আবদুল জব্বার (ভাষা শহীদ)
আবদুল জব্বার (১০ অক্টোবর ১৯১৯ - ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ভাষা আন্দোলনকর্মী যিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট বাংলা ভাষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালে নিহত হন। বাংলাদেশে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হয়।[1]
আবদুল জব্বার | |
---|---|
জন্ম | আবদুল জব্বার ১০ অক্টোবর ১৯১৯ পাঁচুয়া, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ, বৃটিশ ভারত |
মৃত্যু | ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা, পাকিস্তান |
পেশা | সংগঠক, চাকুরী |
পরিচিতির কারণ | ভাষা শহীদ |
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
জব্বার জন্ম ১৩২৬ বাঙ্গাব্দের ২৬ আশ্বিন ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[1] তার পিতার নাম হাসান আলী এবং মাতার নাম সাফাতুন নেছা। তার অন্য ভাইদের নাম হচ্ছে - আবদুল কাদের ও এ,এইচ,এম আসাদ (নয়ন)। তিনি স্থানীয় ধোপাঘাট কৃষ্টবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যয়নের পরে দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া ত্যাগ করে পিতাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেন। পনের বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন।[1]
কর্মজীবন
জব্বার গৃহত্যাগ করে নারায়ণগঞ্জে এসে সেখানে জাহাজ ঘাটে এক ইংরেজ ব্যবসায়ীর সান্নিধ্যে আসেন। ব্যবসায়ী তাকে একটি চাকুরি দিয়ে বার্মায় (বর্তমান মায়ানমার) পাঠান। সেখানে দশ-বারো বছর অবস্থান করেন। পরবর্তীতে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডে (পিএনজি) যোগদান করেন। পিএনজি ভেঙ্গে দেওয়া হলে পরবর্তীকালে তিনি আনসার বাহিনীতে যোগদান করেন। ময়মনসিংহ থেকে প্রশিক্ষণ শেষে নিজ গ্রামে ‘আনসার কমান্ডার’ হিসেবে কাজ করেন।[1]
ভাষা আন্দোলন

আবদুল জব্বারের পুত্র জন্ম হওয়ার কিছুকাল পরে তার শাশুড়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। শাশুড়িকে নিয়ে ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় আসেন।[1] হাসপাতালে তার শাশুড়িকে ভর্তি করে আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের আবাসস্থল (ছাত্র ব্যারাক) গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) উঠেন।[2] ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আসলে জব্বার তাতে যোগদান করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ গুলি বর্ষণ করে এবং জব্বার গুলিবিদ্ধ হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের মধ্যে ছিলেন ২০/৯ নম্বর কক্ষের সিরাজুল হক।[3] তাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত দেওয়া হয়।
সম্মাননা
মহান ভাষা আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় আবদুল জব্বারকে বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন।[4]
আরো দেখুন
- ভাষা আন্দোলন
- একুশে পদক
- আবদুস সালাম (ভাষা শহীদ)
- আবুল বরকত
- রফিকউদ্দিন আহমদ
- শফিউর রহমান
তথ্যসূত্র
- "ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের কথা"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- "'জব্বারদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা'"। একুশেটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস - আহমদ রফিক; পৃষ্ঠা: ৩৯-৪০
- "জববার, আবদুল"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।