কুমিল্লা

কুমিল্লা বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি মহানগর। এটি ঢাকাচট্টগ্রাম এর পর বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর।এটির মেট্রোপলিটন এলাকার আয়তন ১৫৩ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ২৩ লাখ। এটি চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত কুমিল্লা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু।

কুমিল্লা
মহানগরী
কুমিল্লা শহরের দৃশ্য
কুমিল্লা
বাংলাদেশে কুমিল্লার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°২৭′ উত্তর ৯১°১২′ পূর্ব
দেশ বাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
জেলাকুমিল্লা জেলা
পৌরসভা স্থাপন১৮৯০
সরকার
  মেয়রমনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি)
আয়তন
  মোট১৫৩ কিমি (৫৯ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১৭)
  মোট২৩,০০,০০০
  ক্রম৩য়
  জনঘনত্ব১৫০০০/কিমি (৩৯০০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
  মোট৪৬.০২%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩৫০০–৩৫৮৩
এলাকার টেলিফোন কোড০৮১
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

ভৌগোলিক অবস্থান

কুমিল্লা শহরের শহীদ মিনার

কুমিল্লা ভৌগোলিকভাবে ২৩°২৭′০″ উত্তর এবং ৯১°১২′০″ পূর্বে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩°৫') কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিকে টমসম ব্রিজের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এর উত্তরে বুড়িচং ও ত্রিপুরা, দক্ষিণে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম এবং পশ্চিমে বরুড়া অবস্থিত। কুমিল্লার উপর দিয়ে যেসব নদী প্রবাহমান, সেগুলোর মধ্যে গোমতি ও ছোট ফেনী উল্লেখযোগ্য।

কুমিল্লার ইতিহাস

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে অবস্থিত চন্ডীমুড়া মন্দির

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুরব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়| বৃহত্তর নোয়াখালী,লক্ষীপুর এবং ফেনী একসময় কুমিল্লার অংশ ছিল।

ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ

১৭৬৪ সালে ত্রিপুরার রাজার বিরুদ্ধে শমসের গাজীর নেতৃত্বে পরিচালিত কৃষক আন্দোলন এ অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও শমসের গাজী সম্পূর্ণ চাকলা রওশানাবাদ অঞ্চলের শাসক হয়েছিলেন, যা পরবর্তীকালে দক্ষিণ কুমিল্লা থেকে উত্তর নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এক সময় তিনি সমগ্র কুমিল্লাকে তার শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজামপুর পরগনা জয় করেন। এভাবে, তিনি মেঘনা, মুহুরি ও মনুগঙ্গা নদীসমূহের মধ্যবর্তী বিশাল জনপদের মুকুটবিহীন রাজায় পরিণত হন।[1]

শমসের গাজী ১৭১২ সালে উত্তর চট্টগ্রামের দক্ষিণ শিক পরগনার কুঙ্গুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যা পরবর্তীকালে ত্রিপুরার মানিক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্থানীয় জমিদার নাসির মোহাম্মদের অফিসে তেহশিলদার হিসেবে কাজ করার সময় তিনি একজন স্বর্গীয় পীরের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।[2]

শিশুকাল থেকেই শমসের গাজী ছিলেন সাহসী এবং বুদ্ধিমান। তৎকালীন সময়ে চাকলা রওশানাবাদ ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে ছিল। এর জমিদার ছিলেন নাসির মাহমুদ। নাসির মাহমুদ শমসেরকে অত্যন্ত যত্নের সাথে বড় করে তোলেন। কিন্তু তরুণ বয়সে শমসের অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছিলেন। তিনি জমিদারের কন্যাকে বিবাহ করতে চাইলে, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তাকে বন্দী করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে শমসের গাজী একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেন। এর মাধ্যমে ১৭৪৫ সালে তিনি নাসির মাহমুদের রাজ্য দখল করেন।

ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে, জমিদারী প্রথা কৃষকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। শমসের গাজী ছিলেন বিজ্ঞ, যোগ্য, দয়ালু এবং উদার শাসক। তিনি দরিদ্র কৃষকদের কষ্ট লাঘবের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমতে থাকে। তিনি হিন্দু মুসলমান কৃষকদের জন্য নিষ্কর ভূমির ব্যবস্থা করেন। তিনি রাজধানী জগন্নাথ সোনাপুরের ভিতরে ও বাইরে বহু সংখ্যক দীঘি খনন করেন এবং বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি যেসব দীঘি স্থাপন করেছিলেন, তার মধ্যে 'কাইয়ার সাগর' ছিল সবচেয়ে বড়।[3]

দক্ষিণ শিক এবং মেহেরকুল পরগনার শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, শমসের ত্রিপুরার দিকে মনোনিবেশ করেন এবং ১৭৪৮ সালে রাজা কৃষ্ণ মানিক্যকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করে তাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে ত্রিপুরা দখল করেন। তবে রাজ্যের পাহাড়ী উপজাতিরা কৃষ্ণ মানিক্যের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং শমসেরের প্রবল বিরোধিতা করে।[4]

কৃষ্ণ মানিক শমসের গাজীকে মোকাবেলা করার জন্য কুকি সৈন্যদের দুইটি শক্তিশালী অভিযান দল পাঠান। কিন্তু শমসেরের অসাধারণ রণকৌশল ও বীরত্বের কাছে দুইটি অভিযানই ব্যর্থ হয়। শমসের গাজী ত্রিপুরার রাজধানী উদয়পুর দখল করেন। এরপর তিনি আগরতলা যান এবং নবাব মীর কাসিমের প্রতিরক্ষা বুহ্য ভেদ করার প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু মীর কাসিম শমসেরকে আলোচনার জন্য মিথ্যা আমন্ত্রণ জানান এবং তার আহবানে সাড়া দিতে গিয়ে ১৭৬০ সালে শমসের গাজী নিহত হন। এভাবে কৃষ্ণ মানিক তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় কুমিল্লা শহরে গুলিবর্ষণে একজন মুসলমান নিহত হলে, পুরো কুমিল্লা জুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিস্তৃত হয়। ১৯২১ সালের ২১ নভেম্বর দেশব্যাপী হরতাল পালনের প্রস্তুতিগ্রহণের সময়, এখানে কাজী নজরুল ইসলাম দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন এবং প্রিন্স অফ ওয়েলসের ভারত সফরের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। এই সময়ে, দেশের জাতীয়তাবাদী সংগঠন অভয় আশ্রম একটি বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান রূপে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরমহাত্মা গান্ধী এই সময়েই কুমিল্লা সফর করেন। ১৯৩১ সালে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মোহিনি গ্রামে চার হাজারেরও বেশি কৃষক একটি ভূমি রাজস্ব করের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ব্রিটিশ গুর্খা সৈন্যরা সমবেত কৃষক জনতার উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে চারজন নিহত হয়। ১৯৩২ সালে লাকসাম উপজেলার হাসনাবাদে আরেকটি কৃষক সমাবেশে পুলিশ গুলি চালালে দুইজন নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক আহত হয়।

১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সুনীতি চৌধুরীশান্তি ঘোষ গুলি করে ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার স্টিভেন্সকে হত্যা করে। স্বাধীনতা আন্দোলনে কোন নারীর অংশগ্রহণ সেবারই প্রথম ঘটে।

কুমিল্লার যেসব স্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের গণহত্যার চিহ্ন বহন করে চলেছে সেগুলো হলঃ লাকসাম, কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট, হোমনা, বেলতলী ও রসুলপুর। এছাড়াও বেতিয়ারা, মোজাফফরগঞ্জ, নাগারিপাড়া, ক্যান্টনমেন্ট, কৃষ্ণপুর, ধনাঞ্জয়, দিলাবাদ ও লাকসাম বিডি ফ্যাক্টরি এলাকায় গণকবর পাওয়া গেছে।কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, বেতিয়ারা, পুলিশ লাইন, ক্যান্টনমেন্ট, লাকসাম, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশন এবং হারাতলীতে শহীদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিসৌধ রয়েছে।

