কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ
কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ (ইংরেজি: Comilla Govt. City College; সাবেকঃ গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা) বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলা সদরে অবস্থিত একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।[1] বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে ব্যবসায় শিক্ষার প্রসারের লক্ষে দাতা সংস্থা ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৯৬৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সাল থেকে “গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা” নামে ও পরবর্তীতে ২০১৬ সাল থেকে বর্তমান নামে পরিচিতি লাভ করে।[2]
ধরন | সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ |
---|---|
স্থাপিত | ১৯৬৬ |
অধ্যক্ষ | ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া |
শিক্ষায়তনিক কর্মকর্তা | ২৪ |
শিক্ষার্থী | ১,০০০ (প্রায়) |
অবস্থান | কুমিল্লা সদর , , |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে |
ওয়েবসাইট | cgcc |
অবস্থান ও আয়তন
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কুমিল্লা জেলা সদরের আশ্রাফপুর এলাকায় অবস্থিত।[3] এটি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন।[4] এই প্রতিষ্ঠানটি ১ দশমিক ৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।[3]
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে[1] সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিদেশি মিশন ও কোম্পানিগুলোতে বিভিন্ন দাপ্তরিক চাকরি; যেমনঃ মুদ্রাক্ষরিক, সাঁটলিপিকার, কেরানি, অভ্যর্থনাকারী, রেকর্ড কিপার, বুক কিপার, হিসাবরক্ষণ সহকারি, টেলিফোন অপারেটর এবং দাপ্তরিক সচিব প্রভৃতি পদের জন্য উপযোগী জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষে[5] তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের ১৭টি জেলার মধ্যে কেবলমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত অপর ১৬টি জেলার[6] প্রতিটিতে একটি করে “গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট” স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।[7] এই সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা “ইউএসএইড”-এর আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় ১৯৬৫ হতে ১৯৬৭ সালের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠনিটিসহ কুষ্টিয়া, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, দিনাজপুর, পাবনা, ফরিদপুর, ফেনী (নোয়াখালী জেলাস্থলে), বগুড়া, বরিশাল, ময়মনসিংহ, যশোর, রংপুর, রাজশাহী এবং সিলেট - এই ১৬টি জেলায় ১৬টি গভঃ কমার্র্শিয়াল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়।[5]
প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস
১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের নির্দেশনানুসারে পাকিস্তান সরকার ও ইউএসএইডের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ১৯৬৬ সালে তৎকালীন কুমিল্লা জেলায় এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়।[3] প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এটি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে থাকলেও পরের বছর থেকে এটি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রনাধীনে আসে[6] এবং এটিসহ অন্যান্য গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া হয় ঢাকা বোর্ডকে।[7] সাধারণ শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ও অর্ধশতাব্দীর পুরনো পাঠ্যক্রমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করায় আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর পাঠ্যক্রমের অভাবে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী স্বল্পতা দেখা দেয় এখানে।[7] ফলশ্রুতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী স্বল্পতা এবং জনবলের অভাবসহ নানাবিধ সমস্যায় পতিত হওয়ায়[1] এই প্রতিষ্ঠানটিসহ অপরাপর ১৫টি গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ এবং করণীয় ঠিক করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নীতিনির্ধারক ও প্রতিষ্ঠানের সম্মিলনে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ১২ মে এক প্রজ্ঞাপন জারীর মাধ্যমে দেশ থেকে “ডিপ্লোমা-ইন-বিজনেস স্টাডিজ” শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ও এই প্রতিষ্ঠানটিকে সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমভূক্ত করে[5] এর নামকরণ “কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ” করে এবং জেলাস্থ অন্যান্য সমমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এটিকেও কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে ন্যস্ত করে।[2]
শিক্ষা কার্যক্রম
অন্যান্য গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটগুলোর মতো এখানেও প্রতিষ্ঠার পর প্রথমাবস্থায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন দাপ্তরিক শিক্ষা বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হতো, যার ডিপ্লোমা ডিগ্রিকে ১৯৭৩ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেটের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়।[6] ১৯৮৪ সাল থেকে এটি ঢাকা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে এবং এখান থেকে প্রদত্ত এস.এস.সি.-উত্তর দুই বছর মেয়াদি কর্মমূখী শিক্ষার ডিপ্লোমা ডিগ্রিটিকে “ডিপ্লোমা-ইন-বিজনেস স্টাডিজ” (ডিআইবিএস) নামে অভিহিত করা হতো,[5][8] যা এইচ.এস.সি. (ব্যবসায় শিক্ষা) কোর্সের সমমান হিসাবে গণ্য করা হতো।[7] পরবর্তীতে ২০১৬ সাল থেকে এটি কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে সাধারণ কলেজ হিসাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা শুরু করে এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি লাভ করে[2] ও ঐ বছরেরই ৫ জুন কুমিল্লা বোর্ড এখানে ১৯টি বিষয়ে পাঠদানের অনুমতি প্রদান করে।[3]
