টেস্ট ক্রিকেট

টেস্ট ক্রিকেট (ইংরেজি: Test Cricket) ক্রিকেট খেলার দীর্ঘতম সংস্করণ ও এটি সর্বোচ্চ মানদণ্ডরূপে বিবেচিত।[1][2] ক্রিকেটবোদ্ধাদের কাছে প্রকৃত ক্রিকেট হিসেবে এটি পরিচিত। সাধারণত কোন একটি ক্রিকেট দলের খেলার সক্ষমতা যাচাইয়ের প্রধান মানদণ্ডরূপে বিবেচনায় আনা হয়।

মাঝে হালকা রঙের অংশটি ক্রিকেট পীচ, কালো রঙের ট্রাউজার পরিহিত মানুষ দুজন আম্পায়ার, সাদা রঙের পোশাক পরিহিত মানুষগুলো খেলোয়াড়

টেস্ট খেলায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক নির্ধারিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী টেস্ট মর্যাদাসম্পন্ন দলগুলো অংশ নিয়ে থাকে। উভয় দলে ১১জন করে খেলোয়াড় সর্বাধিক চার ইনিংসে অংশ নিতে পারে। সর্বোচ্চ পাঁচদিন পর্যন্ত এর কার্যকারীতা থাকে। অবশ্য অনেক পূর্বেকার কিছু কিছু টেস্টে এর ব্যতিক্রম ছিল ও অধিক সময় নিয়ে টেস্ট খেলা হতো। সচরাচর, টেস্ট খেলার মাধ্যমে কোন দলের খেলার যোগ্যতা ও সহনশীলতার সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষারূপে গণ্য করা হয়।[3][4][5] মানসিক ও শারীরিক পরীক্ষাকল্পে দীর্ঘ, কঠোরপ্রকৃতির খেলা থেকে ‘টেস্ট’ নামটি আহরণ করা হয়েছে। [6]

আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্ট খেলাটি ১৫-১৯ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল ৪৫ রানে বিজয়ী হয়েছিল।[7] টেস্ট ক্রিকেটের ১০০ বছর পূর্তিতে মেলবোর্নে ১২-১৭ মার্চ, ১৯৭৭ তারিখে আয়োজন করা হয়। ইতিহাসের প্রথম টেস্টের ন্যায় অস্ট্রেলিয়া দল সফরকারী ইংল্যান্ড দলকে ৪৫ রানের একই ব্যবধানে পরাভূত করেছিল।[8]

অক্টোবর, ২০১২ সালে আইসিসি টেস্ট খেলার নিয়মাবলী পুণর্গঠিত করে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার আয়োজন করে।[9] ২৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে অ্যাডিলেড ওভালে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলায় অংশ নিয়েছিল।[10]

জানুয়ারি, ২০১৪ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইসিসির সাধারণ সভায় নতুন সম্ভাব্য টেস্টভূক্ত দেশের অন্তর্ভূক্তির রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। এতে, আইসিসি আন্তঃমহাদেশীয় কাপ প্রতিযোগিতার বিজয়ী দলের সাথে র‍্যাঙ্কিংয়ের তলানীতে অবস্থানকারী টেস্ট দলের সাথে ৫-দিনের খেলা আয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়। যদি সহযোগী দলটি টেস্ট দলকে পরাজিত করতে পারে, তাহলে তারা নতুন টেস্ট দেশের মর্যাদা লাভসহ পূর্ণাঙ্গ সদস্যের মর্যাদা পাবে।[11]

১৮৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলীয় ক্ল্যারেন্স মুডি একগুচ্ছ খেলাকে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলার সংজ্ঞায় ফেলেছিলেন। ১৮৯১-৯২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়াদক্ষিণ আফ্রিকা, ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজনিউজিল্যান্ড সফরে ইংল্যান্ড দলের প্রতিনিধিত্বমূলক খেলাগুলোয় অংশগ্রহণে টেস্ট মর্যাদা পায়।

১৯৭০ সালে ইংল্যান্ড-বহিঃবিশ্ব একাদশের মধ্যকার পাঁচটি টেস্ট খেলা ইংল্যান্ডের মাটিতে সম্পন্ন হয়। এ খেলাগুলো মূলতঃ ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার আয়োজনের কথা ছিল। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গৃহীত বর্ণবাদ বিরোধী নীতি প্রবর্তনের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি। শুরুতে উইজডেনসহ কিছু রেকর্ড বুকে খেলাগুলোকে টেস্টের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ নীতি প্রবর্তিত হয় যে, শুধুমাত্র টেস্টভূক্ত দেশসমূহের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট খেলার আয়োজন করা হবে। এর ব্যতিক্রম রয়েছে ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত ছোট দেশসমূহের জোট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯২৮ সালে একত্রিত আকারে দল গঠন)। তাসত্ত্বেও, ২০০৫ সালে আইসিসি ছয়দিনের সুপার সিরিজকে নিয়মের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক টেস্ট খেলা হিসেবে ঘোষণা করে। অক্টোবর, ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়া-বহিঃবিশ্ব একাদশের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিছু ক্রিকেটবোদ্ধা ও বিল ফ্রিন্ডলের ন্যায় কিছু পরিসংখ্যানবিদ আইসিসির এ নিয়মকে অস্বীকার করেছেন ও এ রেকর্ডগুলোকে বাদ দিয়ে রেখেছেন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া-বহিঃবিশ্ব একাদশের খেলাগুলো টেস্টের মর্যাদা পায়নি। কেরি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের অংশ হিসেবে বাণিজ্যধর্মী সুপারটেস্টগুলো ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে ডব্লিউএসসি অস্ট্রেলিয়া, ডব্লিউএসসি বিশ্ব একাদশ ও ডব্লিউএসসি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে খেলানো হয়। এগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট খেলারূপে গণ্য করা হয় না।

