পাথরঘাটা উপজেলা

পাথরঘাটা উপজেলা বাংলাদেশের বরগুনা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যা ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি বরিশাল বিভাগের অধীন বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে একটি এবং বরগুনা জেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। পাথরঘাটা উপজেলার পূর্বে বিষখালী নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে বলেশ্বর নদীসুন্দরবন এবং উত্তরে বামনামঠবাড়িয়া উপজেলা অবস্থিত।

পাথরঘাটা
উপজেলা
উপর থেকে- বিষখালী নদীর তীর, সমুদ্রগামী মাছ ধরা ট্রলার, ম্যানগ্রোভ বন উজাড় করে গড়ে ওঠা আবাদি জমি, শুটকি মাছ শুকানোর মাঠ, ভাঙন কবলিত পাথরঘাটার একটি নদী।
পাথরঘাটা
পাথরঘাটা
বাংলাদেশে পাথরঘাটা উপজেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°২′ উত্তর ৮৯°৫৮′ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগবরিশাল বিভাগ
জেলাবরগুনা জেলা
আয়তন
  মোট৩৮৭.৩৬ কিমি (১৪৯.৫৬ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[1]
  মোট২,২৫,৫২৭
  জনঘনত্ব৫৮০/কিমি (১৫০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৬৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৮৭২০
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
১০ ০৪ ৮৫
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

এ উপজেলার অধিবাসীদের প্রধান পেশা মৎস্য আহরণ। এখানে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের মৎস্য অবতরণ ও পাইকারী মৎস্য বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।

পটভূমি

আরও দেখুন: বরগুনা জেলা

বৃটিশ শাসনামলে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য ১৮৭১ সনে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টি হয়। তখন এ মহকুমায় পটুয়াখালী, মির্জাগঞ্জ, গুলিশাখালী, বাউফলগলাচিপাসহ মোট ৫টি থানা ছিল। বামনা ও পাথরঘাটা ছিল মঠবাড়ীয়া থানাধীন। এ সময় বরগুনা ছিল গুলিসাখালী থানাধীন। পরে ঐ শতাব্দীর শেষ দিকে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বামনা, পাথরঘাটা, বরগুনা, বেতাগী ও খেপুপাড়া থানার সৃষ্টি হয়। থানা হিসাবে নামকরণের মাধ্যমে প্রথমবার মানচিত্রে বরগুনার নাম স্থান পায়।

চতুর্দশ শতাব্দীতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল ছিল বাকেরগঞ্জের অধীন। আঠারো শতকের মধ্যভাগে পূর্ব বাংলার আলোচিত ব্যক্তি ছিলেন আগাবাকের খান। তাঁর জমিদারি ছিল বাকলা চন্দ্রদ্বীপে। পটুয়াখালী ও বরিশালকে বলা হতো বাকলা চন্দ্রদ্বীপ। শাসনকার্য পরিচালনার জন্য বৃটিশ সরকার ১৭৯৭ সনে ৭ নং রেজুলেশন অনুসারে আগাবাকের খানের নামনুসারে বাকেরগঞ্জ জেলার সৃষ্টি করেন। শান্তি শৃংখলা রক্ষার জন্য এবং জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য উনিশ শতকের প্রথম দিকে বিশখালী নদীর তীরে ফুলঝুড়িতে একটা অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীকালে বঙ্গোপসাগরে চর পড়তে থাকে এবং সুন্দরবন অঞ্চল আবাদ শুরু হওয়ায় বিরাট জনপদের সৃষ্টি হয়।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মঠবাড়িয়া-বামনা-বেতাগী এলাকার কিছু লোকজন এখানে এসে সুন্দরী গাছের বাগান কেটে বসবাস শুরু করে। এরপর বৃটিশ সরকার ১৯১০ সনে এলাকার জায়গা জমির উপর নামজারী করে ১৯১৩ সনে ক্ষুদবার বন্যায় এসব এলাকার বসতিদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯২৬ সনে বৃটিশ সরকার ঢাকা এবং ফরিদপুর থেকে ব্যবসায়ীদের এনে পাথরঘাটা বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন। উল্লেখযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল দর্জি ও মিষ্টির দোকান। ১৯৪৭ সনের পর যখন ইংরেজ শাসন আমলের পরিসমাপ্তি ঘটে তখন থেকে পটুয়াখালী সাব ডিভিশনের বাকেরগঞ্জ মহাকুমার আওতায় এ এলাকার শাসনভার চলে। পরে ১৯৭১ এর স্বাধীনতার পর এলাকার কিছু কিছু রাস্তাঘাটের উন্নয়ন সাধিত হলেও ১৯৮৫ সালে যখন এরশাদ সরকার উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন তখন থেকেই এ এলাকার সড়ক যোগাযোগের সূত্রপাত ঘটে। তৎপূর্বে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌ-পথের পানসী নৌকা।

