রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত একজন প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী । তিনি তার ঘরানার সংগীতের একজন বহুমুখী প্রতিভা হিসাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে সমাদৃত । তিনি তার গুনানুরাগীদের কাছে শুধু মাত্র ‘বন্যা’ নামেও পরিচিত। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিষ্যদের মধ্যে তাকেই সবচেয়ে জনপ্রিয় গণ্য করা হয়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার "স্বাধীনতা পুরস্কার" অর্জন করেছেন।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
রেজওয়ানা চৌধুরী
জন্ম
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

জানুয়ারি ১৩
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
পেশাশিক্ষক
পরিচিতির কারণরবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীত শিক্ষক
দাম্পত্য সঙ্গীজি এইচ চৌধুরী
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৬,
বঙ্গভূষণ পদক ২০১৭

জন্ম

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা'র জন্ম বাংলাদেশের রংপুরে। তার বাবা মাজহার উদ্দিন খান ও মাতা ইসমাত আরা খান। ইসমাত আরা খান এক সময় কাকলী উচ্চ বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ছিলেন।[1]

শিক্ষা গ্রহণ

তিনি প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের ছায়ানট ও পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।তিনি সেখানে শিক্ষক হিসেবে পান শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, এবং আশীষ বন্দ্যোপাধায়ের মতো শিক্ষকদের। তিনি বাংলাদেশে ফিরে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি তার অধ্যয়ন সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হন। তিনি রবীন্দ্র সংগীত ছাড়াও ধ্রুপদী, টপ্পাকীর্তন গানের ওপরও শিক্ষা লাভ করেছেন। তার গানের অ্যালবাম পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সুরের ধারা নামের একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আনন্দ সংগীত পুরস্কার লাভ করেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা হারমোনিয়ামএস্রাজ বাজাতে পারেন।

কর্মজীবন

কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী স্মরণে বন্যা

কর্মজীবনে তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক[2] ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন[3] হিসেবে কর্মরত। ১৯৯২ সালে সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “সুরের ধারা” চালু করেন তিনি।[3]
লেখালেখির সাথেও বন্যার যোগসূত্র আছে। রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে তার কয়েকটি বই আছে। যেমন:

  • রবীন্দ্রনাথ: গানের নানা দিক (প্রকাশক: মূর্ধন্য; প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০১১)
  • গানের ভেলায় বেলা অবেলায় : নির্বাচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত স্বরলিপি (সম্পাদিত সংকলন; প্রকাশক: অবসর প্রকাশনা সংস্থা)
  • ছোটদের নির্বাচিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্বরলিপি (সম্পাদিত সংকলন; প্রকাশক: অবসর প্রকাশনা সংস্থা)

সংগীতজীবন

শিক্ষাগ্রহণ সম্পন্ন হবার পর থেকেই তিনি তার সংগীতের প্রদর্শন, নির্ভুল উচ্চারণ এবং সবচেয়ে কঠিন ও অপ্রচলিত গানগুলোও গাইবার আগ্রহের কারণে বিশ্বভারতী ধারার একজন গুরু হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছেন । তিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে, তার বহুসংখ্যক এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।

প্রকাশিত অ্যালবাম

  • স্বপ্নের আবেশে (২০১৪)
  • সকাল সাঝে
  • ভোরের আকাশে (২০১২)
  • লাগুক হাওয়া (২০১২)
  • আপন পানে চাহি
  • প্রাণ খোলা গান (২০১১)
  • এলাম নতুন দেশে
  • সুদূরের মিতা
  • মাটির ডাক
  • কালের সাথী
  • গেঁথেছিনু অঞ্জলি
  • মনের মাঝে যে গান বাজে
  • মোর দরদিয়া
  • সুরের আসনখানি
  • সুরের খেয়া
  • পাতার ভলা ভাষাই
  • শ্রাবণ তুমি
  • ছিন্নপত্র (২০০৪)
  • কবি প্রণাম (২০০৪)
  • বাজে রম্যবীণা

স্বীকৃতি, পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলাদেশের বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। কুড়িয়ে যাচ্ছেন শ্রোতা-দর্শকের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। দেশে-বিদেশে অসংখ্য খ্যাত বিদগ্ধজনের প্রশংসা পেয়েছে তার সংগীত পরিবেশনা। বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।[4]

স্বাধীনতা পুরস্কার:

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে প্রদত্ত বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার "স্বাধীনতা পুরস্কার" অর্জন করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০১৬ সালের “স্বাধীনতা পুরস্কার” সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।[5]

‘বঙ্গভূষণ’ পদক:

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বঙ্গভূষণ’ পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে। ২০ মে ২০১৭ সন্ধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চে এই রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পীর হাতে ২০১৭ সালের ‘বঙ্গভূষণ’ পুরস্কার তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।[6]

ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক:

বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ট্রাস্ট ফান্ড’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ও পুরস্কার ২০১৭’ পেয়েছেন এই প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। বরেণ্য শিল্পী।[7][8]

অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননা:

  • ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি মন্ত্রক প্রদত্ত ‘সংগীত সম্মান পুরস্কার’ পেয়েছেন বন্যা ২০১৩ সালে।[9]
  • ২০০২ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ নারী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসাবে আনন্দ সংগীত পুরস্কারে ভূষিত হন, যা পরের বছরও লাভ করেন।[2]
  • ২০১১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে সিটি ব্যাংক এনএ প্রদত্ত গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা[10]

ব্যক্তিগত জীবন

ব্যক্তিগত জীবনে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা দুসন্তানের জননী। তার স্বামী জি এইচ চৌধুরী। বন্যার মেয়ে প্রিয়দর্শিনী, ছেলে অর্ক দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে লেখাপড়া শেষ করে সেখানেই চাকরি করছেন। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।[11]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার মায়ের মৃত্যু"। ৩১ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭
  2. "Rezwana Choudhury Bannya-Awards"। উইকিপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭
  3. "ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক পাচ্ছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭
  4. ফরিদুর রেজা সাগর (১৭ জুন ২০১৭)। "বন্যার জন্য অপেক্ষা"। দৈনিক কালের কন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭
  5. "'বঙ্গভূষণ' পুরস্কারে ভূষিত রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা"। দৈনিক যুগান্তর অনলাইন। ২১ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭
  6. "রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা পেলেন ফিরোজা বেগম স্বর্ণপদক"। দৈনিক যুগান্তর অনলাইন। ২৮ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭
  7. হাবিবা নাজনীন মিথিলা (২৭ জুলাই ২০১৭)। "'ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০১৭' পেলেন বন্যা"। চ্যানেলআই অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭
  8. "বন্যাকে 'সংগীত সম্মান পুরস্কার'"। প্রথম আলো অনলাইন। ২ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭
  9. "Rezwana Choudhury Bannya awarded" (ইংরেজী ভাষায়)। ঢাকা নিউজ। OCTOBER 1, 2011। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  10. "Banya Famaly Info"

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.