এছাড়া যুদ্ধের সময় বহু মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে চৌদ্দগ্রাম হরিশ্চর ব্রিজের ওপর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বস্তার ভেতর ভরে বস্তার মুখ বন্ধ করে ব্রিজের ওপর থেকে খালের পানিতে ফেলে দেয়া হয়।তাদের একজনও বাঁচতে পারেননি। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার চেহরিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ডা. লুৎফর রহমানের বাড়ি থেকে ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায় রাজাকাররা। তাদের একজন পালাতে সক্ষম হলেও আরেকজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রাজাকার বাহিনী।

জলবায়ু

কুমিল্লা শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ মিটার/১৯ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। মাসভিত্তিক ২৪ ঘণ্টার গড় তাপমাত্রাঃ

কুমিল্লা-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর
সর্বোচ্চ °সে (°ফা) গড় ২৫٫৭
(৭৮)
২৮٫১
(৮৩)
৩১٫৬
(৮৯)
৩২٫৮
(৯১)
৩২٫৫
(৯১)
৩১٫২
(৮৮)
৩০٫৭
(৮৭)
৩১٫০
(৮৮)
৩১٫৪
(৮৯)
৩১٫০
(৮৮)
২৯٫২
(৮৫)
২৬٫৫
(৮০)
৩০٫১৪
(৮৬٫৪)
সর্বনিম্ন °সে (°ফা) গড় ১২٫৪
(৫৪)
১৪٫৮
(৫৯)
১৯٫৬
(৬৭)
২৩٫১
(৭৪)
২৪٫৪
(৭৬)
২৫٫২
(৭৭)
২৫٫৩
(৭৮)
২৫٫৪
(৭৮)
২৫٫৩
(৭৮)
২৩٫৬
(৭৪)
১৮٫৮
(৬৬)
১৩٫৮
(৫৭)
২০٫৯৮
(৬৯٫৮)
গড় অধঃক্ষেপণ মিমি (ইঞ্চি)
(০٫৩৫)
২০
(০٫৭৯)
৪৯
(১٫৯৩)
১৪২
(৫٫৫৯)
২৫৯
(১০٫২)
৪৬৯
(১৮٫৪৬)
৪৫৭
(১৭٫৯৯)
৩৯৬
(১৫٫৫৯)
২৬৫
(১০٫৪৩)
১৮১
(৭٫১৩)
৪৫
(১٫৭৭)

(০٫১২)
২,২৯৫
(৯০٫৩৫)
উৎস: Climate-Data.org, জলবায়ু উপাত্ত

জনসংখ্যা

কুমিল্লার মোট জনসংখ্যা হল ২৩ লক্ষ জন।এটি বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম শহর।এর প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৫,০০০ জন। যা বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

প্রশাসন

অন্যান্য জেলাসমূহের মত, কুমিল্লা জেলাতেও একজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) বা জেলা প্রশাসক আছেন, যিনি জেলার সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় শহরের ধর্মসাগরের পূর্বদিকে ফৌজদারী এলাকায় অবস্থিত। কুমিল্লা মূল শহরটি আদর্শ সদর থানার অন্তর্ভুক। কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট বাংলাদেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ভারতীয় আর্মি ব্যাপকভাবে ক্যান্টনম্যান্টটিকে ব্যবহার করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের কবর এখানে রয়েছে।

ভূমি ও অর্থনীতি

প্রধান পেশাঃ

কৃষিকাজ ৪৩.২৮%, ব্যবসা ১১.৬%, চাকরি ১০.৭৮%, কৃষি শ্রমিক ১৫.৮৯%, দিনমজুর ২.৪৬%, নির্মাণ শ্রমিক ১.০৩% এবং অন্যান্য ১১.৬%। ৫৬%(প্রায়) মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে।

ব্যবহারযোগ্য ভূমিঃ

মোট আবাদযোগ্য জমি ২৪৩৫৯৬.৯৩ হেক্টর; একফসলা জমি ১৮.০৫%, দোফসলা জমি ৬৩.৯৯% এবং ত্রিফসলা জমি ১৭.৯৬%।