এক কালের সুন্দরবনের বনাঞ্চলের বরগুনা ক্রমান্বয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়। এ এলাকাতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা শুরু হয়। শাসন কার্যের সুবিধা, আয়তন ও লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬৯ সনে পটুয়াখালী জেলা সৃষ্টির সাথে মহকুমা শহর হিসাবে বরগুনা ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়। ১৯১৫ সালে পাথরঘাটা পিরোজপুর মহকুমার একটি থানা ছিল। পিরোজপুর মহকুমায় তখনকার যে ১০ টি থানার নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি ছিল পাথরঘাটা। কলাপাড়া, আমতলী, বরগুনা, বেতাগী এবং পিরোজপুর মহকুমার পাথরঘাটা এবং বামনা থানা নিয়ে বরগুনা মহকুমা গঠিত হয়। পরবর্তীকালে সময়ের প্রয়োজনে ১৯৮৪ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারী বরগুনা মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৩ সালের ২৪শে মার্চ পাথরঘাটা উপজেলায় উন্নীত হয়। এলাকার আদিবাসীরা বসতি স্থাপনের প্রাক্কালে বড় বড় গাছ কেটে বসত-বাড়ি তৈরী করেছিল। সেসব গাছের গোড়ার অংশ এখনো মাটির নীচে পাওয়া যায়, যা মাটির গভীর থেকে উত্তোলন করে এলাকার লোকজন জ্বালানী কাঠের চাহিদা মেটায়।[2]

নামকরণের ইতিহাস

পাথরঘাটার পূর্ব নাম বাধাঘাটা। তবে পাথরঘাটা নামকরণের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে প্রায় তেমন কিছুই জানা যায় না। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এ উপজেলার ভূ-অভ্যন্তরে বিদ্যমান পাথরের অস্তিত্ব থেকেই পাথরঘাটা নামকরণের সূচনা হয়েছিল। ১৯০৩ সনে এ নামকরণের সূত্রপাতঘটে মর্মে ধারণা করা হয়। তৎকালীন বৃটিশ আমলে চট্টগ্রাম মাইজ ভান্ডার শরীফ থেকে বাগেরহাটের খাজা খান জাহান আলী নদীপথে অলৌকিকভাবে বাগেরহাটে পাথর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিশখালী এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় এক রাতের জন্য ঘাটি স্থাপন করেছিলেন। উক্ত পাথরের কিয়দংশ এখানে রয়ে যায়। সে কারণেই এলাকাটি পাথরঘাটি নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে পাথরঘাটি নামটি পাথরঘাটা নামে নবরূপ লাভ করে। পাথরঘাটা নামের স্বার্থকতার প্রমাণস্বরূপ এখনো পাথরঘাটার মাটির তলদেশে পাথরের অসিতত্ব বিদ্যমান। যে কারণে এ এলাকায় ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন করা সম্ভব হয় না। ২২-২৪ ফুট গভীরে পাথরের সন্ধান মেলে।[3]

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

আরও দেখুন: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ পাথরঘাটার উপজেলা পরিষদ মাঠে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভ।

পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৯ নম্বর সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব সেক্টরের আওতায় ছিলো। বরগুনা মহাকুমায় থানাভিত্তিক যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য কয়েকটি দল গঠন করা হয়েছিল। উপ কমান্ডার মেহেদী আলী ইমাম এ দল গঠন করেন। এর মধ্যে বরগুনায় জুলফিকার আহম্মেদ জলফু এবং আঃ ছত্তারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বেতাগীতে দায়িত্ব দেয়া হয় নায়েক সুবেদার আঃ মোতালেব, হুমায়ুন কবির হিরুকে। বামনায় মোবারক মল্লিক, আঃ মজিদ মিয়া এবং পাথরঘাটায় আলতাফ ও আঃ খালেক, আমতলীর দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার হাতেম ও আনসার কমান্ডার আলতাফ হোসেন। সুবেদার হাতেমের ক্যাম্প ছিল আগাঠাকুর পাড়ায়। হঠাৎ কলাপাড়া থেকে আসা পাক সেনারা নীলগঞ্জ নদী হতে আগাঠাকুর পাড়ার ক্যাম্পে আক্রমন চালালে সুবেদার হাতেমের নেতৃত্বে সেখানে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ হয়। অপর দিকে বেতাগী থানার বদনীখালীতে সুবেদার আঃ মোতালেবের নেতৃত্বে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়।