লিঙ্গ সমতায়ণে মহিলাদের টেস্ট ক্রিকেটকে পুরুষদের টেস্ট ক্রিকেটের সমতুল্যরূপে গণ্য করা হয়। পুরুষদের তুলনায় এ খেলার ধরনে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তন্মধ্যে, চারদিনব্যাপী টেস্ট খেলার আয়োজন অন্যতম।

টেস্ট মর্যাদা

ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট অবস্থান করছে। তবে, পরিসংখ্যানগতভাবে এর তথ্যগুলো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক টেস্ট খেলার মর্যাদাপ্রাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো এতে অংশ নেয়। জানুয়ারি, ২০১৯ অনুযায়ী পর্যন্ত বারোটি জাতীয় দল টেস্ট মর্যাদায় আসীন। সাম্প্রতিককালে অর্থাৎ ২২ জুন, ২০১৭ তারিখে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।[12] জিম্বাবুয়ে দল স্বেচ্ছায় তাদের দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে টেস্ট মর্যাদা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টেস্ট আঙ্গিনা থেকে দূরে থাকার পর আগস্ট, ২০১১ সালে পুণরায় দলটি প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে।[13]

টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্ত দল

বর্তমানে পুরুষদের বারোটি দল টেস্ট খেলায় অংশ নিচ্ছে। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড বাদে সবগুলো দলই স্বাধীন দেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কোন দেশ বা কয়েকটি দেশের জোটকে টেস্টের মর্যাদা দিয়ে থাকে। যে সকল দলের টেস্ট মর্যাদা নেই, তারা ইচ্ছে করলে আইসিসি আন্তঃমহাদেশীয় কাপে অংশ নিতে পারে। এ প্রতিযোগিতাটি টেস্টের উপযোগী করে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের মর্যাদা দিয়ে গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক দলের টেস্ট অভিষেকের তালিকা নিচে দেয়া হয়েছে:

  1.  ইংল্যান্ড (১৫ মার্চ, ১৮৭৭)
  2.  অস্ট্রেলিয়া (১৫ মার্চ, ১৮৭৭)
  3.  দক্ষিণ আফ্রিকা (১২ মার্চ, ১৮৮৯)
  4.  ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২৩ জুন, ১৯২৮)
  5.  নিউজিল্যান্ড (১০ জানুয়ারি, ১৯৩০)
  6.  ভারত (২৫ জুন, ১৯৩২)
  7.  পাকিস্তান (১৬ অক্টোবর, ১৯৫২)
  8.  শ্রীলঙ্কা (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২)
  9.  জিম্বাবুয়ে (১৮ অক্টোবর, ১৯৯২)
  10.  বাংলাদেশ (১০ নভেম্বর, ২০০০)
  11.  আয়ারল্যান্ড (১১ মে, ২০১৮)
  12.  আফগানিস্তান (১৪ জুন, ২০১৮)

মে, ২০১৬ সালে আইসিসি ঘোষণা করে যে, ভবিষ্যতে দুই স্তরবিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট খেলা আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা চলছে।[14] এরফলে খেলায় ব্যাপক দর্শক সমাগমসহ শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর খেলা থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন হবে বলে আইসিসি আশাবাদী। ২০১৯ সালের শুরুতে উত্তরণ ও অবনমন ব্যবস্থা প্রচলন করা হবে। ফলশ্রুতিতে, আরও দেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাবে। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে আইসিসি প্রস্তাবিত দুই স্তরবিশিষ্ট খেলার ধারনা থেকে দূরে সরে আসে।[15] অক্টোবর, ২০১৬ সালে আইসিসি ভিন্ন ধাঁচের দুই স্তরবিশিষ্ট টেস্ট খেলা চালু করেছে। এ পদ্ধতিটি উত্তর আমেরিকার পেশাদার ক্রীড়ায় ব্যবহৃত পদ্ধতির অনুরূপ। প্রত্যেক দলই দুই বছরের মধ্যে একে-অপরের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ঐ সময়ের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দলগুলো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপার লড়াইয়ে প্লে-অফ খেলায় মুখোমুখি হবে।[16]

২২ জুন, ২০১৭ তারিখে আইসিসির বার্ষিক সভায় আফগানিস্তানআয়ারল্যান্ডকে টেস্ট মর্যাদা দেয়। দলগুলো যথাক্রমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ১১শ ও ১২শ পূর্ণাঙ্গ সদস্যভূক্ত হয়।[12] জুন, ২০১৮ সালে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে আফগান দল তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্টে অংশ নেয়।[17]