ভূমি নিয়ন্ত্রণঃ

কৃষকদের মধ্যে ৫৬% ভূমিহীন কৃষক, ২০% ছোট কৃষক, ২০% মধ্যম কৃষক এবং ৪% ধনী কৃষক।

ভূমির মূল্যঃ

ভাল মানের প্রতি শতাংশ ভূমির বাজারমূল্য হচ্ছে ১২৫০০ টাকা।

প্রধান ফসলঃ

ধান, পাট, গম, তেলবীজ, বেগুন ইত্যাদি।

প্রধান ফলঃ

আম, কাঁঠাল, কলা, নারিকেল, তাল, পেয়ারা ও কালোজাম।

ফিশারি, ডেইরি ও পোলট্রিঃ

ডেইরি ২৮ টি, পোলট্রি ১০৯ টি, ফিশারি ২৭ টি, হ্যাচারি ৬৯ টি ও নার্সারি ২০০ টি।

শিল্পকারখানাঃ

সপ্তদশ শতকের শেষার্ধে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চলের চার্পাতা নামক স্থানে একটি কটন মিল স্থাপন করে। বর্তমানে কুমিল্লার খদ্দর কাপড় সারা দেশে অত্যন্ত বিখ্যাত।

হাট ও বাজার এবং মেলাঃ

কুমিল্লার শহরের প্রধান প্রধান হাট ও বাজারসমূহ হচ্ছেঃ চকবাজার, রাজগঞ্জ, বাদশামিয়া বাজার, রানীর বাজার, বৌ বাজার ইত্যাদি। বিখ্যাত মেলাসমূহের মধ্যে ময়নামতি মেলা, পুনরা মেলা, চন্দলা মেলা, বায়রা মেলা, বেতাখালী মেলা, ঠান্ডা কালিবাড়ি মেলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানী পণ্যঃ

খদ্দর কাপড়, শুটকি, ডিম, পোলট্রি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লাকে একটি বিভাগীয় শহরে পরিণত করা হবে।

যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

কুমিল্লার যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নতমানের। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সড়ক 'গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড' কুমিল্লা শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লা শহরের পাশ দিয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে কুমিল্লার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। সড়ক অথবা রেলপথের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়। তবে রেলপথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে মোট ১৯৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন আরএইচডি, এলজিইডি ও সিটি কর্পোরেশন সকল রাস্তা তদারকি করে থাকে। কুমিল্লাতে আরএইচডি এবং এলজিইডি'র আঞ্চলিক সদর দপ্তর রয়েছে। কুমিল্লায় একটি অব্যবহৃত বিমানবন্দর রয়েছে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা যুদ্ধবিমান উঠা-নামা করার জন্য বানিয়েছিল।

শিক্ষা

আগে কুমিল্লাকে বলা হতো শিক্ষানগরী। কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা শহরে অবস্থিত। কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা এই বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। আগে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম বিভাগ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ছিল। সাম্প্রতিককালে, আলাদাভাবে চট্টগ্রামসিলেট শিক্ষা বোর্ড গঠিত হয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লায় শিক্ষার হার ৬০.০২% (২০১১ সালের শিক্ষা জরিপ)।[5]

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ

কুমিল্লাতে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে:[6]

পর্যটন

ওয়ার সিমেট্রি

কুমিল্লাতে বহুসংখ্যক পর্যটন আকর্ষন রয়েছে। কুমিল্লার লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। এখানে রয়েছে শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া, চন্দ্রমুড়া, রূপবন মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, সতের রত্নমুড়া, রাণীর বাংলার পাহাড়, আনন্দ বাজার প্রাসাদ, ভোজ রাজদের প্রাসাদ, চন্ডীমুড়া প্রভৃতি। এসব বিহার, মুড়া ও প্রাসাদ থেকে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। ময়নামতি একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। ময়নামতি জাদুঘরটি একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯২১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভারতের নেতা মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লায় এসেছিলেন। কুমিল্লাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের কবর ও ওয়ার সেমেট্রি রয়েছে। বতর্মানে রাজশে পুর ইকোপার্ক এবং তদসংলগ্ন বিরাহিম পুরের সীমান্তবর্তী শাল বন পর্যটন স্পট হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ

রাজনীতিবিদঃ
  • খন্দকার মোশতাক আহমেদ (১৯১৮-১৯৯৬) - বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক মন্ত্রী ও মুজিবনগরে গঠিত প্রথম মন্ত্রীসভার সদস্য।
সমাজসেবকঃ
শিক্ষাবিদ ও গবেষকঃ
-উপচার্যঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)
সাহিত্যিকঃ
  • বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) - বিখ্যাত বাংলা কবি, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক ও সম্পাদক।
  • আহমেদ উল্লাহ্(1981-...)- বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক ও গীতিকার।
  • আব্দুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) - গবেষক, কবি ও সম্পাদক।
সঙ্গীতঃ
অন্যান্যঃ
  • মেজর আব্দুল গণি - ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা।
  • কৈলাশচন্দ্র সিনহা (১৮৫১-১৯১৪) - ঐতিহাসিক, রাজমালা বই এবং বহু ইতিহাস সম্পর্কিত প্রকাশনার গ্রন্থকার।
  • এয়ার ভাইস মার্শাল জামালউদ্দীন আহমেদ - বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক চিফ এয়ার স্টাফ।
  • অধ্যাপক মোজাফফর মজিবনগর সরকারের একজন উপদেষ্টা,ও স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত।

গণমাধ্যম

কুমিল্লায় স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ও অনলাইন পত্রিকা রয়েছে রয়েছে। প্রচিনতম পত্রিকার মধ্যে আমোদ, দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে দৈনিক কুমিল্লার কাগজ, দৈনিক শিরোনাম  এছাড়া কুমিল্লার বার্তা অনলাইন, দৈনিক রূপসী বাংলা, দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও চান্দিনা উপজেলা থেকে প্রকাশিত চান্দিনা প্রতিদিন প্রভৃতি। সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে সাপ্তাহিক আমোদ, মেগোতী, কথক, কুমিল্লা সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, সময়ের পথ উল্লেখযোগ্য। কিছু মাসিক পত্রিকাও এখানে রয়েছে। এছাড়াও দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রথম সারির সব সংবাদপত্রই এখানে পাওয়া যায়। কুমিল্লাতে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনও রয়েছে।

তথ্যসূত্র

  1. Rivers Banglapedia
  2. 'Gazinama' authored by Sheikh Manohar Tripurainfo
  3. Ponds Banglapedia
  4. Tripura Major Events Tripurainfo
  5. "এক নজরে কুমিল্লা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। জুন, ২০১৪। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন, ২০১৪ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. জেলা তথ্য বাতায়ন

তথ্য গ্রন্থ ও সাময়িকী

  • স্মৃতির মিনার, এডভোকেট এস এম মোফাখখর, সাবেক সভাপতি সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন
  • আলোকিত কুমিল্লা, নজরূল ইসলাম দুলাল, সাংবাদিক
  • মুক্তির সংগ্রামে কুমিল্লা, আবুল কাসেম হৃদয়, সাংবাদিক
  • সাপ্তাহিক স্বন্দীপ, ২১শে সংখ্যা ১৯৮৯ইং
  • সাপ্তাহিক নগরী, ২১শে সংখ্যা ১৯৮৯ইং
  • জীবন বৃত্তান্ত অভিধান, বাংলা একাডেমি প্রণিত।
  • মহাস্থবির শিলাভদ্র, শহীদুল্লাহ মৃধা রচিত।
  • মাসিক কোরক ১৯৪৭ ইং ভাষা বীর ও মুক্তিযোদ্ধা কবি শহীদুল্লাহ সম্পাদিত।

বহিঃসংযোগ

  1. Bangladesh citypopulation.de
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.