মোহাম্মদ আকরম খাঁ

মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ (৭ জুন ১৮৬৮ - ১৮ আগস্ট ১৯৬৮) ছিলেন একজন বাঙালি সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামী পণ্ডিত। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।[1]

মওলানা

মোহাম্মদ আকরম খাঁ
জন্মজুন ৭, ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দ
মৃত্যুআগস্ট ১৮,১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ
যেখানের শিক্ষার্থীকলকাতা আলিয়া মাদরাসা
পেশাসাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ইসলামী পণ্ডিত, লেখক
পরিচিতির কারণবাংলা ভাষার সর্বপ্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, মোস্তফা-চরিত গ্রন্থের রচয়িতা

প্রাথমিক জীবন

আকরম খাঁ ১৮৬৮ সালে ৭জুন পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ গাজী মাওলানা আব্দুল বারি খাঁ ও মাতা বেগম রাবেয়া খাতুন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব কম ছিল। খুব অল্প বয়সেই তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন।

শিক্ষা জীবন

শৈশবে গ্রামের মক্তবে শিক্ষারম্ভ করেন। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আশৈশব অনুরাগবশত ইংরেজি স্কুল ছেড়ে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

রাজনৈতিক জীবন

খেলাফত আন্দোলনের সময়

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ করেন। মওলানা আকরম খাঁ ছিলেন ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৮১৯ থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি খেলাফত এবং অসহযোগ আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯২০ সালে ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি নিখিল ভারত খেলাফত আন্দোলন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে খেলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং মওলানা মজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। আকরাম খাঁর দায়িত্ব ছিল তুর্কি খেলাফত থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা। ১৯২০-১৯২৩ সময়ের মধ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে জনসভা বা সম্মেলনের আয়োজন করে খেলাফত আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলন গতিশীল করার চেষ্টা করেন। হিন্দু মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে ১৯২২ সালে আকরম খাঁ চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টির পক্ষ নেন এবং ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট সন্ধির সময়ও তিনি একই পক্ষে ছিলেন। ১৯২৬-১৯২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং অন্যান্য সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলির কারণে আকরম খাঁ ভারতীয় রাজনীতিতে তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন এবং তিনি স্বায়ত্তশাসন পার্টি এবং কংগ্রেস থেকে সরে দাঁড়ান। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি পর্জা বা গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৬ সালে তিনি গ্রাম্য রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে সক্রিয়ভাবে মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময়ে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৪ সালে গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হলে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান।

আকরাম খান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন।[2] তিনি ১৯৬২ সালে গঠিত পাকিস্তান কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডোলজির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন।[3]

সাংবাদিকতা

১৯১০ সালে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীদৈনিক খাদেম প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯২১ সালে উর্দু জামানা ও বাংলা দৈনিক সেবক প্রকাশ করেন। ১৯২৭ সালে পুনরায় মাসিক মোহাম্মদী প্রকাশ করেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এ পত্রিকা। বর্তমানে পত্রিকার বেশ কিছু সংখ্যা বাংলা একাডেমি, বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। মুসলিম সমাজকে জাগাবার জন্য ১৯৩৬ সালে তার সম্পাদনায় দৈনিক আজাদ প্রকাশ করেন।[4]

আজাদ পত্রিকা

১৯৩৬ সালের অক্টোবর মাসে মওলানা আকরম দৈনিক আজাদ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। সেই সময় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। মুসলিম লীগের সমর্থন যোগাতে এই বাংলা পত্রিকাটি সেই সময় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে পত্রিকার বহু পুরনো সংখ্যা সংরক্ষিত আছে।

সাহিত্য কর্ম

  • সমস্যা ও সমাধান [এই গ্রন্থে লেখকের ইসলামে নারীর মর্যাদা, সুদ সমস্যা, চিত্র (ছবি তোলা) সমস্যা, সঙ্গীত সমস্যা এই চারটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়]
  • আমপারার বাংলা অনুবাদ
  • মোস্তফা-চরিত (বর্তমানে খোশরোজ কিতাব মহল হতে প্রকাশিত)
  • মোস্তফা-চরিতের বৈশিষ্ট্য
  • বাইবেলের নির্দেশ ও প্রচলিত খ্রীষ্টান ধর্ম
  • মোছলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস (ঐতিহ্য হতে প্রকাশিত)
  • তাফসীরুল কোরআন(১-৫ খণ্ড) (খোশরোজ কিতাব মহল হতে প্রকাশিত)
  • মুক্তি ও ইসলাম[5]

মৃত্যু

মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৮ আগস্ট ১৯৬৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[6] ঢাকার বংশালে আহলে হাদীস মসজিদে প্রার্থনারত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

সম্মাননা ও পদক

  • স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, ১৯৮১; বাংলদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার

তথ্যসূত্র

  1. "খাঁ, মোহাম্মদ আকরম"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩
  2. Nation, The New। "Maulana Akram Khan: Pioneer of Bengali Muslim journalism"The New Nation (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩
  3. Newspaper, From the (২০১২-০৭-৩১)। "Advisory body of Islamic ideology set up"DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩
  4. "STORY OF THE BANGLA PRESS"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০২-২০। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩
  5. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩০৯।
  6. "Death anniversary of Maulana Akram Khan Friday"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.