খেলা পরিচালনা

খেলার সময়সীমা

টেস্ট ক্রিকেটের একটি দিনে তিনটি অধিবেশনে দুই ঘন্টাব্যাপী সর্বমোট ছয় ঘন্টা সময় নিয়ে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তন্মধ্যে, মধ্যাহ্নভোজনের জন্যে ৪০ মিনিট ও চাবিরতির জন্যে ২০ মিনিটের বিরতি দেয়া হয়। তবে, অধিবেশনগুলোর সময় ও বিরতিকাল কিছুক্ষেত্রে পরিবর্তিত হতে পারে। খারাপ আবহাওয়া বা নির্ধারিত বিরতির পূর্বেই ইনিংস শেষ হয়ে গেলে এর পরপরই বিরতি দেয়া হয়। খারাপ আবহাওয়ার কারণে খেলার সময় নষ্ট হয়ে গেলে ঘাটতি পূরণে অধিবেশনগুলোর সময় সমন্বয় করা হতে পারে। নির্ধারিত চাবিরতির প্রাক্কালে ব্যাটিংকারী দলের নয় উইকেটের পতন ঘটলে অল-আউটের জন্যে আরও ৩০ মিনিট দেরী করা যেতে পারে।[18] যদি খারাপ আবহাওয়ার কারেণ ৯০ বা ততোধিক ওভার সম্পন্ন না হয় তাহলে শেষ অধিবেশনে আরও ৩০ মিনিট বৃদ্ধি করা যেতে পারে।[19] ৫ম দিনের চূড়ান্ত অধিবেশনে আম্পায়ারদ্বয় খেলার ফলাফল আনয়ণে আরও ৩০ মিনিট বৃদ্ধি করতে পারেন।[20]

বর্তমানে টেস্ট খেলা ধারাবাহিকভাবে পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। তবে, টেস্ট ক্রিকেট প্রচলনের শুরুরদিকে খেলাগুলো তিন কিংবা চারদিনব্যাপী হতো। ১৯৭৩ সালে নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তানের মধ্যকার টেস্ট সর্বশেষ চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[21] ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত প্রায়শঃই রোববারকে ঘিরে বিশ্রামবার রাখা হতো। এছাড়াও, অসীম সময়ের টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হতো। এ ধরনের টেস্টে খেলার ফলাফল না আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলতো। শেষ অনির্দিষ্টকালের খেলাটি হয়েছিল ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে। সে বার ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের খেলাটি শেষপর্যন্ত থেমেছিল ১০দিন পর ইংল্যান্ডের জাহাজ ধরার জন্য।[22]

২০০৫ সালে বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া দল ছয় দিনের খেলায় অংশ নেয়। আইসিসি এ খেলাটিকে টেস্ট মর্যাদা দেয়। তবে, খেলার ফলাফল চারদিনেই সম্পন্ন হয়ে যায়। অক্টোবর, ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার একমাত্র টেস্টে অনুরোধসাপেক্ষে চারদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে শুরু হলেও ২৭ ডিসেম্বর তারিখে দুইদিনেই খেলাটি শেষ হয়ে যায়।[23] ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের পূর্ব-পর্যন্ত চারদিনব্যাপী টেস্ট খেলা আয়োজনের বিষয়টি আইসিসি কর্তৃপক্ষ পরীক্ষামূলকভাবে আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করছে।[24]

বৈশ্বিক ক্রিকেট পরিচালনা পরিষদ আইসিসি কর্তৃপক্ষ দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলা আয়োজনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে।[25] ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলা আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করে।[9] নভেম্বর, ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।[10]

খেলা

ইনিংসের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক ইনিংসে একদল ব্যাট করে ও অন্য দল বোলিং কিংবা মাঠে অবস্থান করে। সচরাচর একটি টেস্ট খেলায় চারটি ইনিংস খেলা হয়। প্রত্যেক দলই দুইবার ব্যাট ও দুইবার বোলিং করার সুযোগ পায়। প্রথম দিনের খেলা শুরুর পূর্বে ম্যাচ রেফারির উপস্থিতিতে মুদ্রা নিক্ষেপের মাধ্যমে টস করে। টসে বিজয়ী অধিনায়ক দলকে ব্যাটিং কিংবা বোলিং করার বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।

নিচের অংশে প্রথমে ব্যাটিংকারী দলকে ‘ক দল’ ও প্রতিপক্ষকে ‘খ দলরূপে’ চিহ্নিত করা হয়েছে।

সাধারণতঃ দলগুলো প্রত্যেক ইনিংস শেষে অবস্থান বদল করে। যেমন: ব্যাটিংকারী ‘ক’ দলের ইনিংস শেষ না হওয়া অবধি ‘খ’ দল বোলিং করতে থাকবে। এরপর ‘খ’ দল ব্যাট করতে নামবে ও ‘ক’ দল বোলিং করবে। ‘খ’ দলের ইনিংস শেষ হলে পুণরায় ‘ক’ দল তাদের দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামবে ও ‘খ’ দল বোলিং করতে থাকবে। এরপর ‘খ’ দল ব্যাটিংয়ে নামবে ও ‘ক’ দল বোলিং করবে। দুই ইনিংসে সংগৃহীত মোট রানের ব্যবধানে বিজয়ী দল নির্ধারিত হবে।

