আবু তালেব

আবু তালেব (জন্ম: ১৯৪৮ - মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। তার গেজেট নম্বর ৫৩। [1]

আবু তালেব
জন্ম১৯৪৮
কুমারখালী উপজেলা, কুষ্টিয়া
মৃত্যু১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর উত্তম
অফিসবর্ডার গার্ড বাংলাদেশ

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

শহীদ আবু তালেবের জন্ম কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কালুয়া গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম কছিম উদ্দিন শেখ এবং মায়ের নাম রাশেদান বেগম।

কর্মজীবন

শহীদ আবু তালেব চাকরি করতেইপিআরে১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন সাতক্ষীরায়মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের হাকিমপুর সাবসেক্টরে। খুলনার বৈকালী, সাতক্ষীরার ভোমরাসহ আরও কয়েকটি যুদ্ধে তিনি বীরত্ব প্রদর্শন করেন।[2]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা ক্রমশ বাড়ছে। ভারত থেকে তারা বাংলাদেশে এসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করতে থাকেন। তাদের তৎপরতা বাড়তে থাকলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সীমান্তসংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। এ ক্যাম্পগুলো ছিল সীমান্ত চৌকির অতিরিক্ত। পাকিস্তানিদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেওয়া। মুক্তিযোদ্ধারা ভারত থেকে এসে সাতক্ষীরায় বেশ কয়েকটি অপারেশন করার পর পাকিস্তানি সেনারা সাতক্ষীরাতেও বিভিন্ন স্থানে এ রকম ক্যাম্প স্থাপন করে। একটি ক্যাম্প ছিল লক্ষ্মীপুরে। পাকিস্তানি সেনারা ওই অস্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থান করে সীমান্ত এলাকায় টহল দলের মাধ্যমে পাহারা দিত। ফলে ভারত থেকে ওই এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশের প্রবেশ করা আবার সীমিত হয়ে পড়ে। লক্ষ্মীপুর ছিল মুক্তিবাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের আওতাধীন এলাকা। এ জন্য ৮ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টারে সিদ্ধান্ত হলো সেখানে আকস্মিক আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাদের তাড়িয়ে দেওয়ার। শুরু হলো প্রস্তুতি। একটি শক্তিশালী দল গঠিত হলো।

সেই দলে অন্তর্ভুক্ত হলেন আবু তালেব। আকস্মিক আক্রমণ চালানোর আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লক্ষ্মীপুর ক্যাম্প সম্পর্কে রেকি করা হলো। ক্যাম্পটির প্রতিরক্ষা যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে কিছুটা দুর্বলতাও আছে। মুক্তিযোদ্ধারা রেকি করে জানতে পারলেন, ক্যাম্পের সামনের দিক অর্থাৎ ভারতমুখী দিক বেশ মজবুত প্রতিরক্ষার আওতায়। পেছন দিকের প্রতিরক্ষা যথেষ্ট কম। সিদ্ধান্ত হলো আক্রমণস্থলের অদূরে পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হবেন। একদল সামনে থেকে, একদল পেছন থেকে আক্রমণ করবে। বাকিরা কাট অফ পার্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সামনে থেকে আক্রমণের দলে থাকলেন আবু তালেব। তারা আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যতিব্যস্ত রাখবেন। সেই সুযোগে অপর দল পেছন থেকে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প তছনছ করে দেবে।

পরিকল্পনা অণুযায়ী আবু তালেব ও তার সহযোদ্ধারা পাকিস্তানি ক্যাম্পে সামনে থেকে আক্রমণ চালান। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারাও সজাগ ছিল। তারাও পাল্টা আক্রমণ করে। নিমেষে শুরু হয়ে যায় তুমুল যুদ্ধ। গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। আবু তালেব সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। যুদ্ধ সাত-আট মিনিট গড়িয়েছে। এমন সময় একঝাঁক গুলি ছুটে আসে তার দিকে। এক সঙ্গে কয়েকটি গুলি লাগে তার শরীরে। এতেও তিনি দমে যাননি। গুলিবিদ্ধ হয়েও কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে ঢলে পড়েন মাটিতে। নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। [3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২০-০৫-২০১২
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ। ঢাকা: জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৮৫। আইএসবিএন 9789843351449।
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩৭। আইএসবিএন 9789849025375।

বহি:সংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.