চন্দ্রকুমার দে
চন্দ্রকুমার দে(১৮৮৯ - ১৯৪৬) একজন লেখক এবং বহুকাল ধরে যেসব লোকগল্প, লোকগীতি পূর্ব বাংলায় বিশেষত বাংলাদেশের ময়মনসিংহ প্রচলিত সেগুলোর সুবিখ্যাত সংগ্রাহক। তাকে বাংলা লোকসাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রাহক হিসেবে গণ্য করা হয়।[1] তিনি যেসব লোকসাহিত্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৈমনসিংহ গীতিকা (১৯২৩) এবং পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (১৯২৩-১৯৩২) নামে প্রকাশিত হয়েছে, পরবর্তীতে ইংরেজি ভাষায় Eastern Bengal Ballads নামে প্রকাশিত হয়েছে।[2][3]
চন্দ্রকুমার দে | |
---|---|
জন্ম | ১৮৮৯ |
মৃত্যু | ১৯৪৬, সূর্যকান্ত হাসপাতাল, ময়মনসিংহ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় পাকিস্তানী |
প্রাথমিক জীবন
চন্দ্রকুমার দে ময়মনসিংহ জেলার আইথর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রাম কুমার দের পূর্বপুরুষদের নিবাস ছিল নেত্রকোনা জেলার রাঘবপুর গ্রামে।[4] অতি অল্পবয়সেই তিনি পিতা-মাতা উভয়কেই হারান এবং সেই সময় থেকেই তাকে উপার্জনের জন্য কাজ করতে হয়েছিল। সংস্কৃত সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান লাভ ছাড়া তিনি কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি।
কর্মজীবন
প্রথমে তিনি একটি মুদি দোকানে মাসপ্রতি এক রুপি বেতনে চাকরি নেন। কাজের প্রতি মনোযোগ না থাকায় তার এক টাকা বেতনের চাকরিটি চলে যায়। পরবর্তীতে তারানাথ তালুকদার মাসপ্রতি ২ রুপী বেতনে তাকে কর আদায় সম্পর্কিত কাজে নিযুক্ত করেন। ১৯১২ সালে তিনি ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত সৌরভ পত্রিকায় লোকসাহিত্যের উপর কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এই পত্রিকার সম্পাদক কেদারনাথ মজুমদার চন্দ্রকুমার দের প্রতিভা আবিষ্কার করেন এবং এই প্রবন্ধগুলোর মাধ্যমে সুধীসমাজের কাছে তার পরিচিতি ঘটে। এছাড়া তিনি চন্দ্রকুমারকে গৌরীপুর এর জমিদারীতে গোমস্তার কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন মাসপ্রতি ৮ রুপী বেতনে। কর আদায়ের জন্য বিভিন্ন গ্রাম ভ্রমণের সুবাদে তিনি কবিগান ও পালাগান শ্রবণের সুযোগ পেয়েছিলেন এবং লিপিবদ্ধ করেছিলেন কিন্তু খাজনা প্রায় কিছুই আদায় করেননি।[5] [6]
১৩২০ বঙ্গাব্দে (১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দ) সৌরভ পত্রিকার ফাল্গুন সংখ্যায় চন্দ্রকুমার দের 'মহিলা কবি চন্দ্রাবতী' নামক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। দীনেশচন্দ্র সেন এই প্রবন্ধটি পরে অভিভূত হন এবং আরও তিনজন লোকসাহিত্য সংগ্রাহকের সাথে চন্দ্রকুমার দে কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালাগানের সংগ্রাহকের পদে নিযুক্ত করেন। তার মাসপ্রতি বেতন ছিল ৭০ রুপী।[7]
সংগ্রহ
তিনি যেসব লোকসাহিত্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৈমনসিংহ গীতিকা (১৯২৩) এবং পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (১৯২৩ - ১৯৩২) নামে প্রকাশিত করেন। মৈমনসিংহ গীতিকায় তার দ্বারা অন্তর্ভুক্ত পালা গুলো হচ্ছেঃ
- মহুয়া (রচয়িতা দ্বিজ কানাই)
- চন্দ্রাবতী (রচয়িতা নয়নচাঁদ ঘোষ)
- 'কমলা (রচয়িতা দ্বিজ ঈশান)
- দেওয়ানা মদিনা (রচয়িতা মনসুর বয়াতী)
- 'দস্যু কেনারামের পালা (রচয়িতা চন্দ্রাবতী)
- কঙ্ক ও লীলা
- মলুয়া
- দেওয়ান ভাবনা
- কাজলরেখা
- রূপবতী
তাঁর সংগৃহীত যে সমস্ত পালা পূর্ববঙ্গ গীতিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর কয়েকটির নাম হলঃ
- ধোপার পাট
- মইষাল বন্ধু
- কমলা রাণীর গান
- দেওয়ান ঈশা খাঁ
- ভেলুয়া
- আয়না বিবি
- গোপিনী কীর্তন
এই পালাগুলোর অধিকাংশই ময়মনসিংহ ও সিলেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
মৃত্যু
চন্দ্রকুমার দে ১৯৪৬ সালে ময়মনসিংহের নওমহলে বসবাসকালীন এস কে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্হিত কেওয়াটখালী শ্মশান ঘাটে (বর্তমানে পৌরসভার অধীন শ্মশা) তাকে দাহ করা হয়। পরিবারের পরিজনরা তার স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে একটি ছাতার আকৃতির স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র
- Gupta, p. 86
- Maimansingha Gitika ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ জুলাই ২০১৩ তারিখে Banglapedia
- K Ayyappa Paniker (১৯৯১)। Medieval Indian Literature: An Anthology (Vol. 1)। Sahitya Akademi। আইএসবিএন 8126003650।
- Folklore
- সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২১২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ১৫৫-৫৬, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬
- Dinesh Chandra Sen, সম্পাদক (১৯৮৮)। The Ballads of Bengal। Mittal Publications। পৃষ্ঠা x।
- Folk-lore, Volume 3, Issue 11। Indian Publications। ১৯৬২।
- Sankar Sen Gupta (১৯৬৭)। A Survey of Folklore Study in Bengal: West Bengal and East Pakistan, Vol. 1। Indian Publications।
- Sankar Sen Gupta (১৯৬৫)। "Chandrakumar De"। Folklorists of Bengal: life-sketches and bibliographical notes (Vol. 1)। Indian Publications। পৃষ্ঠা 165–173।