একটি দলের ইনিংস নিম্নবর্ণিত যে-কোন একটিভাবে শেষ হতে পারে:[26]

  • একটি দল ‘অল-আউট’ হলে। এ সাধারণ বিষয়টিতে একটি দলের এগারো জন ব্যাটসম্যানের মধ্যে দশ উইকেটের সবগুলো পতন ঘটবে। মাঝে-মধ্যে আঘাতজনিত কারণে এক বা একাধিক ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে অপারগতা প্রকাশ করলেও অল-আউটরূপে বিবেচিত হবে।
  • দলীয় অধিনায়ক ইনিংস শেষ করার জন্য ঘোষণার সাহায্য নিতে পারেন। পর্যাপ্ত রান সংগৃহীত হয়েছে কিংবা কৌশলগত কারণে জয়ের লক্ষ্যে ইনিংস ঘোষণা করা হয়। ইনিংস শুরুর পূর্বেই যদি ঘোষণার বিষয়টি এসে পড়ে তাহলে তা অনুসরণের পর্যায়ে এসে যায় যা ফলো-অন নামে পরিচিতি পায়।
  • চতুর্থবার ব্যাটিংকারী দলকে মূলতঃ জয়ের লক্ষ্যমাত্রার দিকে অগ্রসর হতে হয়।
  • খেলায় নির্ধারিত সময়সীমা অতিবাহিত হলে।

যদি প্রথম ইনিংস সম্পন্ন হবার পর ‘খ’ দলের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ ‘ক’ দলের ইনিংসের চেয়ে ২০০ বা ততোধিক রানের পার্থক্য হয়, তাহলে ‘ক’ দলের অধিনায়ক ইচ্ছে করলে ‘খ’ দলকে পরমুহুর্তেই পুণরায় তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার কথা জানাতে পারেন। এ ধরনের জোরপূর্বক অথচ অনিচ্ছাসত্ত্বেও খেলাকে ফলো-অন নামে অভিহিত করা হয়।[27] এ পর্যায়ে তৃতীয় ও চতুর্থ ইনিংসের ধারাবাহিকতা পরিবর্তিত হয়ে যায়। খুব কমক্ষেত্রেই ফলো-অনের কবলে পড়া দলকে খেলায় জয়ী হতে দেখা যায়। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র তিনবার এজাতীয় ঘটনা ঘটেছে। ২৮৫বারেরও অধিক খেলায় ফলো-অনে ফেলা অস্ট্রেলিয়া দল সবগুলো ক্ষেত্রে পরাজয়বরণ করেছিল। ১৮৯৪ ও ১৯৮১ সালে ইংল্যান্ডের কাছে ও ২০০১ সালে ভারতের কাছে তারা পরাজিত হয়েছিল।[28]

খারাপ আবহাওয়া কিংবা মন্দালোকের ন্যায় অন্যান্য বিষয়ের কারণে টেস্ট খেলার প্রথম দিনের পুরোটা সময় নষ্ট হয়ে গেলে ক দল খ দলের তুলনায় ১৫০ বা অধিক রানের পার্থক্যের কারণে ফলো-অনে পাঠাতে পারে। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড দল ইংল্যান্ড গমন করে ও হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বৃষ্টির কারণে প্রথম দিন নষ্ট হলে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল প্রথমে ব্যাটিং করে এ সুযোগ পেয়েছিল।[29] নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং করে ইংল্যান্ডের তুলনায় ১৮০ রানে পিছিয়ে ছিল। এরফলে ইংল্যান্ড দল তাদেরকে ফলো-অনে পাঠানোর সুযোগ পেয়েও তারা তা করেনি। এ ঘটনাটি চারদিনের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার অনুরূপ যাতে ১৫০ বা ততোধিক রানের পার্থক্যের কারণে ফলো-অনে পাঠানো হয়। যদি টেস্ট খেলা ২ দিন বা কম হয় তখন ১০০ রানের পার্থক্যকে প্রধান মানদণ্ড ধরা হয়।

৮০ ওভার শেষে বোলিংকারী দলের অধিনায়ক ইচ্ছে করলে নতুন বল সংগ্রহ করতে পারেন।[30] সাধারণতঃ দলনেতা এ সুযোগকে কাজে লাগান। পুরনো বলের তুলনায় নতুন বল বেশ শক্ত ও মসৃণ আকারে হয়। ফলে, দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের অনুকূলে বাউন্সের জন্য নতুন বল ব্যবহার করা হয়। তবে পুরনো বল খসখসে হয়ে পড়ায় স্পিন বোলার রিভার্স সুইংয়ে সফলতা পান। এ ক্ষেত্রে নতুন বল নেবার ক্ষেত্রে তিনি দেরী করতে পারেন। নতুন বল নেবার আরও ৮০ ওভার পর আরো একটি নতুন বল নেয়া যাবে।

টেস্ট খেলায় নিম্নবর্ণিত ছয় ধরনের ফলাফলের যে-কোন একটি হতে পারে:

  • ‘চারটি ইনিংসের সব কয়টি সম্পন্ন হলে’ - চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংকারী দল প্রতিপক্ষের রান সংখ্যা অতিক্রমের পূর্বেই অল-আউট হলে তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিংকারী ‘ক দল’ রান পার্থক্যের কারণে বিজয়ী হবে। যেমন: ‘ক দল’ ৫৮ রানে বিজয়ী হয়েছে। অত্যন্ত দূর্লভ ঘটনা হিসেবে দুই সহস্রাধিক টেস্টে মাত্র দুইবার উভয় দলের রান সংখ্যা সমান হয়ে টাইয়ে পরিণত হয়েছে।
  • ‘চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিংকারী দল কোন কারণে প্রতিপক্ষের সর্বমোট রানের সংগ্রহকে ছাঁপিয়ে গেলে’ - খেলাটি শেষ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে চতুর্থ ইনংসে ব্যাটিংকারী দলের উইকেট পতনের পর যে কয়টি উইকেট অবশিষ্ট থাকবে তা জয়ের মানদণ্ড হবে। যেমন: ‘খ দল’ নয় উইকেটে জয়ী হয়েছে।
  • ‘তৃতীয় ইনিংসে কোন দল দুইবার ব্যাটিং করার পরও প্রতিপক্ষের একবার ইনিংসে সংগৃহীত রানের চেয়েও কম সংগ্রহ করলে’ - চতুর্থ ইনিংসের খেলা ছাড়াই শেষ হয়ে যাবে। একবার ব্যাটিংকারী দলকে ইনিংসসহ প্রতিপক্ষের দুই ইনিংসে সংগৃহীত রানের সাথে ব্যবধান করে জয় নির্ধারণ করা হবে। যেমন: ‘খ দল’ ইনিংস ও ২৯৩ রানের ব্যবধানে জয়ী। অথবা, ‘ক দল’ ইনিংস ও ২০৩ রানে বিজয়ী।
  • ‘সময়ের অভাবে খেলায় ফলাফল না আসা’র বিষয়টি স্বাভাবিক ঘটনারূপে বিবেচিত। খেলার শেষদিনে এটি হয়ে থাকে ও ফলাফল ড্র আকারে উল্লেখ করা হয়। এ ফলাফলে কোন দলকেই বিজয়ীরূপে ঘোষণা করা হয় না। খেলাটিতে কোন দল ভালো অবস্থানে ছিল তা বিবেচ্য বিষয় নয়। ড্র হবার ক্ষেত্রে বৃষ্টি প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আবহাওয়ার এ প্রভাব ছাড়াও কোন দলের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণেও এটি হতে পারে।
  • ‘মাঠ খেলার অনুপযোগী হলে খেলাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।’ এ ধরনের ঘটনা তিনবার হয়েছে। ১৯৭৫ সালে লিডসের হেডিংলিতে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার খেলাটি ভাংচুর ও মারামারিতে পরিত্যক্ত হয়।[31] ১৯৯৮ সালে জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবিনা পার্কে সিরিজের প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলাটি বিপজ্জ্বনক মাঠ হিসেব ঘোষণা করা হয়।[32] ২০০৯ সালে অ্যান্টিগুয়ার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বিপজ্জ্বনক মাঠরূপে ঘোষণা করে খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।[33]
  • ‘অপারগতা প্রকাশের মাধ্যমে খেলার ফলাফল প্রদান।’ কোন একটি দল খেলার মাঠে প্রবেশ করতে ও খেলতে অপারগতা প্রকাশ করলে আম্পায়ারদ্বয় প্রতিপক্ষকে খেলায় বিজয়ীরূপে ঘোষণা করবেন।[34] টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একবারই এ জাতীয় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ২০০৬ সালে পাকিস্তান দল ইংল্যান্ড গমন করে। ওভালে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে বলে ক্ষত সৃষ্টির বিতর্কে পাকিস্তান দল জড়িয়ে পড়ে।[35][36]

প্রতিযোগিতা

টেস্ট ক্রিকেট খেলা প্রায়শঃই দুই দলের মধ্যকার একগুচ্ছ খেলা যা সিরিজ আকারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাধারণতঃ সবগুলো খেলাই স্বাগতিক দেশে আয়োজন করা হয়। প্রায়শঃই বিজয়ী দলকে চিরস্থায়ী ট্রফি পুরস্কার হিসেবে হস্তান্তর করা হয়। সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্রফি হিসেবে রয়েছে অ্যাশেজ। এ ট্রফি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার বিজয়ীকে দেয়া হয়। টেস্ট ক্রিকেটের দ্বি-পক্ষীয় ব্যবস্থার ব্যতিক্রম হিসেবে ১৯১২ সালের ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ১৯৯৮-৯৯২০০১-০২ মৌসুমের এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতাগুলোয় বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান দল অংশ নিয়েছিল।

