আবদুল আহাদ (সঙ্গীত পরিচালক)

আবদুল আহাদ একাধারে ছিলেন সুরকার, প্রশিক্ষক, পরিচালক, সংগঠকগায়ক

আবদুল আহাদ
পেশাসুরকার, প্রশিক্ষক, পরিচালক, সংগঠক ও গায়ক
কার্যকাল১৯৩৬ –

জন্ম ও শৈশব

আবদুল আহাদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯১৮ সালে, রাজশাহীতে। তাঁর বাবা আবদুস সামাদ, মা হাসিনা খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ। তাঁর আদি পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরে। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাবনায় নানার বাড়িতে।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

১৯৩৬ সালে কলকাতায় অল বেঙ্গল মিউজিক প্রতিযোগিতায় ঠুংরি ও গজলে প্রথম স্থান অধিকার করে আবদুল আহাদ তৎকালীন সঙ্গীতজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৩৮ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে যান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশায় শান্তিনিকেতনে তিনি শিক্ষা নিয়েছিলেন। শান্তিদেব ঘোষ ও শৈলজারঞ্জন মজুমদার ছিলেন তাঁর শিক্ষক।

শান্তিনিকেতনের শিক্ষাজীবনে আবদুল আহাদ সাহিত্যসভা, গানের অনুষ্ঠান ও প্রার্থনাঘরে গান পরিবেশন করতেন। বৈতালিক ও মন্দিরেসঙ্গীত পরিবেশনের দায়িত্বও বেশির ভাগ সময় তাঁর ওপরই বর্তাত। তখন শ্যামা, চণ্ডালিকা ও তাসের দেশ নাটকের মহড়া হতো উত্তরায়ণে। স্বয়ং কবিগুরু উপস্থিত থাকতেন এসবের মহড়ায়। এই সময় কবিগুরুর পরম সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য হয় আবদুল আহাদের।

১৯৪১ সালের ২২ শ্রাবণ কবিগুরুর প্রয়াণ-সংবাদ শান্তিনিকেতনে পৌঁছার পর শৈলজারঞ্জন মজুমদার তাঁকে ডেকে নিয়ে সমবেত কণ্ঠে গাওয়ার জন্য একটি গানের স্বরলিপি দেন। বিখ্যাত সেই গানটি ছিল ‘সম্মুখে শান্তি পারাবার’। শান্তিনিকেতনের প্রার্থনাঘরে সেদিন সন্ধ্যায় সবাই মিলে তাঁরা গানটি গেয়েছিলেন।

শান্তিনিকেতনের শিক্ষাজীবন শেষে তিনি বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) চলে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আবার কলকাতায় ফিরে আসেন। এবার তিনি গ্রামোফোন কোম্পানি হিজ মাস্টার্স ভয়েস-এ রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তাঁর নিবিড় তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেন তখনকার প্রখ্যাত সব শিল্পী। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সুধা মুখোপাধ্যায়, সন্তোষ সেনগুপ্ত, সুচিত্রা মিত্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক, শান্তিদেব ঘোষ, সত্য চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

আবদুল আহাদের নিজের সুরারোপিত প্রথম আধুনিক গানের রেকর্ড এইচ এম ডি থেকে বের করেন সন্তোষ সেনগুপ্ত। গান দুটি ছিল, ‘তুমি আমি দুই তীর সুগভীর তটিনীর’ ও ‘সে পথ ধরি আস নাই আস নাই তুমি’।

১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি আবদুল আহাদ ঢাকায় চলে আসেন। এরপর শুরু হয় তাঁর সঙ্গীতিক জীবনের নতুন অধ্যায়। ঢাকায় এসে তিনি যোগ দেন পাকিস্তান রেডিওর ঢাকা কেন্দ্রে। ঢাকা বেতার কেন্দ্রের তখন শোচনীয় অবস্থা। তাঁকে নিয়ে প্রযোজকের সংখ্যা তখন মাত্র তিনজন। ফলে এখান থেকে সঙ্গীত সম্প্রচারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। পাকিস্তান হলেও ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ানোর ব্যাপারে তাঁর ছিল উদ্যোগী ভূমিকা। আবদুল আহাদ জীবনের প্রায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতারে প্রযোজক-সুরকার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বয়সসীমা শেষ হওয়ার পরও সাতবার তাঁর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। [1]

সঙ্গীতে অবদান

১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর সঙ্গীতশিল্পীদের একটি বড় অংশ এ দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ফলে তখনকার পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) রাজধানী ঢাকা ও তার বেতার কেন্দ্র প্রায় সঙ্গীতশিল্পীশূন্য হয়ে পড়েছিল। তাই জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন হয়ে পড়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্রকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর। এই গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আবদুল আহাদ। সেই সময় পূর্ববাংলার পরিবেশ সংস্কৃতি, বিশেষত,সঙ্গীতের বিকাশের জন্য মোটেও অণুকূল ছিল না। এর মধ্যেই ঢাকাকে ঘিরে আবদুল আহাদ এক বিস্ময়কর যুগের প্রবর্তনে সক্ষম হয়েছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মননা

সঙ্গীতে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[2][3][4] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[5]

মৃত্যু

১৯৯৪ সালের ১৪ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

তথ্যসূত্র

  1. http://archive.prothom-alo.com/detail/news/63399 , স্মরণঃ সঙ্গীতই ছিল যাঁর একমাত্র আরাধ্য, রাশেদুর রহমান | তারিখ: ১৫-০৫-২০১০
  2. সানজিদা খান (জানুয়ারি ২০০৩)। "জাতীয় পুরস্কার: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার"। সিরাজুল ইসলাম[[বাংলাপিডিয়া]]ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশআইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ০৯ অক্টোবর ২০১৭স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); ইউআরএল–উইকিসংযোগ দ্বন্দ্ব (সাহায্য)
  3. "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭
  4. "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭
  5. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৯ অক্টোবর ২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.