পিরোজপুর সদর উপজেলা

পিরোজপুর সদর উপজেলা বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা।

পিরোজপুর সদর
উপজেলা
পিরোজপুর সদর
পিরোজপুর সদর
বাংলাদেশে পিরোজপুর সদর উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৩৪′৫০″ উত্তর ৮৯°৫৯′২৮″ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল বিভাগ
জেলাপিরোজপুর জেলা
আয়তন
  মোট১৮৫.৮২ কিমি (৭১.৭৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা [1]
  মোট১,৬৩,৪৭০
  জনঘনত্ব৮৮০/কিমি (২৩০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৬৭%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
১০ ৭৯ ৮০
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

অবস্থান

পিরোজপুর সদর উপজেলা চারিদিকে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা, কাউখালী উপজেলা, জিয়ানগর উপজেলা, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা এবং বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলামোড়েলগঞ্জ উপজেলা দ্বারা পরিবেষ্টিত।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

পিরোজপুর সদর উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম পিরোজপুর সদর থানার আওতাধীন।

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর সদর উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৬৩,৪৭০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮০,৭০৪ জন এবং মহিলা ৮২,৭৬৬ জন। মোট পরিবার ৩৮,০১৭টি।[2]

শিক্ষা

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর সদর উপজেলার সাক্ষরতার হার ৭০.৩%।[2]

ইতিহাস

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে বাকেরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদী গর্ভে, মোহনায় ছোট ছোট দ্বীপাঞ্চল সৃষ্টি এবং এর দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনের জঙ্গল কাটা হলে আবাদযোগ্য ভূমির আয়তনও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহ, পিরোজপুরের কালীগঙ্গা, কচাঁ, বলেশ্বর প্রভৃতি নদীতে মগ জলদস্যুদের উপদ্রব, বিশেষত: ঐ সকল নদীতে চুরি, ডাকাতি, লুন্ঠনসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে সাধারণ প্রশাসন এবং ভূমি প্রশাসনের সুবিধাজনক অধ্যায় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধের বিচারকার্য তড়িৎ সম্পাদনের লক্ষ্যে পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। বাকেরগঞ্জ তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ.এ.আর. আলেকজান্ডার ১৮৫৬ সালের ২৪ এপ্রিল পিরোজপুরে মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব দেন।

১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা স্থাপিত হয়। ঐ সময় বর্তমান বাগেরহাট জেলা (মোড়লগঞ্জ, কচুয়া) পিরোজপুর মহকুমার অর্ন্তগত ছিল। ১৮৬৩ সালে বাগেরহাট একটি মহকুমা হিসেবে যশোর জেলার অর্ন্তগত হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই জেলা থেকে কাঠালিয়া (ঝালকাঠী), বামনা (বরগুনা), পাথরঘাটা (বরগুনা), বানারীপাড়া (বরিশাল) উপজেলা এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের সংগে সংগে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পাড়েরহাট বন্দর সংশ্লিষ্ট টগড়া হতে থানা এবং কাউখালী হতে মুন্সেফি আদালত পিরোজপুর সদরে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৭৯০ সালে গর্ভণর জেনারেল কর্ণওয়ালিশ ভারতে শাসন সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর প্রেক্ষিতে বাকেরগঞ্জে ১০টি থানা স্থাপন করা হয় তন্মধ্যে পিরোজপুরের অদূরে পাড়েরহাটের নিকটবর্তী টগরা থানা, কেওয়ারি থানা (বর্তমান নেছারাবাদ বা স্বরূপকাঠী ও বানারীপাড়া) এবং কাউখালী থানা অন্যতম। পরবর্তীতে কাউখালীতে একটি আবগারি অফিস ও সাব-রেজিষ্টার অফিস স্থাপন করা হয়। পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রায় ৪বছর পর ১৮৬৩ সালে বেঙ্গল রেভিনিউ এবং টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে সমাপ্ত হলে কচুয়া এবং মোড়েলগঞ্জকে পিরোজপুর মহকুমা থেকে কেটে নিয়ে বাগেরহাটকে মহকুমার মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। তখন পিরোজপুরের আয়তন সীমানা নির্ধারণ করা হয় ৭২৯ বর্গ মাইল। ১৮৬৫ সালের ১ এপ্রিল পিরোজপুর সাব-রেজিষ্টার অফিস, ১৮৬৫ সালে পিরোজপুর দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৮৬৫ সালে পিরোজপুর মিনিসিপ্যালিটি, ১৮৮৭ সালে লোকাল বোর্ড, ১৮৬৫ সালে স্থাপিত মাইনর স্কুল ১৮৮২ সালে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং ১৮৯৩ সালে নারী শিক্ষার জন্য আরবান ইংলিশ গালর্স হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহাকুমা ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৮৫ সালে পিরোজপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পিরোজপুর নামকরণের একটা সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তার মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলে এসে বর্তমান পিরোজপুরের পার্শ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। এ শিশুর নাম ছিল ফিরোজ এবং তার নাম অনুসারে নাম হয় ফিরোজপুর। কালে ভাষার পরিবর্তনে নাম হয়েছে পিরোজপুর।

জনসংখ্যার উপাত্ত

জনসংখ্যা- ১,৬৩,৪৭০ জন (প্রায়) পুরুষ- ৮০,৭০৪ জন (প্রায়), মহিলা- ৮২,৭৬৬ জন (প্রায়)। লোক সংখ্যার ঘনত্ব- ৯৭৯ জন প্রায় (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে)

শিক্ষা

অর্থনীতি

পিরোজপুর জেলা শিল্প কারখানায় সমৃদ্ধ নয়। বড় ধরনের কোন শিল্প কলকারখানা এখানে এখনো গড়ে ওঠেনি। জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশই কৃষিকাজে নিয়োজিত। এই জেলার কাউখালী লবন উৎপাদনে মোঘল ও বৃটিশ আমলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জেলায় ৪টি লবন মিল ছিল। বর্তমানে মেসার্স পল্লী সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, গণমান, নেছারাবাদ নামে মিলটি চালু আছে। বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরে মোট ১৬৭ টি প্লট আছে, যার মধ্যে বরাদ্দকৃত প্লট সংখ্যা ১৪৪টি, বরাদ্দকৃত শিল্প ইউনিট ৯৯টি, উৎপাদনরত শিল্প ইউনিট ৫৯ টি এবং ২৬টি প্লট বরাদ্দের অপেক্ষায় আছে। ২০০২ সালের তথ্যমতে দেখা যায় পিরোজপুর জেলায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থান প্রকল্পে বিতরণকৃত শিল্প ইউনিট ১১৪টি। আয়বর্ধক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন প্রকল্প যা ভান্ডারিয়াতে গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে বিতরণকৃত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ১৪৪টি।

অনেক পূর্বে পিরোজপুর সদর উপজেলায় একটি টেক্সাইল মিল নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

ব্যক্তিত্ব

  • অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ - স্বাধীনতার যুদ্ধে সাব সেক্টর কমান্ডার,
  • একেএমএ আউয়াল এমপি,
  • কবি আহসান হাবিব,
  • সংগীত শিল্পী মরহুম খালিদ হাসান মিলু
  • লে,ক,মোয়াজ্জেম হোসেন।

দর্শনীয় স্থান

আরও দেখুন

তথ্যসুত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে পিরোজপুর সদর"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ৩১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৫
  2. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (PDF)web.archive.org। Wayback Machine। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯

বহিঃসংযোগ


This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.