১৯৭১ সালের ১লা ডিসেম্বর রাতের প্রথম প্রহরেই পাথরঘাটা আক্রমন করে উপজেলাটিকে হানাদার মুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি ট্রুপে ভাগ হয়ে ভোররাতে আক্রমন করে। প্রথমে পার্শ্ববর্তী বিষখালী নদীর অপরতীর থেকে আক্রমন শুরু হয়। পরে শহরের তিন দিক থেকে এক যোগে ফায়ারিং শুরু হলে রাজাকার সহ পাকিস্তান হানাদারবাহিনীর দোসররা পলিয়ে যায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর পাথরঘাটা হানাদানার মুক্ত হয়। পরবর্তীতে বিষখালী নদী পার হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় কিছু রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির সদস্য ও তাদের দোসরদের আটক করে পাথরঘাটা থানার উন্মুক্ত মাঠে গণ আদালতে তাদের হাজির করা হয়। গণ আদালতে যুদ্ধকালিন সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের গুলি দিয়ে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে হাতেম রশেদী, সেকান্দার ডাক্তার, হাসেম হাজী অন্যতম।[4][5][6][7]

প্রশাসন

পাথরঘাটা উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। ইউনিয়ন গুলো হলো- কাকচিড়া, কাঁঠালতলী, কালমেঘা, চর দুয়ানী, নাচনাপাড়া, পাথরঘাটারায়হানপুর[8] ১৮৫৯ সালের ২৪ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা গঠিত হয়। রোহিনী কুমার সেন এর লেখা বাকলা এবং ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এর লেখা বরিশালের বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯১৫ সালে পাথরঘাটা পিরোজপুর মহকুমার একটি থানা ছিল। পিরোজপুর মহকুমায় তখন ১০ টি থানার নাম পাওয়া যায়। থানাগুলোর মধ্যে একটি ছিল পাথরঘাটা। তখন পিরোজপুর মহকুমা বরিশাল জেলার আওতায় ছিল। ১৮৭১ সালে পিরোজপুর মহাকুমা থেকে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টি হয়। ১৯৬৯ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলা গঠিত হয়। এ সময় পিরোজপুর মহকুমার পাথরঘাটা ও বামনা থানা পটুয়াখালী জেলাভূক্ত হয়। বরগুনা মহকুমা পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত ছিল। বর্তমানে পাথরঘাটা বরগুনা জেলার একটি উপজেলা। ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বরগুনা মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। ১৯৮৩ সালের আগ পর্যন্ত পাথরঘাটা পটুয়াখালী জেলা ও বরগুনা মহকুমার অন্তর্গত ছিল। বাংলাদেশে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৮৩ সালের ২৪শে মার্চ এটি পাথরঘাটা উপজেলায় উন্নীত হয়। উপজেলার সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম পাথরঘাটা থানার আওতাধীন।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন এবং কালমেঘা ইউনিয়নের কিয়দাংশ নিয়ে ১৯৯০ সালের ৩১ মে তৃতীয় শ্রেণির (গ শ্রেণি) শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে পাথরঘাটা পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে এটি শ্রেণীর এবং আরো পরে এটি শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়।[9][10] পাথরঘাটা পৌরসভার বর্তমান মেয়র আনোয়ার হুসাইন আকন [11][12]

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাথরঘাটার সংসদীয় আসন বরগুনা-২। পাথরঘাটা, বামনাবেতাগী উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১১০ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। বরগুনা-২ নির্বাচনী এলাকা ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়েছিল, যখন পটুয়াখালী জেলাকে ভেঙ্গে দুটি জেলায় (বরগুনা ও পটুয়াখালী) ভাগ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০১ সালের আদমশুমারির প্রকাশিত জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য নির্বাচনী সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনের সীমানা পরিবর্তন হয়েছিল।

