরা স্থান ত্যাগ করলে রাজস্ব ও প্রশাসনিক কেন্দ্রও পরিবর্তন করতে হত। রেনেলের বিখ্যাত বেঙ্গল এ্যাটলাস-এ এ অঞ্চল পর্তুগীজ আক্রমণে বিরাণ ভূমি বলে চিহ্নিত রয়েছে। ঢাকার নায়েব নাজিমদের শাসনামলে বাকি খাজনার দায়ে সেলিমাবাদ পরগণা নায়েব নাজিম ওয়াজিস খানের দখলে যায়। তবে পরে পরগণার দায়িত্ব পুনরায় ফেরত পান। ১৭৪৯ সালে আগাবাকের সেলিমাবাদ দখল করেন এবং ১৭৫৩ সালে আগাবাকের মৃত্যুবরণ করলে রাজস্ব প্রশাসনের দায়িত্ব চলে যায় রাজা রাজবল্লভের ওপর। তবে রায়েরকাঠির জমিদারগণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান গোকুল চন্দ্র ঘোষালের সাহায্যে জমিদারীর একটা অংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ঢাকার চীফ ও সেলিমাবাদের লবণ ব্যবসায়ী মি. বারওয়েলের মধ্যস্থতায় ১৭৭২ সালে সেলিমাবাদ পরগণার একাংশ সহযোগিতার স্বীকৃতি স্বরূপ গোকুল ঘোষালকে দান করা হয়। সেলিমাবাদের জমিদারি এভাবে 'রায়' ও 'ঘোষাল' পরিবারের মাঝে বিভক্ত হয়ে যায়। পিরোজপুর শহরে উকিলপাড়ার তহসিল কাছারি ছিল ঘোষালদের রাজস্ব কেন্দ্র। পরবর্তীতে কতিপয় ইংরেজ বণিক নামে-বেনামে সেলিমাবাদ পরগণায় ঘোষাল স্টেটের তালুক কেনেন। এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লুকাস, ফিসার, টোয়াইডেল ও কোম্বার। তারা তাদের পত্নীদের নামে তালুক ক্রয় করে লবণ ব্যবসা করতেন। ফলে রাজস্ব প্রশাসনের জন্য ঘোষাল পরিবার সেলিমাবাদ পরগণায় কয়েকটি শুল্ক আদায় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগেই পিরোজপুরে রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তোলেন। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সেলিমাবাদের এত সুনাম ছিল যে, রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণ দাস কয়েকটি বৃহত্ নৌকাযোগে লবণ শুল্ক থেকে প্রাপ্ত যে বিপুল অর্থ নিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার সিংহভাগ ছিল সেলিমাবাদ পরগণা থেকে লবণ শুল্ক হিসেবে আদায় করা অর্থ সেলিমাবাদ পরগণার অর্থনৈতিক গুরুত্ব এমন ছিল যে, এ পরগণা হতে অন্তত ১০টি ক্ষুদ্র পরগণা ও অনেকগুলো তালুক সৃষ্টি করা হয়। তাছাড়া উনিশ শতকের ষাটের দশকে ঝালকাঠি, কানখালি, সরিকল ও পিরোজপুরে 'টোল' স্টেশন স্থাপন করা হয়। আবগারি শুল্ক আদায় ও আইনী কার্যক্রমের সুবিধার জন্য উনিশ শতকের ষাটের দশকে কেওয়ারি থানার তেজকাটি, কুমারখালী, পিরোজপুর, রায়গঞ্জ, বানারিপাড়া, কেওয়ারী এবং টগরা থানার হলতা, ভগিরথপুর, তেলিখালী, মঠবাড়িয়া, দাউদখালী, ভান্ডারিয়া ও টগরাতে স্ট্যাম্প ভেন্ডিং ব্যবস্থা ছিল।