বর্তমানে এই কলেজে পাঠদানের অনুমোদিত বিষয়গুলো হলোঃ
- আবশ্যক বিষয়
- বাংলা,
- ইংরেজি এবং
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি(ICT)
- বিজ্ঞান বিভাগ
- মানবিক বিভাগ
- ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ
অবকাঠামো
এখানে একটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন ও একটি ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন রয়েছে।[3] কলেজটিতে বর্তমানে মাত্র ৪টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।[3]
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট হিসাবে পরিচালতি হওয়া কালীন এই প্রতিষ্ঠানটিতে ১ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৩জন সহকারী অধ্যাপক এবং ৪ জন প্রভাষকের পদের পাশাপাশি ২ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ ছিলো;[3] যেখানে সহযোগী অধ্যাপক পদাধিকার বলে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ পেতেন। ২০১৬ সাল থেকে সাধারণ কলেজ হিসাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করলেও এখানে পদ সৃষ্টি করা হয় নাই বিধায় বর্তমানেও শিক্ষকগণের পদ সংখ্যা একই রয়েছে; কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠ ও সুচারূপে পরিচালনার জন্য এখানে বিভিন্ন বিষয়ে সংযুক্ত এবং অতিথি শিক্ষক হিসাবে আরো ১৬ জনকে নিয়োগ দান করা হয়েছে।[3]
গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট থাকা কালীন এখানে ৪০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেলেও সাধারণ কলেজ হিসাবে যাত্রার প্রথম শিক্ষাবর্ষে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা - এই ৩ শাখায় মোট ৫৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় এখানে এবং পরের বছর এখানে আরো ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।[3]
সহশিক্ষা কার্যক্রম
ফলাফল ও কৃতিত্ব
গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট হিসাবে পরিচালিত হওয়া কালীন পাবলিক পরীক্ষায় এই কলেজের ফলাফল বরাবরই ঈর্ষণীয় ছিলো এবং ২০১২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ডিপ্লোমা-ইন-বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) শাখায় এটি সারা দেশের মধ্যে ২য় স্থান দখল করে।[9]
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ হতে সাধারণ কলেজ হিসাবে পরিগণিত হওয়ায়[2] এখান থেকে ২০১৮ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় প্রথম বারের মতো পরীক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে।
কৃতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
তথ্যসূত্র
- "খুঁড়িয়ে চলছে দেশের ১৬ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট"। দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইন (আর্কাইভ)। ২৭ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
- "প্রজ্ঞাপন"। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১২ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
- "নানা সঙ্কটে কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ"। কুমিল্লার বার্তা অনলাইন। ৬ জুলাই ২০১৭। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
- "কুসিক নির্বাচন: কুমিল্লা সিটি কলেজ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ সাময়িক স্থগিত"। বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন। ৩০ মার্চ ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
- "১৬ সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ হলো সাধারণ কলেজ"। দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইন। ১৪ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
- মো. শামসুল হক (জানুয়ারি ২০০৩)। "দাপ্তরিক শিক্ষা"। সিরাজুল ইসলাম। [[বাংলাপিডিয়া]]। ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ। আইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
১৯৬৭ সাল নাগাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে মোট ১৬টি সরকারি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়।
ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য) - "বিলুপ্তির পথে গভ. কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট"। দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন (আর্কাইভ)। ৭ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
- "১৭ সরকারি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটকে যুক্ত করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের সঙ্গে"। মানবকণ্ঠ অনলাইন। ২৬ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৭।
- "বিজনেস স্টাডিজ শাখায় সেরা পাঁচ"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ১৮ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
- “কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ”-এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট।
- “দাপ্তরিক শিক্ষা” - বাংলাপিডিয়ায় “গভঃ কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট” সম্পর্কিত নিবন্ধ।