সুলতান মাহমুদ
এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ (জন্ম: অজানা ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1] স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান। [2]
সুলতান মাহমুদ | |
---|---|
আনুগত্য | ![]() ![]() |
সার্ভিস/শাখা | পাকিস্তান বিমান বাহিনী বাংলাদেশ বিমান বাহিনী |
পদমর্যাদা | ![]() ![]() |
পুরস্কার | বীর উত্তম, স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সুলতান মাহমুদের জন্ম ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলায়। তার বাবার নাম নূরুল হুদা এবং মায়ের নাম আঙ্কুরের নেছা। তার স্ত্রীর নাম ফেরদৌস আরা মাহমুদ। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।
কর্মজীবন
১৯৭১ সালে সুলতান মাহমুদ পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর মৌরীপুর বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এর অবস্থান ছিলো করাচিতে। তখন তার পদবি ছিল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে তিনি মে মাসে সেখান থেকে পালিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকা থেকে ভারতে যাওয়ার পথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে আটকের চেষ্টায় তাড়া করে। এ অবস্থায় দাউদকান্দি ফেরিঘাটের কাছে তিনি সাঁতরিয়ে মেঘনা নদী পার হন । অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। সুলতান মাহমুদ স্বাধীনতার পর ধাপে ধাপে এয়ার ভাইস মার্শাল পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[3]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
ভারতে তখন সমবেত হয়েছেন পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর আরও কয়েকজন বাঙালি। তারা মুক্তিবাহিনীর প্রধান এম এ জি ওসমানীর কাছে অনুরোধ করেন, মুক্তিবাহিনীর জন্য বিমান উইং গঠনের। কিন্তু বাস্তবে তা তখন করা সম্ভব ছিল না। এ অবস্থায় সুলতান মাহমুদ বসে থাকলেন না। যোগ দেন স্থল যোদ্ধাদের সঙ্গে। তিনি প্রথমে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরে। পরে ১ নম্বর সেক্টরে। বেশ কয়েকটি অপারেশনে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ধ্বংসের অপারেশন উল্লেখযোগ্য। মদুনাঘাট বিদ্যুৎ স্টেশনটির অবস্থান চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কের হালদা নদীর পশ্চিম পাশে। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল। সাবস্টেশনের চারদিকের বাংকারে ছিল তাদের অবস্থান। অক্টোবর মাসের শেষে একদিন সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ করে। তাদের আক্রমণে সাবস্টেশনটি ধ্বংস হয়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে সুলতান মাহমুদ আহত ও তার এক সহযোদ্ধা শহীদ হন। সেদিন তিনি যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এরপর তিনি আর স্থলযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। এ সময়ই গঠিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং। কয়েক দিন পর সুলতান মাহমুদকে বিমান উইংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর বিমান উইংয়ের মাধ্যমে প্রথম যে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়, এর একটির দায়িত্ব ছিল তার ওপর। তার নেতৃত্বে পরিচালিত হয় গোদনাইল অপারেশন। এ অপারেশনে তার সহযোদ্ধা ছিলেন বদরুল আলম। তারা একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের সাহায্যে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেলের ডিপোতে আক্রমণ চালান। ভারতের কৈলাসটিলা বিমানঘাঁটি থেকে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা গোদনাইলে পৌঁছাতে সক্ষম হন। নির্ধারিত দূরত্বে পৌঁছেই শুরু করেন আক্রমণ। সেদিন তারা হেলিকপ্টার থেকে ১৪টি রকেট নিক্ষেপ করে ইএসএসও-র দুটি তেলের ডিপো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেন। আরও কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুলতান মাহমুদ পরে সিলেট, কুলাউড়া, কুমিল্লা, ভৈরব, শমশেরনগর আরও কয়েক স্থানে হেলিকপ্টারের সাহায্যে আক্রমণে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি ও সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম একদিন হেলিকপ্টারে সিলেট শহরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। বিমানবন্দরে অবতরণ করা মাত্র তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েন। হেলিকপ্টারে কয়েকটি গুলি লাগে। সুলতান মাহমুদ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে হেলিকপ্টারটি নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের কবল থেকে বেরিয়ে যান।[4]
পুরস্কার ও সম্মাননা
- বীর উত্তম
- স্বাধীনতা পদক, ২০১৮
তথ্যসূত্র
- দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৭-০৫-২০১২
- "১৬ জন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার | banglatribune.com"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৪।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৯৯। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
- একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৬৫। আইএসবিএন 9789849025375।
সামরিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী এয়ার ভাইস মার্শাল সদরউদ্দিন মুহাম্মাদ হোসেন |
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ২৩ জুলাই ১৯৮১ থেকে ২২ জুলাই ১৯৮৭ |
উত্তরসূরী এয়ার ভাইস মার্শাল মমতাজ উদ্দিন আহমেদ |