১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সৈয়দ রহমাতুর রব ইরতিজা আহসান জাতীয় পার্টি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৮১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে নুরুল ইসলাম মনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পরপর দুবার সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে এবং একই বছর জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গোলাম সরোয়ার হিরু প্রথম বার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে এবং দ্বিতীয় বার ইসলামী ঐক্যজোটের মনোনয়ন নিয়ে দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আবারো বিএনপির মনোনয়নে সাংসদ হন নুরুল ইসলাম মনি২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী হিসেবে সাংসদ হন গোলাম সবুর টুলু। তিনি ২০১৩ সালে ঢাকা যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে ঐবছরই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালের এ উপ-নির্বাচনে শওকত হাচানুর রহমান রিমন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪২০১৮ এর নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।[13] [14] [15] [16] [17] [18] [19] [20] [21][22][23]


১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে পাথরঘাটা–বরগুনা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহজাদা আবদুল মালেক খান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে অসহযোগ আন্দোলনে বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা ও কাঠালিয়া থানার নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমানের মন্ত্রীপরিষদের শিল্প প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন।

দর্শনীয় স্থান

  • লালদিয়া সমুদ্রসৈকত
  • হরিণঘাটা বন
  • হরিণঘাটা ইকোপার্ক
  • বিহঙ্গ দ্বীপ : এটি বলেশ্বর নদের মধ্যবর্তী স্থানে। যার পশ্চিমে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, পুর্বে পাথরঘাটা উপজেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর উত্তরে বলেশ্বর নদ। বিহঙ্গ দ্বীপে রয়েছে অংসখ্য পাখি, হরিণ, কালো ও সাদা বালু, লাল মাটি, লাল কাকড়া, কাশফুল।

জনসংখ্যার উপাত্ত

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পাথরঘাটা উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৬৩,৯২৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮০,৫৪৪ জন এবং মহিলা ৮৩,৩৮৩ জন। মোট পরিবার ৪৩,০৮৫টি।[8]

শিক্ষা

আরও দেখুন: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা

শিক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী পাথরঘাটা উপজেলায় শিক্ষার হার ৬৫%। যার মধ্যে পুরুষের শিক্ষার হার ৬৮% এবং মহিলাদের ৬২%।[24] ১৯৯৫ সালে পাথরঘাটার কলেজ রোডে প্রতিষ্ঠিত তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমী বরগুনা জেলার শ্রেষ্ঠ[25][26] এবং বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের অন্যতম সেরা বিদ্যালয়। পাথরঘাটা উপজেলায় ৯ টি কলেজ, ৪১ টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩ টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১২০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৮ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২০ টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও ২ টি কামিল মাদ্রাসা, ৪ টি ফাজিল, ৭ টি আলিম ও ১৬ টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে।[24] পাথরঘাটা উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে রয়েছে তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমী, পাথরঘাটা কে.এম. উচ্চ বিদ্যালয়, পাথরঘাটা কলেজ, সৈয়দ ফজলুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও বাদুরতলা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা

পাথরঘাটা উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্য সব শহরের মতই। সকল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রধানত পাঁচটি ধাপ রয়েছে: প্রাথমিক (১ থেকে ৫), নিম্ন মাধ্যমিক (৬ থেকে ৮), মাধ্যমিক (৯ থেকে ১০), উচ্চ মাধ্যমিক (১১ থেকে ১২) এবং উচ্চ শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত ৫ বছর মেয়াদী হয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনী পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়, ৩ বছর মেয়াদী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), ২ বছর মেয়াদী মাধ্যমিক শিক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি), ২ বছর মেয়াদী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয়।[27]

মূলত বাংলা ভাষায় পাঠদান করা হয় তবে ইংরেজি ব্যাপকভাবে পাঠদান ও ব্যবহৃত হয়। অনেক মুসলমান পরিবার তাদের সন্তানদের বিশেষায়িত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন মাদ্রাসাতে প্রেরণ করেন। মাদ্রাসাগুলোতেও প্রায় একই ধরনের ধাপ উত্তীর্ণ হতে হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোন শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। পাথরঘাটায় উচ্চ মাধ্যমিকের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য পাথরঘাটা কলেজ ও সৈয়দ ফজলুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রয়েছে যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

পাথরঘাটায় পাকা রাস্তার পরিমাণ ১৮২.১৪ কিঃমিঃ। অর্ধ পাকা রাস্তার পরিমাণ ১০৯.০৩ কিঃমিঃ। কাঁচা রাস্তার পরিমাণ ২০৯.১২ কিঃমিঃ। ব্রীজ/কালভার্টের সংখ্যা ৪৬৬ টি। নদীর সংখ্যা ০২ টি। [28]