প্রথম পুলিশী থানা

এ সব পরগণা থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব এবং লবণ খাত থেকে আদায়কৃত শুল্কের নিরাপত্তার জন্য এ অঞ্চলে একটি পুলিশী থানা স্থাপন ছিল জরুরি। তাছাড়া অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে বলেশ্বর ও কচুয়া নদীতে নৌ-ডাকাতি ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ সময় বলেশ্বর নদীপথে কলকাতার সঙ্গে ঢাকা-সিলেট আসাম ও কাছাড় পথে নৌ-যাতায়াত ছিল। লিন্ডসে নামক সিলেটের একজন কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট কলকাতা থেকে নৌ-পথে সিলেট যাওয়ার পথে কচা নদীতে নৌ-ডাকাতের কবলে পড়েন। ফলে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ঢাকার প্রাদেশিক কাউন্সিলের কাছে নির্দেশ আসে বলেশ্বর নদীতে জল থানা স্থাপন করার। ১৭৯০ সালে গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ ভারত শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটান এবং জেলা সৃষ্টি করেন। ১৭৯৭ সালে ঢাকা-জালালপুর জেলা থেকে আলাদা করে বাখরগঞ্জ জেলা সৃষ্টি করা হয় এবং বৃহত্তর জেলাগুলোতে সার্কেল থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থানা স্থাপন করা হয়। বাখরগঞ্জ জেলা সৃষ্টি করে যে ১০টি থানা স্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে বর্তমান পিরোজপুর অঞ্চলে টগরা, কাউখালী ও কেওয়ারী থানা ছিল অন্যতম। কালীগঙ্গা নদীতীরে ছিল কেওয়ারী থানার অবস্থান। স্বরূপকাঠি, নাজিরপুর, বানারীপাড়া এবং ঝালকাঠির একাংশ ছিল এ থানার অন্তর্গত। নদীভাঙ্গনে কেওয়ারী থানাই পরবর্তীতে স্বরূপকাঠিতে স্থানান্তরিত হয়। পক্ষান্তরে, পাড়েরহাটে ছিল টগরা থানার প্রধান কেন্দ্র। বর্তমান পিরোজপুর, ভাণ্ডারিয়া, কাঠালিয়া, বামনা, পাথরঘাটা, মঠবাড়িয়া ছিল এ থানার অন্তর্গত। পরে ১৮৫৯ সালে মঠবাড়িয়ায় আলাদা থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান কাউখালী, রাজাপুর ও ঝালকাঠির একাংশ নিয়ে ছিল কাউকালী থানা। মোগল আমল থেকেই কাউখালী ছিল মোগলদের লবণ শুল্ক কেন্দ্র। কথিত আছে যে, ১৬২৮ সালে যুবরাজ শাহাজাহান ঢাকা সফরকালে কাউখালী আসেন এবং সেলিমাবাদ পরগনার জমিদার মদন মোহন তার সাথে দেখা করেন। এ সময় ঝালকাঠির লুত্ফাবাদ ছিল সেলিমাবাদ পরগনার সদর দফতর। ১৬৫৮ সালে রায়ের কাঠির জঙ্গল আবাদ করে জমিদার রুদ্র নারায়ণ রায় লুত্ফাবাদ থেকে পিরোজপুরের রায়ের কাঠিতে এসে বসবাস শুরু করলে রায়েরকাঠিকে কেন্দ্র করেই পিরোজপুর অঞ্চলের নতুন নতুন আবাদ ও সমৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। ঝালকাঠির সন্নিকটে সুতালরি বন্দর, রায়ের কাঠির নিকটস্থ বন্দর কুমারখালী ও পার্শ্ববর্তী রাজগঞ্জ বা রাজারহাট, বাখরগঞ্জ, বারৈকরন ও নলছিটি ছিল অষ্টাদশ শতকে সেলিমাবাদ পরগনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র। ফলে এ অঞ্চল মোগল নবাব, অমাত্য ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিসহ দেশি-বিদেশি বণিকদের নজরে আসে। লবণ ব্যবসার পাশাপাশি চালের ব্যবসাও ছিল লাভজনক। বহু আর্মেনিয়ান, পর্তুগীজ ব্যবসায়ী, ঢাকার লৌহজং-এর পাল চৌধুরী, কুণ্ডু ও ঢাকার নবাব পরিবারের ইউরোপীয়দের সাথে লবণ ব্যবসা উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তাছাড়া লবণ শুল্ক আদায়ের জন্য চরখালী, রমনা-বামনা ও গুলশাখালীতে ছিল লবণ চৌকি। ১৮২৯ সনে এ এলাকা ঢাকা বিভাগের 'কমিশনার অব রেভিনিউ'-এর অধীনে আসে। তবে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ব্যবসা দেখাশুনার জন্য বারৈকরণে কোম্পানির রেসিডেন্ট বসবাস করতো ও ১৭৭০ এবং ১৭৮৭ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ে বহু দেশীয় ও ইংরেজ বণিক সেলিমাবাদ অঞ্চলে চালের ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেকর্ডে দেখা যায় জনৈক আর্মেনিয়ান খাজা কোয়ার্ক বা 'কাউ' সাহেবের লবণ ব্যবসা ছিল কাউখালীতে। তার নামেই কাউখালীর নামকরণ হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এ অঞ্চলে কোম্পানির বরকন্দাজ নিয়োগ করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশী থানা স্থাপন না করা পর্যন্ত কোন স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।

