সালাহউদ্দিন মমতাজ

শহীদ সালাহউদ্দিন মমতাজ (জন্ম: ১৯৪৫ - মৃত্যু: ৩১ জুলাই, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1]

সালাহউদ্দিন মমতাজ
জন্ম১৯৪৫
মৃত্যু৩১ জুলাই, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সালাহউদ্দিন মমতাজের জন্ম ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে, ফেনী জেলার সদর উপজেলায় উত্তর চাড়িপুর গ্রামের মুক্তারবাড়ি। তার পিতার নাম শামসুদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম খায়রুন নাহার। তার পিতামহ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন আকিয়াবের শেষ মুসলিম জমিদার। মাতামহ মৌলভী আবদুর রাজ্জাক ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য (এমএলএ)। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল' গ্র্যাজুয়েট বাবার ওকালতি করার সুবাদে কোলকাতায় সালাহউদ্দিনের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পরে তিনি বাড়ির কাছে দেবীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে তিনি কিছুকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোর দয়াল সিং কলেজে পড়াশোনা করেন। শেষে ফেনী কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। এই কলেজে বিএসসি অধ্যয়নকালে পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যোগ দেন।

কর্মজীবন

সালাহউদ্দিন মমতাজ ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্লাইট ক্যাডেট হিসাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পরে তিনি পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সালাহউদ্দিন ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে পোষ্টেড ছিলেন। ৩ জুলাই ১৯৭১ শিয়ালকোট মারালা সীমান্তের খরোস্রোতা মুনাওয়ার তাবী নদী অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। সঙ্গী ছিলেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, শাহরিয়ার ও আনাম। তাদের এই আগমন বিশ্বপ্রচার মাধ্যমে ঝড় তোলে। চারজনই কোলকাতা গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার এর আনুগত্য স্বীকার করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সালাউদ্দিনকে ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করতে প্রথম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে পাঠানো হয়।[2] ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তেলঢালা ক্যাম্পে এই রেজিমেন্টের অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং চলছিল। এখানে পরে জেড ফোর্স গঠিত হলে তাকে এই ফোর্সে নিযুক্ত করা হয়।[3] ‍‍‍‌‌

ট্রেনিং শেষ হলে জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়া প্রথম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মাধ্যমে কামালপুর বিওপি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। সালাহউদ্দিনকে "চার্লি" কোম্পানীর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়।[4]

২৮ জুলাই কামালপুর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সালাহউদ্দিন মমতাজ ও লেফটেন্যান্ট মান্নানকে কামালপুরে পাকিস্তানি অবস্থান রেকি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় তারা দুজন পাকিস্তানি সেনার সম্মুখে পড়ে। একজন পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে সালাহউদ্দিনের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মান্নান একটি গাছের নিচে অবস্থান নিলেন। সুবেদার হাই রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে পাকিস্তানি সেনার রাইফেল কেড়ে নিলেন। নায়েক শফি পলায়নপর পাকিস্তানি সেনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করল। পাকিস্তানি সেনার বাংকার থেকেও গুলি বর্ষিত হলো। সুবেদার হাই শত্রুর অবস্থান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে করতে ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিনের দিকে অগ্রসর হলো। হাই সালাহউদ্দিনের বুকের ওপরে চড়ে থাকা পাকিস্তানি সেনাকে স্টেনগান দিয়ে আঘাত করলে পাকিস্তানি সেনা তার রাইফেল ফেলেই পালিয়ে যায়। এরপর সালাহউদ্দিন ও মান্নান শত্রুর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া রাইফেল দুটিসহ অন্যদের নিয়ে নিজ অবস্থানে ফিরে আসে। সেদিন এভাবেই অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেল। ৩০-৩১ জুলাই প্রথম ইস্ট বেঙ্গল (সিনিয়র টাইগার) রাতের আঁধারে রওনা হলো। প্রথমে সালাহউদ্দিনের ডেল্টা কোম্পানী, ফলোআপ কোম্পানী হলো ক্যাপ্টেন হাফিজের ব্রেভো, যার পিছনে হল ব্যাটালিয়ন 'আর' গ্রুপ এবং এই 'আর' গ্রুপে ছিলেন মেজর মঈন এবং সাথে ছিলেন জেড ফোর্সের কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি সেনারা তাদের প্রথম সারির প্রতিরক্ষা অবস্থান ছেড়ে পেছনে সরে যায়। মুক্তিবাহিনীর সাহসী সৈনিকরা শত্রুর বাংকার অতিক্রম করে কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে পড়ে এবং হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয়। সুবেদার হাই এর নেতৃত্বে যে প্লাটুনটি যুদ্ধ করছিল তারা মাইন ফিলডের সামনে পড়ে যায়। এই প্লাটুনের ডানে ছিলেন ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন ও তার সহযোগীগণ। পাকিস্তানি সেনারা তখন পাল্টা আক্রমণের জন্যে তৈরি হচ্ছে। সালাহউদ্দিন সুবেদার হাইকে ডানে যেতে নির্দেশ দিলেন। নায়েক হাই এর হাত বোমার আঘাতে উড়ে গেল। সালাহউদ্দিন তখন পলায়নপর পাকিস্তানি সেনাদের পেছনে ধাবমান। এই সময় শত্রুবোমা সালাহউদ্দিনের ঠিক সামনে এসে পড়ে এবং সালাহউদ্দিন শহীদ হন।"‍‍‍‍[4][5][6]

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • বীর উত্তম
  • বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঘাটাইলস্থ সেনানিবাসটির নামকরণ করা হয় "শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাস (ঘাটাইল)"।

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক কালের কন্ঠ,ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী "একজন সৈনিকের কাহিনী"| তারিখ: ২৬-০৩-২০১২
  2. ২. বীরশ্রেষ্ঠ: জাহানারা ইমাম:গণপ্রকাশনী:২০০৮;পৃ.৩৭-৪০।
  3. ৪. বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দশম খন্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, তথ্য মন্ত্রণালয়, জুন ১৯৮৪। পৃ ৭১৪-৭১৫।
  4. কামালপুর ১৯৭১: সম্পাদক মুহাম্মদ লুৎফুল হক: প্রথমা প্রকাশন:২০১২।
  5. ৩. রক্তেভেজা একাত্তর : মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ: সাহিত্য প্রকাশ: ২০০৬।
  6. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৪৩। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.