টেস্ট সিরিজে খেলার সংখ্যা এক থেকে সাতটি পর্যন্ত হতে পারে।[37] ১৯৯০-এর দশকের শুরুরদিক পর্যন্ত [38] দুইটি জাতীয় ক্রিকেট সংস্থার ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক দলগুলোর মধ্যকার টেস্ট সিরিজ আয়োজনে স্বাগতিক দল কর্তৃক আম্পায়ারদেরকে মনোনয়ন দেয়া হতো। টেস্ট ক্রিকেটে অধিকসংখ্যক দেশের অংশগ্রহণএকদিনের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার সাথে মিল রেখে আইসিসি দর্শকদের আগ্রহের কথা বিবেচেনায় এনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির প্রবর্তন করে। এতে বারোটি টেস্ট দলের সকলেই ছয় বছরে একে-অপরের বিপক্ষে মোকাবেলা করবে। এছাড়াও, আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাঙ্কিং ব্যবস্থা রয়েছে। সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিংধারী দলকে ট্রফি প্রদান করা হয়। এ পদ্ধতির ফলে আইসিসি থেকে আম্পায়ারদেরকে খেলা পরিচালনা দায়িত্ব দেয়া হয়। এগারো আম্পায়ার নিয়ে গঠিত এলিট প্যানেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ প্যানেলের সাথে অতিরিক্ত সহায়কের ভূমিকায় রয়েছে আন্তর্জাতিক প্যানেল। এতে প্রত্যেকটি টেস্টখেলুড়েভূক্ত দেশ থেকে তিনজনকে আম্পায়ার হিসেবে রাখা হয়েছে। এলিট আম্পায়ারেরা প্রায় সকল টেস্ট খেলা পরিচালনা করেন। সচরাচর তারা নিজদেশের খেলায় যুক্ত হতে পারেন না।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ

আইসিসি কর্তৃক টেস্ট খেলার জন্যে অদ্যাবধি কোন বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়নি। ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণ ও চ্যাম্পিয়নশীপের জন্যে কয়েক বছরের প্রয়োজন পড়বে তাই এ ধারনা বাদ হয়ে যায়। তাসত্ত্বেও, ২০১৯-২০২১ সময়কালে ২ বছরের মধ্যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এ পরিকল্পনাটি ২০১৩ ও ২০১৭ সালে দুইবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ২০১৯-২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ আয়োজনে বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বি-পক্ষীয় সিরিজ আয়োজন করা হবে। এতে এক পক্ষ স্বাগতিক ও অন্য পক্ষ অতিথি দল থাকবে। সিরিজের আকার ২ থেকে ৫ খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। সিরিজের আকারের উপর পয়েন্ট সংখ্যা নির্ধারিত হবে।

আন্তর্জাতিক টেস্ট র‌্যাঙ্কিং

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ
অবস্থানদলের নামখেলার সংখ্যাপয়েন্টরেটিং
 ভারত৩২৩৬৩১১১৩
 নিউজিল্যান্ড২৩২৫৪৭১১১
 দক্ষিণ আফ্রিকা২৭২৯১৭১০৮
 ইংল্যান্ড৩৬৩৭৭৮১০৫
 অস্ট্রেলিয়া২৭২৬৪০৯৮
 শ্রীলঙ্কা৩৭৩৪৬২৯৪
 পাকিস্তান২৭২২৬৩৮৪
 ওয়েস্ট ইন্ডিজ২৯২৩৮১৮২
 বাংলাদেশ২২১৪৩৮৬৫
১০  জিম্বাবুয়ে১৪০১৬
 আফগানিস্তান*৫০২৫
 আয়ারল্যান্ড*
*দেশগুলো পর্যাপ্ত খেলায় অংশগ্রহণ না করায় আনুষ্ঠানিক টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা পায়নি।
সূত্র: ক্রিকইনফো র‍্যাঙ্কিং, আইসিসি র‌্যাঙ্কিং, ২৩ আগস্ট, ২০১৯
"খেলা" বলতে মে মাসের পর থেকে ১২-১৪ মাসে অংশগ্রহণকৃত খেলার সংখ্যা + সিরিজের সংখ্যা। এছাড়াও, এর পূর্বেকার ২৪ মাসের অর্ধেক খেলার সংখ্যা।

শুরুরদিকের ইতিহাস

১৮শ শতাব্দীর শেষদিকে ‘ইংল্যান্ড নামধারী দলগুলো’ খেলতে শুরু করে। কিন্তু ঐ দলগুলো প্রকৃতভাবে প্রতিনিধিত্বকারী দল ছিল না। ফরাসী বিপ্লব ও আমেরিকার গৃহযুদ্ধের কারণে শুরুরদিকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় বিঘ্ন ঘটায়। ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৪৪ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম কানাডার মধ্যে প্রথমদিকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[39] তবে, খেলাটি আনুষ্ঠানিকভাবে টেস্ট খেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলগুলো মূলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফর করতো। অস্ট্রেলীয় আদিবাসী দল প্রথমবারের মতো ১৮৬৮ সালে ইংল্যান্ডে আসে।