পিরোজপুর মহকুমার উৎপত্তি

ক্রমশ জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ১৮৫৪ সালের সিংখালী বিদ্রোহ, উপুর্যপরি বলেশ্বর, দামোদর, কচুয়া ও কালিগঙ্গা নদীতে নৌ-ডাকাতির উত্পাত বন্ধ করার লক্ষ্যে ১৮৫৬ সালে বাখরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ, এ, আর আলেকজান্ডার বর্তমান পিরোজপুর অঞ্চলে একটি মহকুমা সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। কিন্তু ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ হওয়ার কারণে তা কিছুটা বিলম্বিত হয়। অতঃপর ১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা স্থাপিত হয়। এর আগে পিরোজপুর ছিল টগরা থানার একটি গ্রাম। তখন টগরা, কাউখালী ও কেওয়ারী থানা ছাড়াও তত্কালীন যশোর (বর্তমান বাগেরহাট) জেলার কচুয়া ছিল পিরোজপুর মহকুমার অন্তর্ভুক্ত। ১৮৬৩ সালে রেভিনিউ সার্ভের পরে বাগেরহাট মহকুমার সৃষ্টি হলে কচুয়া পিরোজপুর মহকুমা থেকে আলাদা হয়। পিরোজপুরে মহকুমা সৃষ্টির পূর্বেই কাউখালীতে মুন্সেফি আদালত অফিস স্থাপিত হয়েছিল। ফলে মহকুমার প্রথমদিকের কাজকর্ম ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চলতো কাউখালীতে। পিরোজপুর মুন্সেফি আদালত, মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেটের দফতর স্থাপনের জন্য রায়েরকাঠির জমিদার রাজকুমার রায় ও তদীয় পত্নী হেরিয়েটা লুকাস একটি দ্বিতল ভবন প্রদান করলে কাউখালী থেকে মহকুমা কার্যালয় পিরোজপুরে স্থানান্তরিত হয়। এ সময় টগরা থানা ও পাড়েরহাট থেকে স্থানান্তরিত হয় পিরোজপুরে। ১৮৬৫ সালে পিরোজপুরে সাবরেজিস্ট্রি অফিস, দাতব্য চিকিত্সালয় ও মুন্সেফ আদালতে দেওয়ানী মোকাদ্দমা শুরু হলে পূর্ণাঙ্গ মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, ১৭৮১ সাল থেকে ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত পিরোজপুর ছিল ঢাকা দেওয়ানী আদালতের অধীন এবং ১৭৯৭ থেকে ছিল বাখেরগঞ্জের অধীনে। কাউখালী মুন্সেফ আদালতের অধীনে প্রথমে কেওয়ারী ও টগরা পরে মঠবাড়িয়া থানা যুক্ত হয়। ১৮৭৩ সালে বিচারিক কাজের সুবিধার্থে জেলখানা, ১৮৮৫ সালের ১লা জুলাই পিরোজপুর মিউনিসিপ্যালিটি, ১৮৮৭ সালে লোকাল বোর্ড এবং উনিশ শতকের শেষের দিকে পিরোজপুরে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে পিরোজপুরে নাগরিক সুবিধাসহ শহর গড়ে ওঠে।