ধর্মীয় উপাসনালয়

পাথরঘাটা উপজেলায় ৪৪৩ টি মসজিদ এবং ৫৬ টি মন্দির রয়েছে।[29]

স্বাস্থ্য

এ উপজেলায় ৫০ বেডের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্স রয়েছে। এছাড়া ১৯ টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এ উপজেলায় ডাক্তারের মঞ্জুরীকৃত পদ সংখ্যা ৩৭ টি। কিন্তু ৩৪ জন বর্তমানে কর্মরত আছেন। সিনিয়র নার্সের পদ ১৫ টি, কর্মরত আছেন ১৩ জন। এছাড়া একটি সহকারি নার্সের পদ রয়েছে। [28]

নদ-নদী

এই উপজেলাটির পূর্বে বিষখালী নদী, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে বলেশ্বর নদী অবস্থিত।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী

সংকল্প সংবাদ (নিয়মিত), পাথরঘাটা বার্তা (অধুনা বিলুপ্ত)। [29]

কৃতী ব্যক্তিত্ব

অর্থনীতি

পাথরঘাটা উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড মূলতঃ মৎস্য আহরণ ও কৃষি নির্ভর। এখানে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারী বাজার আছে। সাারাদেশে এ মাছ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। মাছ সংরক্ষণের জন্য আছে বরফকল। এছাড়াও এখানকার মানুষ কৃষি কাজের সাথেও জড়িত। ধান, আল, ডাল, সূর্যমূখী, আখ, মরিচ ইত্যাদি নানা অর্থকরী ফসল উৎপাদনের সাথে এখানকার মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। এসব সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষি ব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা হল লবণাক্ততা। তা সত্তেও এখানকার উৎপাদিত চাল, আলু,ডাল এখানকার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য অঞ্চলে রপ্তানি করা হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে পাথরঘাটা উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৫
  2. "বরগুনা জেলার নামকরণ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - Superintendent of police, Barguna"barguna.police.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৬
  3. "পাথরঘাটা উপজেলা" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৬
  4. "পাথরঘাটা হানাদারমুক্ত দিবস পালিত | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৭
  5. "পাথরঘাটা হানাদার মুক্ত দিবস আজ"BIJOY TV (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৭
  6. "আজ পাথরঘাটা মুক্ত দিবস"www.jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৭
  7. "আজ পাথরঘাটা মুক্ত দিবস"বাংলার চোখ
  8. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (PDF)web.archive.org। Wayback Machine। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০১৯
  9. BanglaNews24.com। "পাথরঘাটা লাইব্রেরিতে বইয়ের বদলে কাপ-পিরিচ! :: BanglaNews24.com mobile"banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৪
  10. "Local Government Engineering Department (LGED)"oldweb.lged.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৪
  11. "পাথরঘাটা পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর বৃন্দ"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২০ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৫
  12. "পাথরঘাটা পৌরসভার হল সড়কের বেহাল দশা"আমাদের সময়.কম - AmaderShomoy.com। ২০১৯-০৮-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৬
  13. "জাতীয় সংসদীয় আসনবিন্যাস (২০১৩) গেজেট" (PDF)। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ। ১৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৫
  14. "জাতীয় সংসদীয় আসনবিন্যাস (২০১৮) গেজেট" (PDF)। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ৩০ এপ্রিল ২০১৮। ৭ মে ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৮
  15. "৩য় জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকা" (PDF)বাংলাদেশ সংসদ। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৪
  16. "৪র্থ জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকা" (PDF)বাংলাদেশ সংসদ। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৪
  17. "Barguna-2"বাংলাদেশের নির্বাচনের ফলাফল ২০১৪ (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা ট্রিবিউন। ১৫ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  18. "Electoral Area Result Statistics: Barguna-2"আমারএমপি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৮
  19. "৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন" (PDF)বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ২৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮
  20. "মনোনয়ন জমাদানের তালিকা"বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  21. "Parliament Election Result of 1991,1996,2001 Bangladesh Election Information and Statistics"ভোট মনিটর নেটওয়ার্ক (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৮-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  22. "Constituency 110_10th_Bn"www.parliament.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-০৫
  23. "শওকত হাচানুর রহমান রিমন" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৫
  24. "পাথরঘাটা উপজেলা" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১২
  25. "টানা নয় বছর"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৮
  26. "পাথরঘাটা তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমি জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১১
  27. "পাথরঘাটা উপজেলা" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১২
  28. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (ফেব্রুয়ারি, ২০১৮)। "এক নজরে"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  29. "পাথরঘাটা উপজেলা"

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.