মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার

মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার (জন্ম: ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫ - মৃত্যু: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[2][3] তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পৈতিক নিবাস বগুড়ায়। [4]

মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার
জন্ম১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫
মৃত্যু১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬[1]
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মোহাম্মদ খাদেমুল বাশারের পৈতৃক বাড়ি বগুড়া জেলায়। তার বাবার নাম এম এইচ শাহ। তার স্ত্রীর নাম শিরিন বাশার। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে।

কর্মজীবন

মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে রাডার স্কোয়াড্রনের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের শুরুতে আরও কয়েকজনের সঙ্গে পালিয়ে ভারতে যান এবং যুদ্ধে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার জুন মাস থেকে মুক্তিবাহিনীর ৬ নম্বর সেক্টরে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৃহত্তর রংপুর ও বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে ছিল এ সেক্টর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে এ সেক্টরে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সেক্টরে একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, তা হলো সেক্টরসহ কয়েকটি সাব-সেক্টরের অবস্থান বাংলাদেশের ভূখণ্ডেই ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তা দখল করতে পারেনি। ৬ নম্বর সেক্টর সামরিক ও ভৌগোলিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর পশ্চিম ও উত্তরে ভারতের শিলিগুড়ি করিডর। খাদেমুল বাশারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অপারেশন করেন।[5] এর মধ্যে ভূরুঙ্গামারীর যুদ্ধ অন্যতম। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৬ নম্বর সেক্টরে গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আখতারুজ্জামান মণ্ডল। তিনি একটি দলের দলনেতা ছিলেন। সেক্টর কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার ৬ নম্বর সেক্টরের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অবিচল আস্থা অর্জন করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে মিশতেন এবং সময়-সুযোগমতো তাদের সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। রোজা শুরু হওয়ার আগের দিন দুপুরের পর তিনি ভূরুঙ্গামারীর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ অভিযান পরিকল্পনার জন্য সন্ধ্যার কিছু আগেই সাবসেক্টর অফিসে ক্যাপ্টেন নওয়াজিশসহ কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনায় বসলেন। একটির পর একটি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। একপর্যায়ে ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ খাদেমুল বাশারকে জিজ্ঝাসা করলেন “স্যার, আপনি অনেক দিন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। কোনো সংবাদ পাননি। তাই তাদেরকে দেখে এলে ভালো হয়।” খাদেমুল বাশার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হেসে বললেন, “ঠিকই বলেছ, তবে কি জানো, তোমরা মুক্তিযোদ্ধারাই আমার পরিবারের আপন সদস্য। তোমাদের সঙ্গে থাকা আর আমার পরিবারের সঙ্গে থাকা একই কথা। আগে অভিযান সফল করো। তোমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করবে আর আমি পরিবারের সাথে দেখা করব, তা কী করে হয়।” সেক্টর কমান্ডারের পরিকল্পনা ও নির্দেশ অনুযায়ী রোজার আগের রাতে ভূরুঙ্গামারীর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলো। রাত নয়টায় অভিযানে অংশগ্রহণকারী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি আবেগময় বক্তৃতা করলেন। “জয় বাংলা, বাংলার জয়” এবং “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি” গানটি টেপ রেকর্ডারে বাজিয়ে শোনানো হলো। ‘অভিযানে অংশগ্রহণকারী দেড় শ মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যেকের সঙ্গে তিনি হাত মেলালেন এবং ব্যক্তিগতভাবে আদর করলেন। বড় ও ছোট ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা, অ্যামবুশ ও রেইড ইত্যাদি নিজেই পরিচালনা করতেন। সফল রণকৌশল, অস্ত্র চালনা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, আত্মবিশ্বাস, সেই সাথে সহকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার গভীর অনুভূতি, স্নেহ ইত্যাদি মুক্তিযোদ্ধাদের মন থেকে কোনো দিন মুছে যাবে না। [6]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. "Chronological Listing of Bangla-Deshi Air Force Losses & Ejections"। ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৫
  2. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৪-১১-২০১২
  3. "দৈনিক আমার দেশ"। ৩০ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৪
  4. বাংলাপিডিয়া
  5. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৯৮। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
  6. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫৯। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.