অন্যদিকে, জনবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে পিরোজপুর মহকুমার থানার সংখ্যা বৃদ্ধি ও পুনঃবিন্যাস করা হয়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে পিরোজপুর অঞ্চলে জনবৃদ্ধি ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশী সার্কেলগুলোর পুনঃবিন্যাস ঘটে এবং নতুন থানার সৃষ্টি হয়। ১৮২৪ সালে বারৈকরণ থানা বিভক্ত করে ঝালকাঠি ও নলছিটি থানা গঠন করা হয়। ১৮৫৯ সালে বর্তমান ভাণ্ডারিয়া, কাঠালিয়া, পাথরঘাটা ও বামনা থানা অঞ্চলের ১৫৬ ব.মা. আয়তন নিয়ে মঠবাড়িয়া থানার সৃষ্টি হয়। ১৮৬৩ সালে পিরোজপুর মহকুমা থেকে কচুয়া থানা আলাদা হয়ে তত্কালীন যশোর জেলাভুক্ত হয়। ১৮৭২ সালে মঠবাড়িয়া সার্কেলের অধীনে ভাণ্ডারিয়ায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। পরে ১৯১২ সালে পূর্ণাঙ্গ পুলিশ স্টেশনে পরিণত করা হয়। এ সময় প্রতিটি থানায় ১জন সাব ইন্সপেক্টর, ২ জন হেড কনস্টেবল ও ১২জন কনস্টেবল নিয়ে গঠিত হত। ১৮৬০ সালের পরে চৌকিদারী ও দফাদারী ব্যবস্থা চালু হলে থানার অধীনে তাদের ন্যস্ত করা হয়। ১৯০৬ সালে স্বরূপকাঠিকে বিভক্ত করে নাজিরপুর এবং ১৯১০ সালে বানারিপাড়া থানা সৃষ্টি হয়। পূর্বের কেওয়ারি থানা স্থানান্তরিত হয় স্বরূপকাঠিতে। ১৯৬৯ সালে বরগুনা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে বামনা ও পাথরঘাটা থানাকে বরগুনা মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭০ সালে ঝালকাঠি মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে পিরোজপুর মহকুমা হতে কাঁঠালিয়া থানাকে ঝালকাঠির সাথে যুক্ত করা হয়। ১৯৭৬ সালে পিরোজপুর সদর থানা থেকে আলাদা করে ইন্দুরকানি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে উপজেলা পদ্ধতি চালু হলে এ উপজেলার নামকরণ করা হয় 'জিয়ানগর'। ১৯৮৪ সালে মহকুমাগুলো জেলায় উন্নীত হলে ৭টি উপজেলার ৬৪৫টি গ্রাম নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত হয়। উপজেলাগুলো হচ্ছে ভাণ্ডারিয়া, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুর, নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) পিরোজপুর সদর ও ইন্দুরকানি। ১৯৮৮ সালে গঠিত হয়েছে পিরোজপুর জেলা পরিষদ।

জনমিতি

মোগল আমলে পিরোজপুর অঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল কম-বেশি এক লক্ষ। আইন-ই-আকবরীতে উল্লিখিত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও মগ-পর্তুগীজ আক্রমণের ফলে এ অঞ্চলের জনসংখ্যা একসময় হরাস পায়। কোম্পানি শাসনের শুরুতে ১৭৫৭ সালে জনসংখ্যা ছিল দেড় লক্ষ। ১৮০০ সালে তা দু' লক্ষে দাঁড়ায়। পিরোজপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠাকালে এলাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। ১৮৭২ সালের শীতকালে পিরোজপুরে প্রথম আদমশুমারি হয়। সে সময় জনসংখ্যা ছিল তিন লক্ষ তিষট্টি হাজার। পরে প্রতি দশ বছর পর পর আদম শুমারির প্রবর্তন হয় এবং জনবৃদ্ধি ও আয়তনের হরাস-বৃদ্ধির কারণে পিরোজপুরের জনসংখ্যার হরাস-বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০০১ সালের আদমশুমারীতে এ জেলার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১২৬৫২৫ জন।

