আবদুল মান্নান (বীর উত্তম)

শহীদ আবদুল মান্নান (জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৪০ - মৃত্যু: ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। তার গ্যাজেট নম্বর ৪৪। [1]

আবদুল মান্নান
জন্ম১ জানুয়ারি, ১৯৪০
কুমিল্লা জেলা
মৃত্যু২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
হবিগঞ্জ জেলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

আবদুল মান্নানের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পশ্চিম ডেকরা গ্রামে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম আবদুল জব্বার খন্দকার এবং মায়ের নাম আসকিরের নেছা।

কর্মজীবন

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন আবদুল মান্নান। কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার ইউনিটের সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রমবাড়ি/বাঘাইবাড়ি সাব-সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন। [2]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার কালেঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সফল ফাঁদে (অ্যামবুশ) পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অসংখ্য পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন সিন্দুরখান-কালেঙ্গা রাস্তার পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট টিলার ওপর অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করার জন্য ফাঁদ পাতেন। তারা আগেই খবর পেয়েছিলেন, পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল কালেঙ্গায় টহল দিতে আসবে। দুই দিন আগে পাকিস্তানি সেনারা কালেঙ্গায় ঘাঁটি স্থাপনের জন্য এসেছিল। তখন তারা কোনো বাধা পায়নি। ফলে পাকিস্তানি সেনারা বেশ বেপরোয়াভাবেই আসছিল। তাদের সামনে ছিল একদল রাজাকার। রাজাকাররা যখন মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদ এলাকার মধ্যে চলে আসে, তখন তারা চুপ করে থাকেন। তারা অপেক্ষায় থাকেন শুধু পাকিস্তানি সেনাদের জন্য। পাকিস্তানি সেনারা যখন মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদের ভেতর ঢুকে পড়ে, তখন একযোগে গর্জে ওঠে তাদের সব অস্ত্র। চারদিক থেকে তারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গোলাগুলি শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনারা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আসছিল। ফলে সব পাকিস্তান সেনা ফাঁদে পড়েনি। যারা ফাঁদের ভেতরে ঢুকে পড়ে, তারা বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত হয়। ফাঁদের বাইরে থাকা পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত পজিশন নিয়ে বিপদগ্রস্ত সঙ্গীদের বাঁচানোর জন্য পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু এই আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শুধু আবদুল মান্নান ওই সেনাকে জীবিত ধরতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মেশিনগানের গুলিতে শহীদ হন। কয়েক জন আহত হন। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক অফিসারসহ ৪০-৪৫ জন নিহত ও অনেক আহত হয়।

ফাঁদের ভেতরে পড়ে পাকিস্তানি সেনা যারা বেচে গেছে, তারা বেশির ভাগ আহত। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়নি। ফাঁদের বাইরে থাকা পাকিস্তানি সেনারা পজিশন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে গুলি করছে। তীব্র গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। মুক্তিযোদ্ধারা বেশ নিরাপদ অবস্থানে থেকে গুলি করছেন। পাকিস্তানিদের গুলি তাদের ক্ষতি করতে পারছে না। মুক্তিযোদ্ধাদের এই দলে ছিলেন আবদুল মান্নান। সাহসী ও অকুতোভয় এক যোদ্ধা। তার গুলিতেই নিহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এ সাফল্যে তিনি আনন্দে আত্মহারা। এমন সময় তার অবস্থানের সামনে দিয়ে পালাচ্ছিল এক পাকিস্তানি সেনা। তাকে দেখে আনন্দের আতিশয্যে আবদুল মান্নান সহযোদ্ধাদের বললেন, একে জীবিত ধরতে হবে এবং তিনি নিজেই তাকে জীবিত ধরবেন। এ কথা বলে ট্রেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠে গোলাগুলির মধ্যেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তিনি এগিয়ে যান ওই পাকিস্তানি সেনার দিকে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য। পাকিস্তানি সেনাকে জীবিত ধরতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাহসী যোদ্ধা আবদুল মান্নান নিজেই শহীদ হন। বেপরোয়াভাবে নিজের নিরাপদ অবস্থান থেকে উঠে ওই পাকিস্তানি সেনার কাছে যাওয়ার সময় মেশিনগানের একঝাঁক গুলি এসে লাগে তার বুক ও মাথায়। ঝাঁজরা হয়ে যায় তার বুক। সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হন এই বীর যোদ্ধা। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৪-০৯-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। ঢাকা: জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৭৬। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১৯। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.