দুইটি ইংরেজ প্রতিদ্বন্দ্বী দল ১৮৭৭ সালের শুরুরদিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়। জেমস লিলিহোয়াইট পেশাদার দল ও ফ্রেড গ্রেস শৌখিন দলের নেতৃত্বে ছিলেন। গ্রেসের সফরটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। লিলিহোয়াইটের দল ১৮৭৬-৭৭ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া গমন করে।সম্মিলিত অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে দুইটি খেলা পরবর্তীকালে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক টেস্ট খেলার মর্যাদা পায়। প্রথম খেলায় অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রানে জয় পায় ও দ্বিতীয়টি ইংল্যান্ড জয়ী হয়। ফিরতি সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভিত্তি তৈরি হয়। ১৮৮২ সালে অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ড গমন করে। চলমান খেলায় অ্যাশেজের উৎপত্তি ঘটে। বিস্ময়করভাবে ইংল্যান্ড দল পরাজিত হলে স্পোর্টিং টাইমসে পরদিন ‘বিদ্রুপাত্মক শোকসংবাদ’ প্রকাশিত হয়। দেহটি দাহ করা হবে ও ছাঁই অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। এভাবেই অ্যাশেজ পাত্র তৈরি করা হয়। ১৮৮৪-৮৫ মৌসুমে অনুষ্ঠিত সিরিজটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পাঁচ খেলার অধিক খেলা আয়োজন করা হয়েছিল। ১৯০১ সালে শ এ প্রসঙ্গে লিখেন যে, এ দলটিকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ছিল।

১৮৮৮-৮৯ মৌসুমে তৃতীয় দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা দল টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেয়। এ পর্যায়ে দলটি ইংল্যান্ড সফরে তুলনামূলকভাবে দূর্বল ইংরেজ দলের বিপক্ষে মোকাবেলা করে।

চিরস্থায়ী ট্রফি

নিম্নবর্ণিত ট্রফিগুলো টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরস্থায়ী ট্রফিরূপে বিবেচিত:

ট্রফির নামদল-১দল-২প্রথম মুখোমুখিমন্তব্য
দি অ্যাশেজ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া১৮৮২-৮৩
অ্যান্থনি ডি মেলো ট্রফি ভারত ইংল্যান্ড১৯৫১[40]ভারতে অনুষ্ঠিত সিরিজ
ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অস্ট্রেলিয়া১৯৬০-৬১
উইজডেন ট্রফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ড১৯৬৩
ট্রান্স-তাসমান ট্রফি নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া১৯৮৫-৮৬
বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ভারত অস্ট্রেলিয়া১৯৯৬-৯৭
সাউদার্ন ক্রস ট্রফি অস্ট্রেলিয়া জিম্বাবুয়ে১৯৯৯-২০০০[41]
স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ট্রফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দক্ষিণ আফ্রিকা২০০০-০১[42]
ক্লাইভ লয়েড ট্রফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিম্বাবুয়ে২০০১[43]
ব্যাসিল ডি’অলিভেইরা ট্রফি দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ড২০০৪-০৫
পতৌদি ট্রফি ভারত ইংল্যান্ড২০০৭ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজ
ওয়ার্ন-মুরালিধরন ট্রফি শ্রীলঙ্কা অস্ট্রেলিয়া২০০৭-০৮
ফ্রিডম ট্রফি ভারত দক্ষিণ আফ্রিকা২০১৫-১৬
সোবার্স-তিসেরা ট্রফি ওয়েস্ট ইন্ডিজ শ্রীলঙ্কা২০১৫-১৬
গাঙ্গুলী-দূর্জয় ট্রফি ভারত বাংলাদেশ২০১৭[44]

টেস্ট সেঞ্চুরি

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো সেঞ্চুরির সৌভাগ্য অর্জন করেন অস্ট্রেলিয়ার ডানহাতি ব্যাটসম্যান চার্লস ব্যানারম্যান। ১৫-১৯ মার্চ, ১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার বিশ্বের ১ম টেস্টে ১৬৫ রান করে অবসর নিয়েছিলেন তিনি।[45] ১৮৮০ সালে কেনিংটন ওভালে প্রথমবারের মতো শতরানের জুটি গড়েন ইংল্যান্ডের ডব্লিউ. জি. গ্রেস - এ. পি. লুকাস। ৬-৮ সেপ্টেম্বর, ১৮৮০ সালে তারা এ শতরানের জুটিটি গড়েন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক ইনিংসে ৪০০ রান করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং বিস্ময় ব্রায়ান লারা। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান শচীন তেন্ডুলকর ৫১টি সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ডের অধিকার অর্জন করেছেন।

বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটার

ব্যাটসম্যান
আইসিসি শীর্ষ ১০ টেস্ট ব্যাটসম্যান
অবস্থাননামরেটিং
বিরাট কোহলি৯২২
কেন উইলিয়ামসন৯১৫
চেতেশ্বর পুজারা৮৮১
স্টিভ স্মিথ৮৫৭
জো রুট৭৬৩
ডেভিড ওয়ার্নার৭৫৬
হেনরি নিকোলস৭৫৫
এইডেন মার্করাম৭১৯
কুইন্টন ডি কক৭১৮
১০ ফাফ দু প্লেসিস৭০২
তথ্যসূত্র: আইসিসি র‌্যাঙ্কিংস, ৩ মার্চ, ২০১৯
বোলার
আইসিসি শীর্ষ ১০ টেস্ট বোলার
অবস্থানখেলোয়াড়ের নামরেটিং
প্যাট কামিন্স৮৭৮
জেমস অ্যান্ডারসন৮৬২
কাগিসো রাবাদা৮৫১
ভার্নন ফিল্যান্ডার৮১৩
রবীন্দ্র জাদেজা৭৯৪
মোহাম্মদ আব্বাস৭৭০
জেসন হোল্ডার৭৭০
ট্রেন্ট বোল্ট৭৬৯
টিম সাউদি৭৬৬
১০ রবিচন্দ্রন অশ্বিন৭৬৩
সূত্র: আইসিসি র‌্যাঙ্কিংস, ৩ মার্চ, ২০১৯
অল-রাউন্ডার
আইসিসি শীর্ষ ১০ টেস্ট অল-রাউন্ডার
অবস্থানখেলোয়াড়ের নামরেটিং
জেসন হোল্ডার৪৪০
সাকিব আল হাসান৪০৭
রবীন্দ্র জাদেজা৩৮৭
বেন স্টোকস৩৫৮
ভার্নন ফিল্যান্ডার৩২৬
রবিচন্দ্রন অশ্বিন৩২১
প্যাট কামিন্স৩১৬
মঈন আলী২৮৯
মিচেল স্টার্ক২৭২
১০ টিম সাউদি২৩১
সূত্র: আইসিসি র‌্যাঙ্কিংস, ৩ মার্চ, ২০১৯

গ্যালারি

তথ্যসূত্র

  1. Bond, David (২৯ জুলাই ২০১৩)। "Test cricket: Does the oldest form of the game have a future?"BBC। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৬
  2. "Adam Gilchrist's Cowdrey Lecture, 2009"ESPN CricInfo। ২৪ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৬
  3. Lifeless pitches should not be accepted, The Telegraph. Retrieved 1 August 2009.
  4. Knight's return to proving ground, Retrieved 1 August 2009.
  5. Adam Gilchrist's Cowdrey Lecture, 2009, ESPNcricinfo. Retrieved 1 August 2009.
  6. Rundell, Michael (২০০৬)। Dictionary of Cricket। London: A&C Black Publishers Ltd। পৃষ্ঠা 336। আইএসবিএন 978-0-7136-7915-1। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১
  7. Australia v England 1st Test 1876/1877ESPNcricinfo.
  8. Australia v England Centenary TestESPNcricinfo.
  9. "ICC paves way for Day-Night Tests"। Wisden India। ২৯ অক্টোবর ২০১২। ৩০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯
  10. "First day-night Test for Adelaide Oval"ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৫
  11. "Ireland and Scotland to get Test chance as ICC approves play-off"BBC Sport। BBC। ১০ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৪
  12. "Ireland & Afghanistan awarded Test status by International Cricket Council"BBC News। ২২ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১৭
  13. Zimbabwe Cricket Side Resume International Test Play After Six Year Break – Voice of America.
  14. "ICC planning two Test divisions amid major overhaul"। ESPNcricinfo। ১ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৬
  15. "Two-tier proposal shelved at ICC meeting"। ESPNcricinfo। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৬
  16. "Baseball-style conference structure proposed for Tests"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৬
  17. "Afghanistan to play debut Test v India in Bengaluru in June"International Cricket Council। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮
  18. "The Laws of Cricket – Law 15.8"। Lords.org। ২৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  19. "ICC Standard Test Match Playing Conditions ("Playing Conditions") cl 16.1.1" (PDF)। ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  20. "Playing Conditions cl 16.2" (PDF)। ১১ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  21. "Cremer senses opportunity in shorter contest"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭
  22. দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে খেলায় বদলে যাচ্ছে টেস্টের নিয়ম
  23. "Test, ODI leagues approved by ICC Board"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৭
  24. "South Africa to play Zimbabwe in inaugural four-day Test"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৭
  25. "Lord's could host first day night Test in May 2010"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  26. "LAW 13 - INNINGS"। Lords.org। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসে ২০১৭
  27. "Law 14 – The follow-on"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  28. "HowSTAT! Winning after Following-On"। Howstat.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৭
  29. "2nd Test: England v New Zealand at Leeds, May 24–28, 2013 | Cricket Scorecard"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  30. "Law 4 – The ball"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  31. "On This Day: 19 August"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১০
  32. "1st Test: West Indies v England at Kingston, Jan 29 – Feb 2, 1998 | Cricket Scorecard"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  33. "2nd Test: West Indies v England at North Sound, Feb 13–17, 2009 | Cricket Scorecard"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  34. "Law 16 – The result"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৭
  35. "England awarded abandoned Oval Test 'win'"The Guardian। London। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১০
  36. "Test abandoned after ball dispute"। BBC News। ২০ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১০
  37. "Australia v England, Seventh Test, 1970–71"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৩
  38. Rajesh, S. (১৬ এপ্রিল ২০১১)। "Neutral umpires"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১২
  39. United States of America v Canada 1844ESPNcricinfo.
  40. "India-England series played for Anthony De Mello trophy: BCCI"। ৬ নভেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৬
  41. "Southern Cross Trophy, 1999/00"। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৬
  42. "Statistics / Statsguru / Test matches / Team records"। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৬
  43. "Test trophy to be named after Clive Lloyd"। ২৮ জুলাই ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৬
  44. "India vs Bangladesh 2016 Test series to be named Ganguly-Durjoy Trophy"। ২৬ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৭
  45. Test #1

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.