সমাজ-সংস্কৃতি

পিরোজপুর জেলার সমাজ-সংস্কৃতি মূলত বৃহত্তর বরিশালের সাথে অভিন্ন। সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায় নমঃশূদ্র, বৈদ্য, কায়স্থ ও ব্রাহ্মণ শ্রেণীতে বিভক্ত। যা 'বরিশাল সমাজ' দ্বারা শাসিত। উনিশ শতকের শেষের দিকে পিরোজপুরে ব্রহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে ব্রহ্মপ্রভাব পরিলক্ষিত হয়। পিরোজপুরের মুসলমান সম্প্রদায়ের বড় অংশ ধর্মপ্রাণ ও সুন্নী মতাবলম্বী। অধবাসীদের মাঝে খান জাহান আলী, মৌলভী কেরামত আলী জৌনপুরী, শর্ষিণা, চরমোনাই ও মোকামিয়ার ধর্ম প্রচারকদের প্রভাব রয়েছে। পিরোজপুরের লোকাচার ও লোকসংস্কৃতিতে নদ-নদী ও প্রকৃতির প্রছন্ন প্রভাব আছে। বিশেষতঃ কৃষিজাত সংস্কৃতি ও লোকাচার প্রভাবিত সংস্কৃতি এ অঞ্চলের অপার বৈশিষ্ট্য।

পিরোজপুরের উপভাষা

পিরোজপুরের উপভাষা মূলতঃ 'বরিশাল ডায়েলেক্ট' বা বরিশালী কথ্য ভাষার অন্তর্ভুক্ত। যা ফরিদপুর ও দক্ষিণ বিক্রমপুরের কথ্য ভাষার সাথে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে পশ্চিম পিরোজপুর ও নাজিরপুরের সাথে বাগেরহাট ও খুলনার কথ্য ভাষার কিছুটা মিল রয়েছে। স্যার জর্জ গিয়ার্সন তার বিখ্যাত 'ল্যাংগুইজটিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া' গ্রন্থে পিরোজপুর এলাকার উপভাষার নমুনা দিয়েছেন। এ অঞ্চলে শব্দের আদিতে দন্তমূলীয়, উষ্ণধ্বনি শ-ষ-স পরিবর্তিত হয়ে মহাপ্রাণ ধ্বনি 'হ' রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন শিয়াল> হিয়াল, শালা> হালা।

লোকস্বভাব ও দ্রোহ চেতনা

প্রকৃতির সাথে লড়াই করা পিরোজপুর জেলার অধিবাসীরা স্বভাবতই সাহসী, দ্রোহী ও ধীমান। অষ্টাদশ শতকের সুগন্ধিয়া বিদ্রোহ, উনিশ শতকের তুষখালী ও সিংখালী বিদ্রোহ, মোলঙ্গী বিদ্রোহ এবং অপরাপর কৃষক বিদ্রোহ এ অঞ্চলের মানুষের অমিত সাহস ও সচেতনতার বিমূর্ত প্রতীক। ব্রিটিশ আমলে ফারায়েজী আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন, অনুশীলন সমিতি, খেলাফত আন্দোলন এবং পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি স্বাধিকার আন্দোলনে পিরোজপুর জেলার অধিবাসীরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। বিখ্যাত 'আগরতলা ষড়যন্ত্র' মামলার প্রধান আসামী লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনসহ(২ নং), সুবেদার তাজুল ইসলাম(৩২ নং) ও আবদুস সামাদ(৮ নং) ছিলেন পিরোজপুর জেলার অধিবাসী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন, মেজর মেহেদী আলী ইমাম ও লে. নূরুল হুদা সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে অবদান রাখেন।

