কাজী জাকির হাসান

কাজী জাকির হাসান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান। [1]

কাজী জাকির হাসান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

কাজী জাকির হোসেনের জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা গ্রামে। দশ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার পুরো নাম কাজী জাকির হাসান চন্দন। তার বাবা কাজী মকবুল হোসেন ছিলেন আর্টিস্ট। তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও কোলকাতার স্টাফ আর্টিস্ট ছিলেন। তার মায়ের নাম জুলেখা বেগম। জাকির হোসেনের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি খাটামারি প্রাইমারি স্কুলে। তিনি এসএসসি পাশ করেন কুড়িগ্রাম রিভারভিউ হাই স্কুল থেকে। পরে চলে যান বাবার কাছে, ঢাকার বাসাবোতে। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন আবুজর গিফারি কলেজে। ১৯৭১ তিনি ছিলেন ওই কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। [2]

কর্মজীবন

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

জাকির হাসান যুদ্ধ করেন ৬ নং সেক্টরের লালমনিরহাট সাব সেক্টরে। ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাদের ক্যাম্প ছিল ভারতের গিতালদহ পুরনো রেল স্টেশনে। সীমান্ত পার হয়ে তারা অপারেশন করেন লালমনিরহাটের মোগলহাট, কাকিনা, গোরপমণ্ডল, আদিতমারী, স্বর্ণামতি ব্রিজ, রতনাই ব্রিজ, বড় বাড়ি প্রভৃতি এলাকায়। সেক্টর কমান্ডার এম কে বাসারের অধীনে তাদের কমান্ড করতেন ভারতীয় ক্যাপ্টেন উইলিয়াম। ১৯৭১ সালের ১ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা বশির ও শামসুল কিবরিয়াকে নিয়ে আগে রেকি করতে বেরিয়ে পড়েন। আলাদাভাবে ক্যাপ্টেন উইলিয়ামও বিএসএফের কয়েক সদস্য নিয়েও রেকি করেন। রেকি সঠিক হওয়ার পর অপারেশনের জন্যে সঙ্গে দিলেন ১৭-১৮জনকে। এ দলের কমান্ডে ছিলেন কাজী জাকির হোসেন। ক্যাম্প থেকে দড়িবাস নামক একটি জায়গা পেরিয়ে শাখা নদী জারি ধরলা পার হয়ে যেতে হয় গোরপমণ্ডল এলাকায়। জারি ধরলার কাচারটা ছিল বেশ উঁচুতে। সেখানে ছিল বিরাট এক পাকুর গাছ। রেকির সময় মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন ৮ থেকে ১০ জন পাকিস্তানি সেনা ওই গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছে। আমাদের পরনে ছিল সাধারণ পোশাক। কিন্তু সে সময়ে পাকিস্তানি সেনারাও যে মুক্তিযোদ্ধাদের সে রেকি কার্যক্রম দেখেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা সেটি বুঝতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ২ জুলাই ভেলায় করে নদী পার হয়ে এগুতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা। রাত তখন ৩টা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা পজিশন নিয়ে তৈরি ছিলেন। ভোরে দূর থেকে দেখা গেল পাকিস্তানি সেনাদের টুপি আর রাইফেল। পাকিস্তানি সেনারা এই দিক দিয়েই গ্রামের দিকে ঢুকবে, তাই মুক্তিযোদ্ধারা অ্যামবুশ করে বসে ছিলেন। কিন্তু আসলে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই ছিলাম ওদের অ্যামবুশের ভেতরে। মুক্তিযোদ্ধাদের আসার সমস্ত পথে মাইন পুঁতে রেখেছিল ওরা। ওরা রেঞ্জের মধ্যে আসতেই ‘চার্জ’ বলে একটি গ্রেনেড চার্জ করেন জাকির হোসেন। অন্যরাও তিন দিক থেকে চার্জ করলেন। ওদের দশজনই মারা গেলেন। খুশিতে বিজয় মনে করে যেই বের হলেন এমনি মাইন বিস্ফোরন হলো। ছিটকে পড়ে গেলেন জাকির হোসেন। ডান পা থেকে রক্ত বের হয়ে ভেসে যাচ্ছিল। হাঁঁটুর নিচ থেকে পা উড়ে যায় তার। মুক্তিযোদ্ধা আনিসুল, আকরাম, নীলফামারীর শহিদুলসহ সহযোদ্ধারা গামছা দিয়ে আমার পাটা বেঁধে দেয়। ভেলায় করে প্রথম নিয়ে আসে ক্যাম্পে। পরে চিকিৎসার জন্য আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কুচবিহার জি এন হাসপাতালে। ওখানেই ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। অতঃপর ব্যারাকপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতাল হয়ে কিরকি মেডিকেল হাসপাতাল থেকে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পা ছাড়াও আমার সারা শরীরে ছিল বারুদের ক্ষত। স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধা জাকির হাসান স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ বেতারে১৯৭২ সালে বেতারে তার প্রথম নাটক ‘খেয়াঘাটের মাঝি’ প্রচারিত হয়। ঢাকা বেতার নাট্যচর্চার ইতিকথা, বেতার নাটকের নিজস্ব আর্টিস্টদের জীবনী, সারাদেশের বেতার নাট্যশিল্পীদের জীবনী প্রভৃতিসহ তার ১৫টির মধ্যে ৫টি গবেষণা গ্রন্থ রয়েছে। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ বেতারের মূখ্য পাণ্ডুলিপিকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • স্বাধীনতা পদক, ২০১৮
  • বীরপ্রসূ আজীবন সম্মাননা, ২০১১

তথ্যসূত্র

  1. "১৬ জন পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার | banglatribune.com"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৪
  2. "যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৩৫ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকেই রাজাকার হতে দেখেছি | মতামত"মতামত-বিশ্লেষণ (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৮-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৮
  3. "আহত হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন প্রয়াত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কাজী জাকির হাসান চন্দন - Salek Khokon"Salek Khokon (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০২-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৮

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.