ফিরোজা বেগম

ফিরোজা বেগম (২৮ জুলাই ১৯৩০ - ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪) বাংলাদেশের প্রথিতযশা নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি নজরুল সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাকে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকিরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ফিরোজা বেগম
ফিরোজা বেগম
জন্ম২৮ জুলাই, ১৯৩০
গোপালগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪(2014-09-09) (বয়স ৮৪)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পেশাকণ্ঠশিল্পী
পরিচিতির কারণনজরুল সঙ্গীতশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীকমল দাশগুপ্ত
সন্তানতাহসিন, হামীনশাফীন
পুরস্কারশেলটেক পদক, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার

জন্ম ও পারিবারিক জীবন

ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে। তার বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মায়ের নাম বেগম কওকাবুন্নেসা। শৈশবেই তার সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ১৯৫৪ সাল থেকে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।[1] ১৯৬৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। কমল দাশগুপ্ত ২০ জুলাই, ১৯৭৪ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। এ দম্পতির তিন সন্তান - তাহসিন, হামীনশাফীন রয়েছে। হামিন ও শাফিন - উভয়েই রকব্যান্ড দল মাইলসের সদস্য।

সঙ্গীত জীবন

১৯৪০-এর দশকে তিনি সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এ রেকর্ডের গান ছিল- 'ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ' আর 'প্রীত শিখানে আয়া'। দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুলসঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তার ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।[2]

১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গ-সংস্কৃতি-সম্মেলন-মঞ্চে কমল দাশগুপ্তের ছাত্রীসহধর্মিণী হিসেবে তিনি ছিলেন মুখ্যশিল্পী। উভয়ের দ্বৈতসঙ্গীত সকল শ্রোতা-দর্শককে ব্যাপকভাবে বিমোহিত করেছিল।[3]

পুরস্কার ও সম্মননা

শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[4][5][6] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[7] এছাড়াও তিনি

  • একুশে পদক

• নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার • সত্যজিৎ রায় পুরস্কার • নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক • বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক • সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার) • নজরুল আকাদেমি পদক • চুরুলিয়া স্বর্ণপদক • বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট

তিনি জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। ১২ এপ্রিল ২০১২ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে "বঙ্গ সম্মান" পুরস্কার গ্রহণ করেন।

২৮ জুলাই ২০১৮ সালে তার ৮৮ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মননা প্রদান করে।[8]

দেহাবসান

কিডনি জটিলতায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, মুদ্রিত সংস্করণ, আনন্দ, তুমি এসেছিলে জীবনে আমার, ১০ মে, ২০১২, পৃষ্ঠা-১
  2. "ফিরোজা বেগম: জীবনকথা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৮
  3. সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সম্পাদকঃ অঞ্জলি বসু, ৪র্থ সংস্করণ, ১ম খণ্ড, ২০০২, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ৭৭
  4. সানজিদা খান (জানুয়ারি ২০০৩)। "জাতীয় পুরস্কার: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার"। সিরাজুল ইসলাম[[বাংলাপিডিয়া]]ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  5. "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭
  6. "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭
  7. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭
  8. "Feroza Begum's 88th Birthday"www.google.com। গুগল।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.