প্রখ্যাত ব্যক্তি

  • আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মোফাসসিরে কোরআন, সাবেক সংসদ সদস্য।
  • মাওলানা আঃ রহীম, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ,রাজনীতিবিদ
  • খান বাহাদুর হাশেম আলী খান (১৯৮৮-১৯৬২), নেছারাবাদ- বরিশাল জেলা মুসলিম লীগ এবং কৃষক প্রজা পারটির সভাপতি ছিলেন। শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হকের মন্ত্রীসভায় সমবায় ও কৃষি খাতক মন্ত্রী (১৯৪১) ছিলেন।
  • শহীদ নূর হোসেন (১৯৬১ - ১০ নভেম্বর ১৯৮৭)মঠবাড়িয়া - রাজনৈতিক কর্মী ও শহীদ;১০ নভেম্বরকে বলা হয় শহীদ নূর হোসেন দিবস।তার খালি গায়ে লেখা ছিল "স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক"। রাজধানীর জিরো পয়েন্টে তিনি গুলিতে শহীদ হন।
  • খান সাহেব হাতেম আলী জমাদ্দার (১৮৭২-১৯৮২), মঠবাড়িয়া - বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য (১৯৩৭, ১৯৪৬, ১৯৬২); কে,এম লতীফ ইনস্টিটিউশনের প্রতিষ্ঠাতা।
  • মেজর (অবঃ) মেহেদী আলী ইমাম (মৃত্যুঃ ১৯৯৬),মঠবাড়িয়া- স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সেনানী, বীরবিক্রম।
  • করপোরাল আব্দুস সামাদ (মৃত্যু ২০১৮), মঠবাড়িয়া -আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৮ নং আসামী ছিলেন।
  • ডাঃ রুস্তুম আলী ফরাজী সংসদ সদশ্য-পিরোজপুর-৩

প্রতিষ্ঠাতা- ডাঃ রুস্তুম আলী ফরাজী কলেজ। মঠবাড়িয়া

  • সুবেদার তাজুল ইসলাম- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩২ নং আসামী ছিলেন।
  • তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, ভান্ডারিয়া (১৯১১-১৯৬৯) (সাংবাদিকতা ও রাজনীতি)- পিটি আই-এর পরিচালক, ইত্তেফাক পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা।
  • মাওলানা নেছার উদ্দীন নেছারাবাদ (১৮৭২-১৯৫২)- বহু ইসলামী গ্রন্থ প্রণেতা ও ছারছীনা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা।
  • আহসান হাবীব , (১৯১৭-১৯৮৫)- কবি ও সাংবাদিক
  • বেগম মতিয়া চৌধুরী ,নাজিরপুর রাজনীতি বর্তমান কৃষি মন্ত্রী, ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ বই রচনা করেন।
  • নিরোদ বিহারী নাগ, নাজিরপুর (১৯৩২-১৯৯১)- রাজনৈতিক ও সামাজিক পুষ্প নিরোধ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা।
  • এনায়েত হোসেন খান, (১৯৩৩-১৯৭৯) রাজনীতি সাবেক এমপি, ইউনিয়ন অফ ক্লারিক্যাল এ্যাসিট্যান্স অফ সেক্রেটারিয়েট ইন ইস্ট পাকিস্তান নামক এক শক্তিশালী সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন।
  • মোয়াজ্জেম হোসেন (১৯৩২-১৯৭১)- লেঃ কমান্ডার, স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা দেয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে তিনি একটি গুপ্ত বিপ্লবী সেল গঠন করেন।আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ২ নং আসামী ছিলেন।
  • মেজর জিয়াউদ্দিন আহমদ, পিরোজপুর, নবম সেক্টরের সাব- সেক্টর কমান্ডার সাবেক পৌর চেয়ারম্যান, আফতাব উদ্দিন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।
  • আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ভান্ডারিয়া- তিনি দশম জাতীয় সংসদ এর পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। এর আগে তিনি বন ও পরিবেশ, যোগাযোগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি পিরোজপুর-২ আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪, ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য হন।
  • শ ম রেজাউল করিম, নাজিরপুর - তিনি আইনজিবী ও বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি বর্তমানে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী।
  • ক্ষিতীশ চন্দ্র মন্ডল (১৮৩৯) নাজিরপুর- রাজনীতি সাবেক এমপি, সাবেক কৃষি ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী(১৯৭৩) ছিলেন
  • শহীদুল আলম নিরু (১৯৪৬-২০০৫)- রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। মাওলানা ভাসানীর ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
  • মোস্তফা জামাল হায়দার, (নাজিরপুর)- রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য।
  • জুয়েল আইচ, পিরোজপুর - যাদু শিল্পী অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার আন্তর্জাতিক যাদুশিল্পী।
  • খালিদ হাসান মিলু , পিরোজপুর - কণ্ঠশিল্পী জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র কণ্ঠশিল্পী।
  • দিলীপ বিশ্বাস, পিরোজপুর - জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক।
  • মুহাম্মদ মিজানুর রহমান - লেখক ও কথাসাহিত্যিক।
  • ফজলে মাহমুদ রাব্বি, জাতীয় দলের ক্রিকেটার
  • জায়েদ খান- অভিনেতা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
  • জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী - বাংলাদেশের একজন মডেল এবং সুন্দরী প্রতিযোগিতা মিস বাংলাদেশ ২০১৮-এর মুকুটধারী।

