গল্লামারী বধ্যভূমি

গল্লামারী বধ্যভূমি খুলনা জেলার অন্তর্গত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর পাশেই অবস্থিত ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে খুলনা অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রেডিও স্টেশন (গল্লামারী রেডিও সেন্টার) ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে গল্লামারী নদীতে ফেলে দেয়া হতো[1]। শহরের দু'কিলোমিটার অভ্যন্তরে গল্লামারী খালের পাশে এই বধ্যভূমির অবস্থান।

বর্ণনা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থানেই ছিল রেডিও পাকিস্তানের খুলনা শাখা[2]। এই বধ্যভূমিকে ঘিরে গড়ে উঠে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। গণহত্যা ও নির্যাতন কেন্দ্র বেতার ভবন হয়ে উঠে বিশবিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন। এখানে অনেক মুক্তিকামী মানুষ ও সাধারণ জনগণকে হত্যা নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। মূলত রাজাকারশান্তি কমিটির সহযোগিতায় এসব হত্যাকাণ্ড হত। এখানে জবাই করে বেশিরভাগ মানুষ মারা হত[3]। প্রথম দিকে শুধুমাত্র রাতের বেলাতে নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা হলেও শেষের দিকে তারা দিনে রাতে সমানে নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। সারাদিন শহর ও গ্রাম হতে লোকদের ধরে এনে জেলখানা, হ্যালিপোর্ট ও ইউএফডি ক্লাবে জড়ো করা হত, রাত হলে তাদের হাত বেঁধে বেতার কেন্দ্রের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হত। । প্রতি রাতে প্রায় শতাধিক মানুষ হত্যা করা হত[3]। এর সাথে আরো ছিল নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর অনেক মুক্তিযোদ্ধা খুলনায় ফিরে আসেন। সে রকমই একজন প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুস সাত্তার শিকদারের ভাষ্যমতে,

চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ। খাবার নাই, পানি নাই, ঘর নাই, বাড়ি নাই। মানুষ আর মানুষ। কারো বুক কাটা, কারো গলা কাটা। কোন কোন লাশের পঁচা গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে[2]

খুলনা শহর মুক্ত হবার পর গল্লামারী খাল ও এর আশেপাশের স্থান থেকে প্রায় পাঁচ ট্রাক ভর্তি মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় পাওয়া যায়[3]। ধারণা করা হয়, ঐ স্থানে আনুমানিক ১৫,০০০ মানুষ হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর রেডিও সেন্টার (বর্তমান বাংলাদেশ বেতার, খুলনা কেন্দ্র) নগরীর নূরনগর এলাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে[4]

সেখানে ১৯৯৫ সালে প্রথম একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। বর্তমানে সে স্মৃতিস্তম্ভ উন্নয়নের কাজ চলছে।

তথ্যসূত্র

  1. ডেস্টিনি নিউজ
  2. সাপ্তাহিক ২০০০, বিজয় দিবস সংখ্যা, ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৮, পৃ ২৩-২৬
  3. মুনতাসীর মামুন। কিশোর মুক্তিযুদ্ধ কোষ। সময় প্রকাশন। আইএসবিএন 984-458-70114-0070-9 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: length (সাহায্য)
  4. দৈনিক জনকণ্ঠ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.