আকরাম আহমেদ
আকরাম আহমেদ (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1]
আকরাম আহমেদ | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর উত্তম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
আকরাম আহমেদের পৈতৃক বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলার গাছঘাট গ্রামে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ বিমানে চাকরি করেন। তার বাবার নাম মেজবাউদ্দীন আহমেদ এবং মায়ের নাম মাফিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আহমেদ। তাঁদের দুই মেয়ে।
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে আকরাম আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান উদ্ভিদ রক্ষা (প্ল্যান্ট প্রটেকশন) বিভাগে কাজ করতেন। সেই সময়ে আকাশ থেকে বনে ওষুধ ছিটিয়ে পোকা দমনের জন্য উদ্ভিদ রক্ষা বিভাগের নিজস্ব বিমান (ক্রপ ডাস্টার) ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসে ঢাকা থেকে পালিয়ে ভারতে যান। সেখানে খালেদ মোশাররফের (বীর উত্তম সঙ্গে দেখা করে স্থলযুদ্ধে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। খালেদ মোশাররফ তাকে কিছুদিন আগরতলায়ই অপেক্ষা করতে বলেন। কয়েক মাস পর গঠিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং। তখন তাতে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আকরাম আহমদ চট্টগ্রামের অপারেশনের পর সিলেটের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১২টির মতো আক্রমণে অংশ নেন।[2]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে সন্ধ্যার পর রাতের আঁধারে ভারতের এক বিমানঘাঁটি থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হলো ছোট এক বিমান। বিমান চালাচ্ছেন আকরাম আহমেদ। তার সঙ্গে আছেন শামসুল আলম (বীর উত্তম)। সীমান্ত অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে থাকলেন চট্টগ্রামের দিকে। তাঁদের লক্ষ্য চট্টগ্রামের তেলের ডিপো। প্রায় তিন ঘণ্টা উড্ডয়নের পর পৌঁছালেন সেখানে। বিমান থেকে একের পর এক রকেট আঘাত হানতে থাকল ডিপোতে। সফলতার সঙ্গে ধ্বংস করে দিলেন তেলের ডিপো। তারপর নিরাপদে ফিরে গেলেন নিজেদের বিমানঘাঁটিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সেপ্টেম্বর মাসে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং। এই বিমান উইংয়ে ছিল একটি অটার, একটি ডাকোটা বিমান ও একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার। ক্ষুদ্রকায় অটার বিমানটিতে রকেট নিক্ষেপক সংযুক্ত করে রূপান্তর করা হয় যুদ্ধ বিমানে। আকরাম আহমেদ, শামসুল আলম ও শরফুদ্দীন (বীর উত্তম) অন্তর্ভুক্ত হন অটার বিমান নিয়ে আক্রমণ করার জন্য। প্রশিক্ষণ শেষে তারা প্রস্তুত হন বাংলাদেশের ভেতরে আক্রমণ চালাতে। বিভিন্ন স্থাপনার সামরিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয় চট্টগ্রামের তেলের ডিপো ধ্বংসের আক্রমণ দলে থাকবেন আকরাম আহমেদ ও শামসুল আলম। ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর ভারতের কমলপুর বিমানঘাঁটি থেকে তারা যাত্রা শুরু করেন। তিন ঘণ্টা উড্ডয়ন শেষে তারা পৌঁছেন চট্টগ্রামে। সিদ্ধান্ত ছিল বিমানের সাহায্যে তারা শুধু একবারই আক্রমণ করবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে প্রথমবারের আক্রমণে সব তেলের ট্যাংকার ধ্বংস হয়নি। তবে এক নম্বর লক্ষ্যবস্তু বিমানের জ্বালানি তেলের ট্যাংকারে তারা সঠিকভাবে আক্রমণ করেন। সেটি তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এক নম্বর লক্ষ্যস্থলে নির্ভুল আঘাত হানার পরও বিমানে পর্যাপ্ত রকেট মজুদ ছিল। আকরাম আহমেদ এ সময় সাহসী ভূমিকা পালন করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন অক্ষত তেলের ট্যাংকারে আবার আক্রমণ চালাবেন। তার সিদ্ধান্ত ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বিমানটি ঘুরিয়ে তেলের ডিপোতে অবশিষ্ট রকেট নিক্ষেপ করেন। দ্বিতীয়বারের আক্রমণও ছিল নিখুঁত ও নির্ভুল। চারদিকে বিভিন্ন তেলের ডিপোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। সফল আক্রমণ শেষে তিনি আবার ফিরতি পথে যাত্রা শুরু করেন। চট্টগ্রামে আসার পথটা আগে থেকে সুনির্দিষ্ট থাকলেও ফেরার পথটা ছিল অনির্ধারিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। একমাত্র কাঁটাকম্পাস ছাড়া দিক নির্ণয়ের আর কোনো আধুনিক সরঞ্জাম ওই বিমানে ছিল না।[3]
আকরাম আহমদ চট্টগ্রামের অপারেশনের পর সিলেটের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১২টির মতো আক্রমণে অংশ নেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আকরাম আহমেদকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৬৫।
টীকা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে “তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না” শিরোনামে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৮-০৩-২০১২
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১০৪। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৯। আইএসবিএন 978-984-90253-7-5।