দর্শনীয় স্থান

  • ডিসি পার্ক
  • শ্রীগুরু সংঘ আশ্রম, ডুমরিতলা, পিরোজপুর
  • হুলারহাট নদী বন্দর
  • কদমতলা জর্জ হাই স্কুল
  • কবি আহসান হাবিব এর বাড়ি
  • আজিম ফরাজীর মাজার
  • সারেংকাঠী পিকনিক স্পট
  • আটঘর আমড়া বাগান
  • কুড়িয়ানা পেয়ারা বাজার
  • কুড়িয়ানা অনুকুল ঠাকুরের আশ্রম
  • রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি (রায়েরকাঠি রাজবাড়ি)
  • মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ
  • পারেড়হাট জমিদার বাড়ি
  • বলেশ্বর ঘাট শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ
  • স্বরুপকাঠীর পেয়ারা বাগান
  • ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক
  • সাপলেজা কুঠি বাড়ি
  • সোনাখালী জমিদার বাড়ি
  • ভাসমান সবজি ক্ষেত মুগারঝোর, বৈঠাকা
  • হরিণপালা রিভার ভিউ ইকোপার্ক, তেলিখালী

মুক্তিযুদ্ধ

সেক্টর ৯ নম্বর
সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিল
সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ
স্মৃতিস্তম্ভের সংখ্যা ৯ টি
মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৬৬০ জন প্রায়
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬১ জন (জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার)
উল্লেখযোগ্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আঃ রাজ্জাক (এস.ডি.ও), ফয়জুর রহমান আহমেদ (এস.ডি.পি.ও), হীরেন্দ্র মহাজন, ফজলুল হক খোকন, সাইফ মিজানুর রহমান (ম্যাজিস্ট্রেট), ওমর ফারুক (সভাপতি মহকুমা ছাত্রলীগ), ভাগিরথী সাহা, সামছুল হক, ড. আবুল খায়ের, গণপতি হালদার, শ্রী ললীত কুমার বল, ড. জোতির্ময় গুহঠাকুরতা, জহিরুদ্দিন বাহাদুর প্রমুখ।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা (জীবিত) এ,কে,এম,এ আউয়াল, মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ (মৃত) , এ্যাড: এম,এ মান্নান, গৌতম রায় চৌধুরী, এম,এ রববানী ফিরোজ প্রমুখ।
মুক্তিফৌজ গঠন ২৭ মার্চ ১৯৭১ বিকাল ৪ টা, পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুল মাঠ।
পিরোজপুর অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ১৯ মে ১৯৭১।
পিরোজপুর শত্রুমুক্ত দিবস ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (জুন, ২০১৪)। "Population Census 2011 (Barisal & Chittagong)" (PDF)। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (PDF)web.archive.org। Wayback Machine। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৯

আনুসঙ্গিক নিবন্ধ

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.